পঁচাত্তরের খুনিদের যেমন জিয়াউর রহমান দায়মুক্তি দিয়েছিলেন, তেমনি দায়মুক্তি পাচ্ছে চব্বিশের সমন্বয়ক এবং হিজবুত-শিবিরের তথাকথিত “মাস্টারমাইন্ড”গুলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে পনেরই জুলাই থেকে আটই অগাস্ট পর্যন্ত সংগঠিত গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না।”
ছাত্র-জনতার কথা বলে সমন্বয়ক এবং হিজবুত তাহরীর ও শিবিরের “মাস্টারমাইন্ড”দের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর প্রয়োজন হচ্ছে কেন? অপরাধ যদি আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই করে থাকে, তাহলে সমন্বয়কদের কেন দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে? “ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাই না” – ব্যাপারটা এরকম। ইউনূস এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা খুব ভালোভাবেই জানে কীভাবে “মেটিকুলাসলি” পরিকল্পনা করে লাশের রাজনীতি করে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ হয়ে যারা একের পর এক লাশ ফেলেছে, পুলিশ পুড়িয়ে মেরেছে, থানায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, থানা থেকে অস্ত্র লুট করেছে, জেল ভেঙে জঙ্গিদের বের করেছে, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়ি ধ্বংস করেছে, শতশত আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা করেছে, হিন্দুদের হত্যা করেছে – এই দায়মুক্তি তাদেরই জন্য। এই অপরাধগুলো তারা না করে থাকলে দায়মুক্তির কোন প্রয়োজন হত না।
ইউনূস সরকার যেমন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তেমনি অবৈধভাবেই সন্ত্রাসীদের দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফৌজদারি অপরাধে দায়মুক্তি দেওয়ার কোন বিধান বাংলাদেশে নেই। এটা মানবাধিকারেরও স্পষ্ট লঙ্ঘন। দোষী-নির্দোষ সকলের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং পুলিশের কেন বিচার পাওয়ার অধিকার থাকবে না?
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ফৌজদারি অপরাধে কাউকেই দায়মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। এখন যেসব চেষ্টা চলছে, সবই বেআইনি চেষ্টা।” নৃশংস ও পৈশাচিক উপায়ে পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, সিরাজগঞ্জে একদিনে ৪৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে যাদের মধ্যে ১১ জনকে হত্যা করা হয় এনায়েতপুর থানা অবরুদ্ধ করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। যশোরের এক হোটেলে আগুন দিয়ে প্রায় অর্ধশত মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এসমস্ত নিরপরাধ মানুষের কি বিচার পাওয়ার অধিকার নেই? আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেওয়া কি ফ্যাসিবাদ নয়? বিচার পাওয়ার পথরুদ্ধ করে, পৈশাচিক সব অপরাধের দায়মুক্তি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টাকে আর কী নামে অভিহিত করা যেতে পারে?
ইউনূস সরকার গত দু’মাসে দেশে যে অরাজকতা ও ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, দায়মুক্তি দিয়ে তার বৈধতা অর্জন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী ও উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈরীতা ও বাক-বিতন্ডার একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো, হতে পারে এ তারই ধারাবাহিকতা। সেনাবাহিনী সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের চাপ দেওয়াতে দু’পক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয় বলে গুঞ্জন উঠেছিল। সেসময় সারাদেশে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাযজ্ঞের বিচারের কথাও তোলা হয়েছিল বলে ইনফরমাল বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকে দাবি করেছেন। এরকম গুঞ্জনের পরেই এই দায়মুক্তির বিধান জারি করা হচ্ছে যা গুঞ্জনের সত্যতার ব্যাপারে কিছু যৌক্তিকতা সৃষ্টি করে অবশ্যই। তাহলে, বলা যেতে পারে, সেনাবাহিনীর চাপ থেকে বাঁচতে এবং নিজেদের ইচ্ছামতো অবৈধভাবে নির্বিঘ্নে সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখন ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যই এই দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
“স্বাধীনতার উৎযাপন” বলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উস্কানি দিয়ে এবং ছাত্রদের ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে ইউনূস নিজেই সমস্ত অপরাধের সঙ্গে সামিল হয়েছে। সারাদেশে যত হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে তার সমস্ত কিছুর দায় ইউনূস এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিতে হবে। পুলিশ হত্যা, সংখ্যালঘু হত্যা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, মব জাস্টিসের নামে মানুষ পিটিয়ে হত্যা, থানা থেকে অস্ত্র লুট, গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নথি পত্র লুট ও অগ্নিসংযোগ – এ সমস্ত অপরাধের বিচার করতে হবে এবং দায়মুক্তির নামে ফ্যাসিবাদী বিধান দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
#ATeam 20241037