রিসেটের হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার তত্ত্ব



রিসেটের হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার তত্ত্ব

১.
ক্ষুদ্র ঋণ যেমন ড. ইউনূসের মৌলিক কোনো আইডিয়া নয়, রিসেট বাটনও তেমনি অন্যের কাছ থেকে ধার করা। সম্পর্ক নতুন করে শুরু করা বুঝাতে রিসেট বাটন পুশ করা এনালজি ব্যবহার করতেন জো বাইডেন। তবে ইউনূস সম্ভবত এটি শিখেছেন তার বান্ধবী হিলারী ক্লিনটন থেকে। ২০০৯ সালে এক অনুষ্ঠানে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে শুরু করা বুঝাতে তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে একটি রিসেট বাটন উপহার দেন। অবশ্য সে বাটনে লেখা ছিলো Peregruzka, যার অর্থ Overcharge, রিসেট নয়। এটা যে ভুল ছিলো সের্গে লাভরভ তখনই হাসতে হাসতে বলে দেন। বাস্তবে সেই রিসেট বাটন যে কাজ করে নি, ইতিহাসই সাক্ষী। আজ ইউক্রেন ফ্রন্টে আমেরিকা-রাশিয়ার যুদ্ধ চলছে।

২.
ড. ইউনূস রিসেট বাটন পুশ করার কথা উল্লেখ করেছেন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পুঁড়ানো, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গা প্রশ্নের উত্তরে। তিনিও সবকিছু নতুন করে শুরু করাই বুঝিয়েছেন। এবং এই নতুন শুরুর অংশই হলো বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সবকিছুকে ধংস করা। ইউনূস বলেছিলেন, “আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে।” এখানে অতীত হলো বঙ্গবন্ধু, অতীত হলো মুক্তিযুদ্ধ, অতীত হলো বঙ্গবন্ধু যাদুঘর। আপনাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে আপনার নাম কি এবং সেই প্রশ্নের উত্তরে যদি বলেন “নজরুল ইসলাম”, তাহলে প্রশ্ন ও উত্তর মিলিয়ে এটা আপনার নামই বুঝায়, মিডিয়ায় অনুপস্থিত উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে বুঝায় না।

৩.
চারিদিকে প্রতিবাদের মুখে বেসামাল অবস্থায় পড়ে ইউনূস পক্ষ অবশ্য একটি ভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়েছে। সমস্যা হলো একটি মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে যখন আপনাকে আবার মিথ্যা বলতে হবে, তখন সেই মিথ্যা ঢাকতে আবার অন্য মিথ্যার অবতারণা করতে হবে। এভাবে মিথ্যার চেইন সৃষ্টি হবে, যার পদে পদে ফাঁকফোঁকর থাকবে, পদে পদে ধরা খেতে হবে।

তারা হার্ডওয়ার-সফটওয়্যারের যে তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন, সেখানে বলেছেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন রিসেট বাটন চাপার কথা বলেছেন, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি থেকে নতুনভাবে শুরু করার কথা, যা বাংলাদেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দুয়ারে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা হরণ করেছে। বাংলাদেশের গৌরবের ইতিহাসকে মুছে ফেলার কথা তিনি বোঝাননি।”

প্রশ্নে তো দুর্নীতির কথা ছিলো না ভাই। প্রশ্নে তো মুক্তিযুদ্ধের আইকন ধংসের কথা ছিলো। উত্তরে অর্থনীতি আর ভোটের অধিকার ধংসের কথা আসে কিভাবে? ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পুঁড়ালে কি অর্থনীতি আর ভোটের অধিকার ফিরে আসবে?

তারা আরো বলেন, “যখন আপনি রিসেট বাটন চাপবেন, তখন সফটওয়্যার আবার নতুন করে চালু হয়। সেটা হার্ডওয়্যারের কোনো পরিবর্তন করে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের হার্ডওয়্যার তৈরি হয়েছিল।”

এই এনালজিতে “মেধাবী”দের মেধা পুরো উপচে পড়েছে বুঝা যায়। এটা ধার করা হয়েছে মাসুদ করিমসহ কিছু আধাশিক্ষিত টকশোজীবীদের কাছ থেকে। যারা তেমন কোনো জ্ঞান ছাড়াই সর্ববিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাপাবাজি করে। বাংলাদেশের এনালজিতে ১৯৭১ হার্ডওয়্যার নয়, হার্ডওয়্যার হলো বাংলার জমিন। ১৯৭১-এ এই জমিনে স্বাধীনতার “প্রোডাকশন” সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়। মোবাইল ফোনের এনালজি ধরলে এটি “মোটাদাগে” সেই অবস্থা, যখন আপনি ফোনটি কিনে আনেন। এরপর আপনি সেখানে আপনার প্রফাইল সেট করেন, অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ইনস্টল করতে পারেন, ছবি-ভিডিও প্রভৃতি ডেটা কপি করেন। রিসেটের আবার কয়েক ধরন আছে। সহজে ২ ভাগে ভাগ করি: সফট রিসেট এবং হার্ড রিসেট। হার্ড রিসেটকে আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যাক্টরি রিসেটও বলা যেতে পারে। ধরেন ফোনটি হ্যাং করেছে কোনো সফটওয়্যারের কারণে, তখন আপনাকে সফট রিসেট করতে হবে। রিসেট অর্থ এখানে ডিভাইসটি রিস্টার্ট করা। আবার মনে করেন, আপনি ফোনটি বিক্রয় করতে চান, আপনি চান আপনার সব প্রফাইল এবং ডেটা মুছে ফেলতে, তাহলে আপনাকে ফ্যাক্টরি রিসেট করতে হবে।

বাংলাদেশের এনালজিতে, আপনি যদি আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন আমল বাদ দিতে চান, তাহলে আপনাকে ব্যাকআপ রাখা একটা পূর্বের স্টেটে ফিরে যেতে হবে। যেমন, উইন্ডোজের একটা আপডেটের পর যদি দেখেন সিস্টেম স্টেবল হয় নি, তখন আপনি ব্যাকআপ থাকা পূর্বের কোনো ডেটের অবস্থানে রিকভার করতে পারেন। ইউনূস যদি এটা বুঝাতে চান, তাহলে এই সমীকরণে ৩২ নম্বর পোঁড়ানো কিভাবে আসে? আসে না।

ইউনূস যদি ফ্যাক্টরী রিসেট দিয়ে ১৯৭১-এ ফিরে যেতে চান, ১৯৭২ থেকে ২০২৪এর ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত সব ডিলিট করে দিতে চান, তাহলেও ৩২ নম্বরে আগুন দেয়া সেই সমীকরণে আসে না।

আর ইউনূস যদি শুধু হার্ডওয়্যার রেখে সফটওয়্যার দূর করতে চান, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ গায়েব হয়ে যায়। হার্ডওয়্যারে শুধু বাংলার জমিন থাকে। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রডাকশন সফটওয়্যার ডিলিট করে আমেরিকা-জামায়াত-হেফাজতের প্রোডাকশন সফটওয়্যার ইনস্টল করতে চাইলে সেটা আসলে তাদের উদ্দেশ্যের সাথে মিলে যায়। একটি দেশ একবারই স্বাধীন হয়। যেমন, ১৯৭১-এ বাংলাদেশ। ২০২৪-এর বাংলাদেশকে নতুনভাবে “স্বাধীন” ঘোষণা করা হলো তার হার্ডওয়্যারে (বাংলার জমিনে) মুক্তিযুদ্ধের প্রডাকশন সফটওয়্যার (সংবিধান) বাদ দিয়ে অন্য কোনো সফটওয়্যার (জামায়াত-আমেরিকা-হেফাজতের আদর্শমাফিক আলী রিয়াজের সংবিধান) ইনস্টল করা।

ড. ইউনূস ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা নতুন স্বাধীনতা ও সংবিধান পুনর্লিখনসহ যতগুলো কথা এখন পর্যন্ত বলেছেন, তার সবকিছুর শুধুমাত্র একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাই হয়। তাহলো মুক্তিযুদ্ধের আগের স্টেটে ফিরে গিয়ে ভিন্ন আদর্শের একটি দেশ গঠন।

৪.
আপনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হলে প্রতিবাদ জারি রাখুন। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে ড. ইউনূসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলুন। আপনার প্রতিবাদের মুখে ইউনূস ও তার জঙ্গীবাহিনী মচকাইছে, গোঁজামিল হলেও রিসেট বাটনের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইলেও সেটি মুখে অস্বীকার করার সাহস এখনো হয় নাই। প্রতিবাদ জারি থাকলে তারা ভাঙবেও। চলুক প্রতিবাদ।

#ATeam 20241031

One thought on “রিসেটের হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার তত্ত্ব”
  1. ভাই আপনাদের ফেইসবুক পেইজ দ্রত চালু করুন,কারন মানুষ সবচেয়ে বেশি ফেইসবুকে থাকে। যদি ওটা সম্ভব না হয় তাহলে ব্যাকআপ একটা খুলুন। আর যেটা খুলবেন ওটা ভেরিফাইড করবেন অবশ্যই।

  2. Казино Клубника: честная игра, быстрые выплаты и увлекательные турниры
    казино клубника онлайн [url=http://dscol-oktr.ru/clubnika/]http://dscol-oktr.ru/clubnika/[/url] .

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *