ড. ইউনূসের অসাংবিধানিক সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, ১৫ই জুলাই থেকে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত তাদের মেটিকুলাস প্ল্যানের অংশ হিসেবে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলাও করা যাবে না। সবাইকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। গণহত্যার কি দায়মুক্তি হয়?
৫ই আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার বলেছিলেন, “আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, সমস্ত হত্যা, সমস্ত অন্যায়ের বিচার আমরা করবো। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমি সমস্ত দায় দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের জানমাল এবং আপনাদেরকে আমি কথা দিচ্ছি যে আপনারা আশাহত হবেন না।”
সেনাপ্রধানের এ বক্তব্য শুনে অনেকেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। ভেবেছিলেন, যাক, এবার তাহলে এই নজিরবিহীন অরাজকতা শেষ হলো। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখলাম –
➤ বাংলাদেশের ৮০% এর ওপরে পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করা হলো। পুলিশদেরকে নির্বিচারে খুন করে আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়া হলো। রেহাই পেলো না প্রেগন্যান্ট মহিলা পুলিশও। ওয়াকারের সেনাবাহিনী তাদেরকে রক্ষা করেনি। কতো হাজার পুলিশ খুন হয়েছে, এখনো সেই সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ হত্যার বিচার শুরু হয়নি। অন্তত কয়েক হাজার পুলিশ এখনো “নিঁখোজ”।
➤ আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায় থেকে রুট লেভেল পর্যন্ত নেতাকর্মীদেরকে হত্যা করা হলো। কতো হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান এখনো অ্যাভেইলেবল নয়। সেনাবাহিনীর নিজস্ব বক্তব্য অনুসারেই ৬ শতাধিক নেতা ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা তাদের হেফাজতে ছিলো। এদের কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের এমনকি মন্ত্রী পর্যায়ের অনেকেই এখনো “নিঁখোজ”।
➤ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি পুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মাশরাফির মতো ক্লিন ইমেজের মানুষের বাড়িও এই ধংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পায়নি।
➤ সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধসহ সব ধরনের ভাস্কর্য ও স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে।
➤ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে।
➤ গণভবন লুটপাট করা হয়েছে। সেনাবাহিনী নিজেও লুটপাটে অংশ নিয়েছে।
➤ সুপ্রীম কোর্ট, প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে স্কুল-ভার্সিটি পর্যন্ত সর্বত্র জোর করে মারধর করে লোকজনকে পদত্যাগ করানো হয়েছে। সেখানে জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামী জ’ঙ্গী সংগঠনের লোকজনকে কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
➤ জেল থেকে জ’ঙ্গীসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
উপরের এই দৃশ্যমান ধ্বংসের বাইরে কী পরিমাণ ডকুমেন্ট নষ্ট করা হয়েছে, দৃষ্টির অন্তরালে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে সম্পর্কে এখনই কিছু জানার কোনো উপায় নেই। মিডিয়ার কণ্ঠও রোধ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, জেনারেল ওয়াকার ওভাবে জানমালের দায়িত্ব নেয়ার পরও যখন এমনকি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরও পুঁড়িয়ে দেয়া হলো, সেনাবাহিনী এমনকি তারও প্রটেকশন দিলো না, তখন নিশ্চয়ই আপনি আশ্চর্য হয়েছিলেন?
আমি আশ্চর্য হইনি। কারণ, আমি জানতাম, ওগুলো আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিলো। আপনিও এতোদিন নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, ড. ইউনূস নিজ মুখেই বলেছেন তাদের ‘মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’ থিংয়ের কথা।
এই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড থিং হলো একটি গণহত্যার পরিকল্পনা। মূলত ৫ই আগস্টের পরবর্তী ৩ দিন সর্বশক্তি দিয়ে এই গণহত্যার বিশাল অংশই বাস্তবায়ন করা হয়। গণহত্যা শুধু মানুষ হত্যাই নয়, এটি একটি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্যেরও ধ্বংস এবং সেটার প্রতিস্থাপন। আমাদের আগের একটি লেখায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। যা হোক, ড. ইউনূস ওই ২/৩ দিন ফ্রান্সে বসে ঘটনার ওপর নজর রাখেন। এরপর দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেন। অনেক সময় হাই প্রফাইল খুনের মূল পরিকল্পনাকারী যেভাবে সবকিছু সেট করে ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে চলে যান, যাতে কেউ তাকে খুনের সাথে জড়াতে না পারে, ইউনূসও সেই কৌশল প্রয়োগ করেন।
৫ই আগস্টের পর আড়াই মাস পার হয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ এখনো কর্মস্থলে যোগ দেয়নি। সরকারের খাতায় তারা পলাতক। পুলিশ হত্যা নিয়ে মামলাও হয়নি বললেই চলে। একটি মামলা হওয়ায় পুলিশকেই থ্রেট দিয়েছে জামায়াত। আগুন সন্ত্রাসেরও কোনো মামলা হয়নি। তদন্তেরও দেখা মেলেনি। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা এখনো “পলাতক”। এমনকি সাংসদদের সবার খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না। ইউনূসের এনজিও সরকার এ বিষয়ে একদমই নির্বিকার। তাদের নির্বিকার অবস্থা দেখে অনেকেই উসখুশ করছিলেন বিচার প্রক্রিয়া কবে শুরু হয় সেই আশায়। এখন তারা সরকারিভাবেই ঘোষণা দিয়ে দিলো, এসব অপরাধের কোনো বিচার হবে না।
৮ই আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো গণহত্যার অপরাধকে পুরোপুরি দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। কাগজে-কলমে এটি ৮ই আগস্ট হলেও এর পরবর্তীতেও এ ধরনের যত অপরাধ ঘটেছে কোনোটিরই আদতে বিচার হবে না। যেখানে আইনই করে হয়েছে মামলা করা যাবে না, সেখানে বিচারের তো প্রশ্নই আসে না। বিচার করতে গেলে মেটিকুলাস প্ল্যানের থলের বিড়াল বের হয়ে যেতো। পুলিশ হত্যাই শুধু নয়, ছাত্রসহ আমজনতাকে হত্যার জন্যও যে ইউনূসের দলবল দায়ী (কী-ওয়ার্ড ৭.৬২ এম এম বুলেট), নিয়ন্ত্রিত আদালত হলেও সেটি কিছু মাত্রায় উম্মোচিত হয়ে যেতো। মিডিয়া কন্ট্রোল করে যে ন্যারেটিভ ইউনূস দাঁড় করাতে চাইছেন, সেটি এখনই নড়বড়ে। বিচার প্রক্রিয়ায় গেলে একেবারেই প্রকাশ্যে চলে আসতো। সেটি যতোদিন সম্ভব ঠেকাতেই এই দায়মুক্তির আইন। নির্বিঘ্নে লুটপাট করতে সময় দরকার। বিচার করতে গেলে সেই সময় পাওয়া দুষ্কর।
কিন্তু, এভাবে আইন করেই কি গণহত্যার দায়মুক্তি হয়? হয় না। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরও এরকম ইনডেমনিটি আইন করা হয়েছিলো। বিচার দেরি করা গিয়েছে, কিন্তু বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। বিচার হয়েছে মানবতাবিরোধী, গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদেরও। বাংলার মাটিতে ড. ইউনূসের মেটিকুলাস প্ল্যানে করা গণহত্যারও বিচার একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। অসাংবিধানিক লুটেরাদের অবৈধ দায়মুক্তির আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলার জনগণই গণহত্যাকারীদেরকে ফাঁসিতে ঝোলাবে। সময় যতো যাচ্ছে, ম্যানিলা রোপও ততো হাসছে।
#ATeam 20241033