তড়িঘড়ি করে দায়মুক্তি আইন কেন?

আমরা এতোদিন শুনে আসছিলাম শেখ হাসিনার পুলিশই গণহত্যাকারি। তারা হাজারের বেশি “কোমলমতি” ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ছাত্ররা যে পুলিশকে হত্যা করেছে, সে ন্যারেটিভ প্রথম আলোসহ ইউনূস নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ায় প্রচারের সুযোগ নেই। সরকারিভাবে নিহত পুলিশের সংখ্যা বলা হয়েছে ৪৬ এবং তাদেরকে “নিহত” বলা হয়, তাদেরকে “খুন” হওয়া বলা হয় না এবং খুনটা যে আন্দোলনে থাকা “ছাত্র-জনতা” করেছে, সেটি বলার সাহসও কেউ করেনি।

আর্মি ও শিবিরের হাতে গণহত্যার শিকার হওয়া পুলিশও এতোদিনে এই হত্যাগুলোর বিষয়ে মামলা করার সাহস পায়নি। পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক রদবদল করে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে বসানোও হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তো পুলিশই। আপনি পুলিশকে হত্যা করবেন, আর তারা সেটা মনে রাখবে না, এমন নয়। ৫ই আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার এক কনস্টেবলকে “ছাত্র-জনতা” হত্যা করে। সেজন্য মামলা হয়। হত্যায় সরাসরি জড়িত ৩ আসামিকে গ্রেফতারও করা হয়। পুলিশের এই “সাহসে” নড়েচড়ে বসে ইউনূসের সমন্বয়করা। তারা প্রথমে পুলিশকে হুমকি ধামকি দেয়া শুরু করে। ১২ই অক্টোবর পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে যখন হত্যাকারীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রচার করা হয়, তখনই এ বিষয়ে দায়মুক্তির আইন করার তোড়জোড় শুরু হয়। সারজিসরা খুনি “ছাত্র-জনতা” সমন্বয়ক না, এই বিবৃতি দেয়। কিন্তু বিচার শুরু হলে এভাবে বিবৃতি দিয়ে আর কয়টি কেস অস্বীকার করা যাবে? সুতরাং, পুলিশ হত্যার বিচারই যাতে শুরু না হয়, সেজন্যই তড়িঘড়ি করে বেআইনি দায়মুক্তি দেয়া হয়।

গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসন আমলে পুলিশের কার্যক্রমে আমি মোটাদাগে সন্তুষ্ট। মাদক কারবার নির্মূলের অংশ হিসেবে বিনা বিচারে ক্রসফায়ারের কাজটি গর্হিত ছিলো। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের অনেক লোকজনকেই মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সাধারণত বাধা দেয়া হয়নি। বিএনপির নিজস্ব নেতৃত্বের সমস্যার কারণে তারা আন্দোলন জমাতে পারে নি। ইউনূস-আমেরিকা- জামায়াতের এই ছদ্মবেশী আন্দোলনেও বিএনপির ওপর তার মিত্ররা আস্থা রাখতে পারেনি। গত ১৫ বছরে আন্দোলন যখনই সহিংসতার দিকে গিয়েছে, একমাত্র তখনই পুলিশ শক্তিপ্রয়োগের পথ অনুসরণ করেছে। এক্ষেত্রেও তারা জীবনবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করেনি। রাবার বুলেট এবং জল কামানই তাদের মূল অস্ত্র ছিলো।

ইউনূস-জামায়াতের “মেটিকুলাস” আন্দোলন জমাতে যে লাশের দরকার ছিলো, পুলিশ সেটা সরবরাহ করছিলো না। তখন আবু সাঈদ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। তার রাবার বুলেট খাওয়ার ঘটনাটি ক্লোজ রেঞ্জে ভিডিও করা হয়। সে রাবার বুলেটে মারা যায়নি। কিন্তু, সেই ভিডিও দেখে সহজেই পাবলিককে উত্তেজিত করা যায়। আরেকটি বহুল প্রচারিত কেস ছিলো মুগ্ধ। তাকে যেখানে হত্যা করা হয়, তার আশেপাশে পুলিশ ছিলো না। বেশিরভাগ খুনের ক্ষেত্রেই যে ৭.৬২ এমএম বুলেট পাওয়া যায়, পুলিশ সেটি ব্যবহারই করে না। স্পষ্টতই এই খুনগুলো পুলিশ করেনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াত এই বুলেটের কথা মুখ ফস্কে বলে ফেলায় তাকে কালবিলম্ব না করে পাট মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। বর্তমান বাংলাদেশে পাট হলো একটি মৃত আর্থিক সেক্টর, যেখানে কথা বলারই তেমন কোনো বিষয় নেই। সাখাওয়াতের মুখও তাই বন্ধ।

ট্রাইব্যুনাল করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করায় জামায়াতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা প্রতিশোধ স্পৃহা থেকেই এই আন্দোলন-সম্পর্কিত মামলার জন্য সেই একই ট্রাইব্যুনাল ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত সব লোকজনের নামেই গণহারে মামলা দেয়া হয়। কিন্তু সে মামলা দিয়ে যে হাসিনাকে ফাঁসি দেয়া যাবে না, এটি ইতোমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। তবুও, তারা অপচেষ্টা করে যাবে। সমস্যা হলো, এসব মামলার কার্যক্রম চলাকালে অনেক গোমরই ফাঁস হবে। মনে করেন, দেখা গেলো আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে তার সহযোদ্ধাদের ইটের আঘাতে; কিংবা মুগ্ধকে গুলি করেছে তারই আন্দোলনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শিবিরের ক্যাডার, তখন তো গণহত্যার ন্যারেটিভ পুরোপুরি উল্টে যাবে। সুতরাং, এই মামলাগুলোর বিচার শাঁখের করাত। কোনদিক দিয়ে কেটে বের হয়ে যাবে, সেটি আগে থেকে বলা কঠিন। পুলিশকেও দায়ী করা যেতে পারে, আবার জামায়াত-ইউনূসের মেটিকুলাস প্ল্যানের খুনখারাবিও ধরা খেতে পারে। ঝুঁকিটা থাকছেই।

অন্যদিকে পুলিশ হত্যায় দায়ী শুধু ইউনূস পক্ষই। গণতান্ত্রিক আন্দোলন পুলিশ খুন করে হয় না। পুলিশ খুন কারা করেছে, সেই আমলনামা ধরে টান দিলে মেটিকুলাস প্ল্যানের পেছনের ষড়যন্ত্র সবই উন্মোচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। কয়েক হাজার পুলিশের খোঁজ মিলছে না। অসাংবিধানিক ইউনূস সরকার বলছে, তারা পলাতক। হারুন-বিপ্লবদের মতো কিছু হাই প্রফাইল পুলিশ ছাড়া বাকি এই কয়েক হাজার পুলিশের পলাতক থাকার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তাদেরকে খুব সম্ভবত হত্যা করা হয়েছে। এক পুলিশ ফাঁড়িতেই যেখানে গর্ভবতী মহিলা পুলিশসহ ১৪ জনকে খুন করা হয়েছে, সেখানে আক্রান্ত ৪৫০টিরও বেশি থানায় মোট কতোজনকে খুন করা হতে পারে, সেটি চিন্তা করার বিষয়।

পুলিশ আজ হোক, কাল হোক, পুলিশ হত্যার জন্য মামলা করবেই। নোয়াখালীর কেসের মতো সেই মামলায় আসামীও ধরা হবে। বিচার শুরু হলে বেরিয়ে আসবে ইউনূস-আমেরিকা-জামায়াতের মেটিকুলাস দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত। সেটি যে কোনো মূল্যে ঠেকানোর জন্যই এই দায়মুক্তি আইন।

আরেকটি ভবিষ্যতবাণী করি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই মিলিয়ে নিবেন। তাহলো, শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের নামে গণহত্যার যে গণমামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো দিয়ে বড়জোর কিছু হয়রানি করা হবে। কিন্তু, কোনো মামলাই বিচারের সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাবে না। পুলিশ হত্যার ইনডেমনিটি দেয়ার পরেও যদি এই মামলাগুলো বিস্তারিত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভেতর দিয়ে যায়, তাহলেও আমেরিকা-ইউনূস-আর্মি-জামায়াতের গণহত্যা সামনে এসে যাবে। তাজুলের হম্বিতম্বি বিবৃতিই সার হবে। তাদের এখন ভিক্ষা চাই না, কুত্তা ঠেকাও অবস্থা। ইউনূস সবকিছু চাপা দিয়ে বছর কয়েক পয়সাপাতি করে নিতে পারলেই খুশি। জামায়াতের উদ্দেশ্য পয়সাপাতির সাথে সাথে বাংলাদেশকে ধ্বংস করা। ধ্বংস করে এরা যখন চলে যাবে, তখন তো আবার আওয়ামী লীগ আছেই। তারা দেশ স্বাধীন করার ‘পাপ’ যেহেতু করেছে, বারবার ধংস হয়ে যাওয়া দেশ বারবার গড়ার দায়িত্বও তো তাদেরই!

তবে, আমার ধারণা, ইউনূস-জামায়াত এবার পর্যাপ্ত সময় পাবে না। পুলিশকে গণহত্যা করে সরকারে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। আর্মি দিয়ে কতোদিন দেশ চালানো যায়? পুলিশ না থাকলে আইনশৃঙ্খলা শেষ। তারওপর জ’ঙ্গী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে মুক্ত করে জামায়াত-শিবিরের হাতকে শক্তিশালী করা হয়েছে। দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বানানো হয়েছে। এছাড়া আছে অর্থনীতির সম্ভাব্য কলাপ্স। সাধারণ মানুষের পেটে ভাত না থাকলে ইউনূসের মিষ্টি কথা দিয়ে পেট ভরবে না। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম অনেক বছর বেঁচে ছিলেন, ইউনূসও অনেকদিন বাঁচবেন। জনগণ তার আমেরিকার ফ্লাইট আটকে দিবে। পুলিশ হত্যার বিচারে তিনিও তার হিস্যা বুঝেই পাবেন।

#ATeam 20241040

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *