ড. ইউনূসের ‘রিসেট বাটন’-এর সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে প্রথমে ওএসডি এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তা তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সাহসী অবস্থানের কারণে দেশজুড়ে প্রশংসিত উর্মির বিরুদ্ধে ইউনূস সরকার কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রাখে, যেখানে এই সরকারটিই সাংবিধানিকভাবে পুরোপুরি অবৈধ। অবৈধ কোনো সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের দায় কি রাষ্ট্রের একজন সরকারি কর্মকর্তার রয়েছে? একদমই না, বরং ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি যে কাজটি করেছেন, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে একজন সরকারি কর্মকর্তার সেটাই প্রকৃত দায়িত্ব।
উর্মি সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। আসুন দেখি ‘সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮’ তে কী বলা হয়েছে।
এই আইনের ‘আচরণ ও শৃঙ্খলা’ শিরোনামের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের বিধানাবলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে সরকারি কর্মচারীর আইন এবং শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয় ও শর্তাদি এতৎসংশ্লিষ্ট বিধি এবং সরকার কর্তৃক সময় সময় জারিকৃত আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হবে।
অন্যদিকে আইনটিতে দণ্ডের বিধান থাকা ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কার্যধারায় দোষী সাব্যস্ত কোনো কর্মচারীকে এতৎসংক্রান্ত বিধির বিধানসাপেক্ষে নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক লঘু বা গুরুদণ্ড দিতে পারবে।
এবার আসুন যে বিধানের বলে শাস্তি দেয়া যায়, সেখানে কী আছে।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩০এ ধারায় একজন সরকারি কর্মচারী যা যা করতে পারবেন না তা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো কোনো সরকারি কর্মচারী-
(এ) সরকারের অথবা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পালনে জনসম্মুখে আপত্তি উত্থাপন করতে বা যেকোনো ধরনের বাধাদান করতে পারবেন না, অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে তা করার জন্য উত্তেজিত বা প্ররোচিত করতে পারবেন না।
(বি) সরকারের বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ সম্পর্কে জনসম্মুখে কোনো অসুন্তুষ্টি বা বিরক্তি প্রকাশ করতে অথবা অন্যকে তা করার জন্য প্ররোচিত করতে অথবা কোনো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে বা অন্যকে অংশগ্রহণ করবার জন্য প্ররোচিত করতে পারবেন না।
(সি) সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা আদেশ পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন বা বাতিলের জন্য অনুচিত প্রভাব বা চাপ প্রয়োগ করতে পারবেন না।
(ডি) সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোনো শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যেকোনোভাবে অসুন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করতে অথবা অন্যকে প্ররোচিত করতে বা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবেন না।
এই বিধিমালার ৩২ ধারায় বিধিমালা লঙ্ঘনের শাস্তির কথা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই বিধিমালার যেকোনো বিধানের লঙ্ঘন ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫’- এর আওতায় অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং কোনো সরকারি কর্মচারী এই বিধিমালার কোনো লঙ্ঘন করলে তিনি উপরোল্লিখিত বিধিমালার আওতায় অসদাচরণের দায়ে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়ী হবেন।
এবার আসুন ‘অসদাচরণ’ এর সংজ্ঞাটি কী- তা দেখে নিই।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-তে ‘অসদাচরণ’ এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই বিধিমালার ২ (খ) ধারায় বলা হয়েছে- ‘অসদাচরণ’ অর্থ অসঙ্গত আচরণ বা চাকরি শৃঙ্খলার হানিকর আচরণ অথবা সরকারি কর্মচারীদের আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধিমালার কোনো বিধানের পরিপন্থি কোনো কাজ, অথবা কোনো সরকারী কর্মচারীর পক্ষে শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো আচরণ এবং নিম্নবর্ণিত আচরণসমূহও এর অন্তর্ভুক্ত হবে, যথা-
(ক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইনসম্মত আদেশ অমান্যকরণ;
(খ) কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন;
(গ) আইনসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অবজ্ঞাকরণ; এবং
(ঘ) কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসঙ্গত, ভিত্তিহীন, হয়রানিমূলক, মিথ্যা অথবা তুচ্ছ অভিযোগ সম্বলিত দরখাস্ত দাখিল; অথবা
(ঙ) অন্য কোনো আইন বা বিধি-বিধানে যে সমস্ত কাজ অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে বলে উল্লেখ আছে সে ধরনের কোনো কাজ।
এই ২(ক) ধারাতেই পরিষ্কার করা হয়েছে- ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ‘আইনসম্মত’ আদেশ দিতে হবে, কিন্তু সেই ঊর্ধ্বতনই যদি বেআইনি হন তাহলে কী হবে!
সংবিধানের কিছু মৌলিক বিধান ‘সংশোধন অযোগ্য’ বলে উল্লেখ রয়েছে ৭খ ধারায়। এতে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।‘
এই অপরিবর্তনীয় দ্বিতীয়ভাগে নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য বিষয়ক ২১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিকদায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য৷’
আর ২১ (২) ধারা বলছে, ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য৷’
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় বর্তমানে আর তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বতী সরকারের কোনো বিধান নেই। ফলে এ ধরনের যেকোনো সরকার সাংবিধানিকভাবে অবধে।
আমাদের সংবিধানের ৫৭ (১) ধারায় প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হওয়া এবং তার পরের বিধানগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে, যদি-
(ক) তিনি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন; অথবা
(খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন।
(২) সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারাইলে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিবেন কিংবা সংসদ ভাঙিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং তিনি অনুরূপ পরামর্শদান করিলে রাষ্ট্রপতি, অন্য কোনো সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নহেন এই মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, সংসদ ভাঙিয়া দেবেন।
(৩) প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।
তার মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ করেও থাকেন তাহলেও পরবর্তী নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা নিজ পদে এখনও বহাল।
তার অর্থ হলো, বর্তমান সংবিধানের অধীনে ‘শপথ নেয়া’ ইউনূস সরকারের কোনো অস্তিত্বই সংবিধানে নেই। তিনি ও তার সরকার অবৈধ। ম্যাজিস্ট্রেট উর্মির তার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থেকেই এই তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনাই শুধু নয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার রাখেন।
আজ শক্তির জোরে উর্মিকে শাস্তি দেয়া হলেও একদিন দেশের বিচারব্যবস্থাই প্রমাণ করবে, উর্মি ছিলেন ইতিহাসের স্পর্ধিত এক বীর।
#ATeam 20241018
#StandWithTapashee
#CountdowntoStepDownYounus
#StepDownYounus
#tapasheetabassumurmi
Take a bow #tapasheetabassumurmi
Stand With #tapasheetabassumurmi
#Stand_with_tapasheetabassumurmi
মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালেই অনেক মায়া লাগে। কে জানে কোথায় আছে, কেমন আছে!😔