১৯৭৬ সালের ১৬ই মে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চাপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ফারাক্কা অভিমুখে একটি মিছিলের আয়োজন করেন। যা ফারাক্কা লং মার্চ হিসেবে পরিচিত। এই মিছিল করার আগে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি প্রেরণ করেন লং মার্চের কারণ ব্যাখ্যা করে। মাওলানা ভাসানী কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীকে এই প্রথম লিখেননি, আগেও লিখেছেন। এই প্রসঙ্গটা এই পর্বের একদম শেষে আসবে। [১]
অভিন্ন নদীর পানি সমস্যা
যাইহোক ফারাক্কা ও আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে এই অঞ্চলে ভারতের মুলোর চাষ কিন্তু কম হয় নাই। যে ব্যাপারটা তারা উহ্য রাখে তা হলো ফারাক্কা বাধের কাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে এবং শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। তাই ব্যাপারে শুধু আওয়ামী লীগ কেনো, এদেশের কোন সরকার বা দলেরই কিছু করার ছিলো না। বাংলাদেশের সরকারের কর্তব্য ছিলো গঙ্গা নদী দিয়ে প্রবাহিত পানি ফারাক্কায় যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং বাংলাদেশ যেন পানির ন্যায্য ভাগ পায় তা নিশ্চিতে আলোচনা চালানো ও ভারতের সাথে চুক্তি করা।
এখন একটা সময়ের হিসাব মেলানো যাক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালে। ফারাক্কা বাধ চালুও হয় ১৯৭৫ সালে তারপর দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলো না। মাঝের সময়টা এদেশ যারা শাসন করেছে তাদের এই ফারাক্কার পানি বন্টন নিয়ে অর্জন হচ্ছে শূণ্য। ১৯৭৭ সালে মাত্র পাঁচ বছরের জন্য একটি চুক্তি হয়ে থাকলেও তা ছিলো নামকওয়াস্তে । দীর্ঘ ২১ বছর পর এদেশের ভার নেবার মাত্র ছয় মাসের ভেতর আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সাথে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি করে ফেলে। মজার ব্যাপার হলো যারা কিনা ফারাক্কা বাধের সাথে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় তারাই এই মাঝের ২১ বছর ক্ষমতায় বা ক্ষমতার খুব কাছাকাছি ছিলো। এই চুক্তি বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্যই ছিলো উইন উইন সিচুয়েশন।
চুক্তিতে বলা হয়, নদীতে ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানি থাকলে দুই দেশ সমান সমান পানি ভাগ করে নেবে। পানির পরিমাণ ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক হলে ৪০ হাজার কিউসেক পাবে বাংলাদেশ। অবশিষ্ট প্রবাহিত হবে ভারতে। আবার নদীর পানির প্রবাহ যদি ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি হয় তাহলে ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাবে ভারত। অবশিষ্ট পানি প্রবাহিত হবে বাংলাদেশে। তবে কোন কারণে যদি ফারাক্কা নদীর পানির প্রবাহ ৫০ হাজার কিউসেকের নীচে নেমে যায় তাহলে দুই দেশে কে কী পরিমাণ পানি পাবে সেটা পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে তৎকালীন সরকার ভারতকে কোন রূপ ছাড় দেয় নাই। [২]
অভিন্ন নদীর পানি বন্টন একটা জটিল প্রক্রিয়া। দু’টি দেশের আলোচনা ও পারস্পারিক বোঝাপড়া ছাড়া এর সমাধান প্রায় অসম্ভব। এই অঞ্চলেই একই রকম বিতর্কের একটা ক্লাসিক এগজাম্পল আছে।
ব্রক্ষ্মপুত্র নদের চীন অংশে আটটি বাধ নির্মাণ করছে চীনা সরকার। ভারত সরকার এ ব্যাপারে চীনকে বারবার আপত্তি জানিয়ে আসলেও কোনো লাভ হয় নাই। যারা বলে থাকেন এসব ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করে সমাধান করা সম্ভব এবং তারা সিন্ধু নদীর উদাহরণও টেনে আনেন। তারা চীনের উদাহরণটি চোখে দেখেন না।
বাংলাদেশ বা ভারত কেউই পানি বণ্টন সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশনে স্বাক্ষর করে নাই। এখানে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে একপাক্ষিকভাবে স্বাক্ষর করলেও, ভারত না করে থাকলে বাংলাদেশ কনভেনশন সংক্রান্ত তেমন কোন ফায়দা পাবে না। অন্যদিকে তৃতীয় পক্ষের নামে নব্যউপনিবেশবাদীদের সংযুক্ত করলে সেটার জন্য পরবর্তীতে ভুগতে হতে পারে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ পাকিস্তান। আর ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থাও এখন ১৯৬২ সালের মতো দুর্বল না।তাই তারা বিশ্বব্যাংকের (সিন্ধু নদী মীমাংসার তৃতীয় পক্ষ) মতো সংস্থার মোড়লগিরি মানতে বাধ্য থাকার কথা নয়।
সবচেয়ে কৌতূহল উদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের ৬০ ভাগ জনগোষ্ঠী ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা নদীর ওপর নির্ভরশীল। চীনের ব্রক্ষ্মপুত্রের উপর আটটির মতো বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিবেশের উপর অপূরণীয় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। ভারতের সাথে পানি বণ্টন নিয়ে যারা সোচ্চার তাদের এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে কখনোই দেখা যায় না। তাই উদ্দেশ্যটা কি আসলেই দেশের ক্ষতিতে আপত্তি তোলা নাকি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ভারতকে ব্যবহার করে আওয়ামী বিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে মসনদ দখল করা তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে। [৩]
সম্প্রতি ফেনী বন্যার সাথে ভারতের একটি ছোট বাঁধ ডুম্বুরকে জড়িয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় বিশেষ গোষ্ঠীটি। যেটির সাথে ফেনী বন্যার কোনরূপ সম্পর্কই ছিলো না। বাধটির অবস্থান ও আকারের জন্য সেটি কখনো হওয়া সম্ভবও নয়। মজার ব্যাপার হলো ফেনী বন্যা নিয়ে এই গোষ্ঠীটির যে বিপুল উৎসাহ ও প্রচারণা ছিলো , পরবর্তীতে কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা নিয়ে তারাই ছিলো নিশ্চুপ। কারণটা কিন্তু সহজেই বোধগম্য, তাই না?
তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে লিখতে গেলে এই আলোচনার কলেবর আরো অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই এটা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। শুধু এতটূকু বলা যায় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যারা আওয়ামী লীগের দিকে আঙুল তুলে থাকে তারাও বহু বছর এই দেশ শাসন করেছে। এবং এই ইস্যুতেও যতটুকুই অগ্রগতি তা এই আওয়ামী লীগের আমলেই হয়েছে।
ভারত তার অংশে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেই বাঁধ নির্মাণ করে থাকে। কিন্তু এতে বাংলাদেশের পরিবেশ ও খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে এটা রূঢ় সত্য। বর্তমান পৃথিবীটা চালাচ্ছে আসলে বাস্তববাদীরা। তাই আপনাকে যতই মিথ্যা চেতনা দেওয়া হোক না যে আমরা ভারতের থেকেও শক্তিশালী, চাপ দিয়ে আদায় করে আনবো সবকিছু কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা ছাড়া আর কোন গতি নেই। এবং তা যে কার্যকর তার উদাহরণ এই আলোচনাতেই দেওয়া হয়েছে।
ইলিশ রপ্তানি ও শ্রমবাজারে ভারতীয়দের আধিক্য
সম্প্রতি এনজিও সরকার ভারতে ৩০০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। মূলত রাজনীতির মারপ্যাচে নিজেদের বানানো ফাঁদে নিজেরাই আটকে যাওয়ার মতো হয় ব্যাপারটা। মানুষের তোপের মুখে পড়ে পরবর্তীতে তা ২৪২০ টনে নামিয়ে আনা হয়। ৪২০
সংখ্যাটি সম্ভবত নিজেদেরকে সম্মান দিতে তারা এখানে রেখে দিয়েছে (জোকিং এপার্ট)।[৪]
এ ব্যাপারে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মন্তব্য করেন “ইলিশ ভারতে উপহার হিসেবে যাচ্ছে না। ইলিশ রপ্তানি করা হবে। রপ্তানির টাকা বাংলাদেশ সরকার পাবে। সেটা খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা না।[৫]
সৈয়দা রিজওয়ানার বক্তব্যটি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে ভারত বিরোধিতার যে ধান্দাবাজী সেটার একটা এপিটোম হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। তিনি খুব চিকন করে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন আগে লীগ আমলে ইলিশ উপহার দেওয়া হতো। আসলেই কি তাই?
ভারতে প্রথম ইলিশ রপ্তানি শুরু হয় ২০১৯ সালে। তখন থেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ইলিশ রপ্তানি করে আসছে। সেটা ‘খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা না’ দিয়েই করে আসছে। পাঁচ বছরে তারা রপ্তানি করেছিলো ৫ হাজার ৫৯৮ টন ইলিশ। তাদের এক বছরে সর্বোচ্চ রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন। আওয়ামী লীগের সময় ভারতকে ইলিশ কখনো উপহার দেওয়া হয়নি। কেবল ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে একবার ৫০ কেজি ইলিশ উপহার পাঠানোর কথা শোনা যায়।[৬]
সৈয়দা রেজওয়ানারা জেনেশুনেও এই বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলো প্রচার করে থাকেন। তারা আসলে এদেশের মানুষকে নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের ব্যবহার্য নিরেট গর্দভ ছাড়া আর কিছুই ভাবেন না।
এই সরকারের আরেক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ছড়ানো ২৬ লক্ষ ভারতীয় কর্মীর বয়ানটি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এতবড় নির্লজ্জ মিথ্যাচারের পরও তিনি তার আওয়ামী বিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তার ছড়ানো আওয়ামী লীগ সরকারের টাকা পাচারের ব্যাপকতার প্রসঙ্গটিও ‘২৬ লক্ষ ভারতীয় কর্মীর’ মতোই আরেকটি বড় মিথ্যাচার। সে প্রসঙ্গে আরেকদিন আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশে চীন ও জাপানেরও অনেক কর্মী কাজ করে থাকে। এটা বিদেশি প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমের একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। ভারতের ক্ষেত্রেও যারা বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করেন একইভাবে করেন। আবার বড় বড় কর্পোরেট হাউজগুলো তাদের নিজেদের ব্যবসার প্রয়োজনেই উঁচুপদে বাহিরের ( বিশেষ করে ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান) মানুষজন নিয়োগ দেন। এখানে বায়ার ডিলিংস, বড় পর্যায়ে কাজ করার দক্ষতাসহ নানা ফ্যাক্টর কাজ করে থাকে।
আসিফ নজরুল ও সৈয়দা রিজওয়ানার কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে বাংলাদেশে ছড়ানো ‘ভারতের মুলোর’ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রামাণিক দলিল। আর বাংলাদেশের একটি বড় অংশ সেটার অন্ধ কনজ্যুমার। যার মূল্য এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে সত্যি সত্যি নিজের দেশকে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার মূল্য দিয়ে।
এখন ফিরে আসা যাক মাওলানা ভাসানী প্রসঙ্গে। শুরুতেই বলা হয়েছিলো মাওলানা ভাসানী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে আগেও চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির বিষয়টাও ছিলো চমকপ্রদ। মাওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত সচিব সাইফুল ইসলাম তার লিখিত ‘স্বাধীনতা-ভাসানী-ভারত’ গ্রন্থটিতে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে প্রেরণ করা দু’টি চিঠির কথা উল্লেখ করেন। তার একটিতে অবিশ্বাস্য কিছু বক্তব্য ছিলো যা ১৯৭১ পরবর্তী ভাসানীর তৈরি করা ভারত বিরোধী ইমেজের সাথে কোনভাবেই যায় না। তিনি লিখেছিলেন,
“আমার মৃত্যুকাল পর্যন্ত যাহাতে বাল্যজীবনের আদর্শ বহাল থাকে তাহারই জন্য ৫ একর জমি ও সাধারণ ধরনের ৪ খানা ঘরের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। আমার প্রথম পুত্রের মৃত্যু হয় ধুবড়ীর গ্রামে। তাই আমার বৃদ্ধা স্ত্রীর আশা তাহার শেষ দাফন ধুবড়ীর কোন গ্রামে হয়। আমার শেষ সংগ্রাম বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভারতের সহিত কনফেডারেশন। এই তিন কাজের সাধন ইনশাল্লাহ আমার জীবিতকালে দেখার প্রবল ইচ্ছা অন্তরে পোষন করি।”
আরেকটি চিঠিতে পাওয়া যায়,
“আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জন এবং ভারতের সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের কনফেডারেশন গঠন করার লক্ষ্যে আমি আমার সংগ্রাম অক্ষুন্ন রাখব।”
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এই দু’টি চিঠি অনুসারে ভারতের সাথে একসময় কনফেডারেশন করতে চাওয়া এই মাওলানা ভাসানীই ১৯৭২ সালের ২৫শে আগস্ট ভারতকে বাংলাদেশের ‘এক নম্বর শত্রু’ বলে আখ্যা দেন। এবং পরবর্তীতে বহু ভারত বিরোধী প্রচারণা চালান। এটার কারণ কী ছিলো? [৭]
আসলে দুটো কারণ হতে পারে। প্রথমত তিনি ছিলেন চীনা পন্থি কম্যুনিস্ট। বাংলাদেশের স্বার্থ থেকে তাঁর কাছে চীনের বৈশ্বিক উদ্দেশ্য ও স্বার্থই বড় ছিলো। আর দ্বিতীয় কারণটি ব্যাখ্যা করতে একটু বিশ্লেষণ করতে হবে।
এই অঞ্চলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও গৌরবজনক বিপ্লব ছিলো ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এই উপমহাদেশের অন্যতম বড় ও প্রবীণ নেতা হয়েও নিজের দেশে সংঘটিত এই বিপ্লবটিতে বলতে গেলে তিনি ছিলেন নিষ্ক্রিয়। এটি তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলে। ব্যাপারটা আসলে তার জন্য ছিলো রাজনৈতিক মৃত্যুর মতো। উনার মতো মাপের নেতা, নিজের জীবদ্দশায় এটি ঘটবে তা কখনো মানতে পারেন নাই। ফলশ্রুতিতে, মাওলানা ভাসানী শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকতে শেষ বয়সে এসে ভারত বিরোধী রাজনীতির পালে নতুন করে প্রবল হাওয়া দিয়ে যান। যেন তাঁর মুক্তিযুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার ব্যাপারটা নিরবে কিছু না বলেও জাস্টিফাই করা যায়।
১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর এককথায় ভারত বাংলাদেশ থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নিয়ে যায়। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর মাত্র তিন মাসের কম সময়ে সাহায্যকারী অধিক শক্তিশালী দেশের সেনা প্রত্যাহার পৃথিবীর ইতিহাসেই অন্যতম বিরল ঘটনা। তারপর ১৯৭২ সালের ২৫শে আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত এমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে নাই যাতে ভারতকে বাংলাদেশের “এক নম্বর” শত্রু বলা যায়। কিন্তু মাওলানা সাহেব বলেছিলেন। কেনো বলিছিলেন আশাকরা যায় এখন সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। উনার উদ্দেশ্যটা সম্ভবত ব্যক্তিগতই ছিলো, কিন্তু তার জন্য তিনি বাংলাদেশকে উপহার দিয়ে গেছেন এক অনন্তকালের বিভাজন। যা নিয়ে উগ্রবাদী ও সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীরা নিরন্তর ব্যবসা ফেঁদে চলছে।
(বাকি অংশ ৩য় পর্বে শেষ করা হবে)
সকল তথ্যসূত্র মন্তব্যের ঘরে…
#ATeam 20241025
@top fans
তথ্যসূত্র :
[১] https://www.bbc.com/bengali/news-54090289
[২] https://www.bbc.com/bengali/news-49888741
[৩] https://www.somoynews.tv/news/2023-08-17/PIOFKEu2
[৪] https://bangla.thedailystar.net/economy/news-615846
[৫] https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-616391
[৬] https://www.dhakapost.com/economy/309130
[৭] https://www.liberationwarbangladesh.org/বঙ্গবন্ধু-হত্যাকান্ডে-চী/