'৩৫০ কোটির ক্ষতি' মেনে নিবো, যদি…

‘৩৫০ কোটির ক্ষতি’ মেনে নিবো, যদি…

একই এজাহারে উল্লেখ, ‘বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এ তাণ্ডব চালিয়েছে’ মেনে নেন।

শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রীসভার কেউ বলেনি মেট্রোরেল মেরামত করতে ৩৫০ কোটি টাকা লাগবে। যদি বলে থাকেন তবে, চ্যালেঞ্জ থাকলো সেই তথ্য সামনে আনুক ইউনূস সরকার। তাহলে এর উৎস কী? জানতে হলে পড়ুন,

ইউনূস সরকার এবং তার উপদেষ্টা, সমর্থকরা বাস্তবেই প্রতারক এবং ঠগ। এরা ৪টি স্টেশন ও ডিপো থেকে যন্ত্রপাতি খুলে এনে ২ মাসের অধিক সময় ধরে সেগুলো ইনস্টল করে, জোড়াতালি দিয়ে কাজিপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন চালু করেছে। আরও অধিকতর ব’লদ কিছু লোকজন সেটা বাহবা দিচ্ছে। আসুন এবার জানি প্রকৃত ঘটনা কী,

কোন নাশকতা বা দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে তাৎক্ষণিক মামলা হয়, মামলা বিলম্ব হলে তার কারণ দর্শাতে হয়। তাই বাদী পক্ষে তাড়াহুড়ো থাকে। বাদী একাধিক পক্ষ হলে যার যার পার্সপেক্টিভ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সম্বলিত মামলা দায়ের হতেই পারে। মেট্রোরেলে নাশকতার ঘটনায় ৪ টি পক্ষ ৭ টি মামলা করে। এরা হচ্ছে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড, এমআরটি পুলিশ, ডিএনসিসি ও পুলিশ।

মেট্রোরেলে নাশকতার বিষয়ে যে মামলা হয়েছে তা থেকে আমরা ক্ষতির আনুমানিক একটি পরিমাণ পাই যেমন, কাজিপাড়া (৫০ কোটি), কাজি পাড়া ও মিরপুর ১০ (২৫০ কোটি), মিরপুর-১০ ও ডিএনসিসি গাড়ি ডিপো (৩৫০ কোটি), এমআরটি পুলিশ কর্তৃক কাজিপাড়া ও মিরপুর- ১০ (১৫ লাখ)। [১]

এছাড়া ড. ইউনূস সরকার মেট্রোরেলের নাশকতায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ যে কমিটি করে দিয়েছে সে কমিটির দেয়া তথ্যে ক্ষতির পরিমাণ ১৩৮ কোটি।

ইউনূসের কমিটি কি ঘোড়ার ঘাস খায়, যে ১৩৮ কোটির ক্ষতি নিরূপণ করেছিলো?

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমপি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, দুটি স্টেশনের মধ্যে কাজীপাড়া স্টেশনটি তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়েছে। ফলে সেটি সংস্কারকাজ শেষ করে দ্রুত চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন চালু করতে বেশ “কয়েক মাস” সময় লাগবে। [২]

লক্ষ্য করুন তারা বলেছে কয়েক মাস লাগবে।

খরচের বিষয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যে হিসাব করেছি, তাতে মনে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত দুটো স্টেশন মিলিয়ে সংস্কার কাজ করতে ১৩৮ কোটি টাকার বেশি লাগবে না।[২]

এখন বুঝাই যাচ্ছে, সব সময় এধারকা মাল ওধার করতে এক্সপার্ট ইউনূস, কিছু স্টেশন থেকে যন্ত্রপাতি খুলে সবগুলো স্টেশনকে বিকলাঙ্গ করে চালু করেছে কাজিপাড়া ও মিরপুর ১০। এর মূল উদ্দেশ্য আগের সরকারকে ম্যালাইন করা। তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ ও কুৎসা রটানো। উপর দিকে থুতু ফেললে নিজের গায়েই পড়ে, এখন যদি মানুষ বলে ১৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি বলে লেগেছে মাত্র ১ কোটি ২৫ লাখ বাকি টাকা কি ইউনূস সরকার মেরে দিতে ধান্দা করছিলো?

এবার আসুন বিস্তারিত জানি,

ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন নামের নাশকতা কর্মসূচি চলাকালে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা চালানো হয়। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীদের মারধরসহ ভাঙচুর করা হয় স্টেশনের সিসি ক্যামেরা, এলইডি মনিটর, টিকিট সংগ্রহের মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। লুট করা হয় মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র। সংয়ক্রিয় গেট ও টিকিট সিস্টেমকে পুরোপুরি অকেজো করতে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এসব ঘটনায় সাতটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে তিনটি মামলা করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ও ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)কর্তৃপক্ষ, দুটি এমআরটি পুলিশ ও দুটি মামলা করেছে থানা পুলিশ।

মেট্রোরেলে নাশকতা চালানোর পর, এসব মামলায় প্রাথমিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ যার যার পক্ষ থেকে ক্ষয়-ক্ষতির আনুমানিক এবং প্রাক্কলিত একটি পরিমাণ উল্লেখ করে। এখানে বুঝতে হবে, এটি শুধু ভৌত অবকাঠামোর ক্ষতি ধরা হয়নি বরং মেট্রো বন্ধ থাকলে যে পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির পক্ষ থেকে তাও হিসাবে এনে ক্ষতিপূরণে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

এখন আসুন মামলা সম্পর্কে জানি,

কাজীপাড়া স্টেশন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২২ জুলাই ডিএমটিসিএলের এমআরটি লাইন-৬ এর উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন) ইমান উদ্দীন কবীর বাদী হয়ে কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয় হাজার জনকে। ঘটনায় মেট্রোরেলের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন।

মিরপুর-১০ স্টেশন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত ২৩ জুলাই ডিএমটিসিএলের এমআরটি লাইন-৬ এর উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন) ইমান উদ্দীন কবীর বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আট থেকে নয় হাজার জনকে আসামি করা হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে মিরপুর-১০ স্টেশনে ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়।

গত ২৩ জুলাই ডিএমটিসিএলের এমআরটি লাইন-৬-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক গোলাম রসূল আজাদ (৫৫) মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার জনকে। এতে কাজীপাড়া স্টেশনের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা হয়েছে বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন।

কিশোরের মৃত্যুতে মামলা, মেট্রোরেল ও ডিএনসিসির ক্ষতি ৩৫০ কোটি টাকা

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে গত ১৯ জুলাই মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে ভাঙচুর এবং পাশে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৪-এর অফিস ভবন ও ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখানে তাণ্ডব চলাকালে কামরুল ইসলাম (১৭) নামের এক কিশোর নিহত হয়। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মেট্রোরেল ও সিটি করপোরেশনের ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই তথ্য উল্লেখ করে গত ২৯ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হোসেন মোবারক। একই সঙ্গে এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা আন্দোলনের আড়ালে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এ তাণ্ডব চালিয়েছেন।

রাজধানীর মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এমআরটি পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা তিন হাজার ব্যক্তিকে। দুই মামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।

গত ২৪ জুলাই এমআরটি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সামসুল আলম বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয় এক থেকে দেড় হাজার জনকে। আসামিরা দণ্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৮৬/৩৫৩/৩৩২/৪২৭/৪৪৮/৩৮০/১০৯ ধারাসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/২৫(ঘ) ধারায় অপরাধ সংঘটিত করেছেন বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন। অবৈধভাবে স্টেশনে প্রবেশকারী অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং কাজীপাড়া স্টেশনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত এমআরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করে এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু চুরি করে নিয়ে যায়। যার বর্তমান মূল্য আনুমানিক পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

গত ২৪ জুলাই এমআরটি পুলিশের এএসআই মো. আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামা এক থেকে দেড় হাজার জনকে।

বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, অবৈধভাবে স্টেশনে প্রবেশকারী অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীরা আমাদের এলোপাতাড়ি মারপিট ও শরীরের বিভিন্ন অংশে সাধারণ জখম করে। তারা অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও স্টেশনের মালামাল চুরি করে নাশকতামূলক ক্ষতিকর কার্যকলাপ সংঘটিত করে। এতে আনুমানিক ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এখন যদি মামলার এজাহারকে শেখ হাসিনা সরকারের বক্তব্য ধরে নেই, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ অপরাপর মামলা থেকে “পাঁচ লাখ ৪০ হাজার” বা “৯ লাখ ৬০ হাজার” কেন নিবো না? আমরা কি এখন তাহলে বলবো, যে ৫-১০ লাখ টাকার ক্ষতিকে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ বলছে, [৩] তবে কি ইউনুস সরকার টাকা মেরে দেয়ার ধান্দা করছে?

এসব এজাহারের সব ভ্যালুকে আমলে নিতে হলে, ক্ষতির পরিমাণ যাই হোক না কেন ইউনূস সরকার কি এটা মেনে নিচ্ছেন, “কোটা আন্দোলনের আড়ালে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এ তাণ্ডব চালিয়েছেন”? -কারণ এটাও তো এজাহারেই আছে।

ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণের এত তারতম্য কেন?

সাধারণ একটা উদাহরণ দেই, তিন হাজার টাকায় চাইনিজ সিসিটিভি ক্যামেরা পাওয়া যায় আবার হাইডেফিনেশন পিটিজেড ক্যামেরা ৩ লাখ টাকাও হতে পারে। মারুতি সুজিকিও গাড়ি আবার মার্সিডিজ বেঞ্জও গাড়ি। ইউনূস মার্সিডিজ বেঞ্জ না চড়ে একটা এম্বাসেডর বা মারুতি গাড়ি চড়তে পারেন। এতে খরচ বাঁচবে। সর্বাধুনিক জাপানি মেট্রোরেল প্রযুক্তি এনেছে বাংলাদেশ। আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন, কী ব্যবহার করবেন আপনার অভিরূচী।


#ATeam 20241035

সূত্র:
১। [https://www.jagonews24.com/law-courts/news/958918]
২। [https://www.rtvonline.com/capital/291522]
৩। [https://www.ittefaq.com.bd/703553/]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *