বস অফ ইউনূস: একটি মেটিকুলাস সাক্ষাৎকার

প্রধান উপদেষ্টার প্রধান উপদেষ্টা মাহফুজ আলোমের একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম। খালেদ মুহিউদ্দিনের সাথে সাক্ষাতকারে খালেদকে তার প্রতি ব্যাপক সফট দেখা গেছে। হতে পারে প্রথম মোলাকাত হিসেবে একটা আস্থার জায়গা তৈরির জন্য হয়তো একটু ছাড় দিয়ে বলেছেন, যেটা অন্যদের ক্ষেত্রে সাধারনত খালেদ দেন না। সাক্ষাৎকারটি দেখে যা মনে হয়েছেঃ

১. মি. আলোম নামের লোকটি প্রচুর বই পড়ে, তার পড়ালেখা প্রচুর। তবে স্ট্রং এর লেখা ‘রিডিং ফর প্লেজার’ প্রবন্ধে যেমন পড়ার কথা বলা হয়েছে, তেমন না। তার পড়াটা গোল ওরিয়েন্টেড মনে হয়েছে এবং অবশ্যই প্যাটার্নড। আউটকাম ওরিয়েন্টেড পড়া। জানার জন্য ছিলো কিনা কে জানে!

২. সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নে তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সে সুস্পষ্ট কিছু না বলে ঐতিহাসিক ফ্যাক্টরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বলে গেলো ‘রাষ্ট্রের জায়গা থেকে নাগরিকের জায়গায়’ আছে! এইটার আসল মানে কি সেইটা সে নিজেও জানে বলে মনে হয় না! নাগরিকই তো রাষ্ট্রের উপাদান। তাইলে রাষ্ট্রের জায়গা থেকে আবার নাগরিকের জায়গায় যায় ক্যামনে? সেইখানে সরকারের দায় বা ভুমিকা নিয়া প্রশ্ন এড়াইয়া সে রাষ্ট্রের পারস্পেক্টিভ টানলো! সরকার কি তাইলে রাষ্ট্রের বাইরে? হিন্দু-মুসলমান অন্তসম্পর্ককে সে ১০০/১৫০ বছরের ইতিহাস দিয়ে বিচার করে, বেশীও না কমও না। যাতে ইনায়া বিনায়া কলকাতার বর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাব, হিন্দুরা অন্য দলের চেয়ে আওয়ামীলীগে কেন স্বস্তি বোধ করে সেইটা তাদের দায়- এই টাইপের কথা বার্তা বলার চেষ্টা করেছে। সেটার প্রশমনে সে রাষ্ট্র ও নাগরিকের কী চরিত্র হবে সেটার যে চিত্র দেবার চেষ্টা করেছে, তা আসলে ৭২ এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা। অথচ, সে ৭২ এর সংবিধানকে রীতিমতো নিষিদ্ধ পুস্তক জ্ঞান করে!

৩. সেনাবাহিনীর নিচের দিকের সদস্য কর্মীদের প্রতি সে খুশি, কিন্তু উপরের র‍্যাঙ্কের ব্যাপারে তার বেশি একটা অনুরাগ নাই, বরং, চাপা বিরাগ কাজ করে মনে হইলো। তবে সেইটা বুঝা কঠিন, কারণ ডান্ডারে সবাই ডরায়!

৪. তার মতে লিটমাস টেস্ট হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব। আন্দোলনের সময় ও সরকার পতনের ইমিডিয়েট পরে নাকি তাদের প্রায়োরিটি ছিলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করা! সিরিয়াসলি? এই তিনোটারেই হুমকির মধ্যে ফালায়া তারা সেইটারে রক্ষা করসে? এইটা কী শুনলাম?

৫. তারা নাকি জনগনের সরকার! জনগনের বড় অংশ যদি মনে করে তারা এটা চাচ্ছে না, তাহলে থাকবে না। জনগনের ম্যান্ডেটই তাদের ম্যান্ডেট! হাইস্যকর। কোন ভোটে নির্বাচিত না, একটা ক্যু’ করে দখল করা ক্ষমতায় তার জনগণ আসলে কে? তার মতে ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিস্ট এনাবলার ছাড়া দেশের বাকি জনগন সবাই নাকি তাদের পিছনে ঐক্যবদ্ধ আছে!

৬. তাদের মতে ৭১ হলো একটা মাইলস্টোন। কিন্তু, এছাড়া বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এতদিন যেটা খুবই কম আলোচিত ছিলো, তা হলো ৪৭! তারা ৪৭, ৭১, ২৪ এক সুতোয় গাঁথার চেষ্টা করেছে! ৪৭ এ পাকিস্তানের জন্য এবং অব্যবহিত পর থেকেই বাংলার উপর তার নির্যাতন নিষ্পেষন শুরু। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে প্রাসঙ্গিক হলে ৫২, ৫৬-৫৭, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ এগুলা হতে পারে। ৪৭ কোন হিসাবে বাংলাদেশের জন্য সিগনিফিকেন্ট? আসলে বাংলাদেশ না, তার পূর্ব পাকিস্তান ওরফে ইসলামিক রিপাব্লিক অফ ইস্ট পাকিস্তানের জন্য!

৭. সে হিজবুত তাহরীর করে কিনা সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেছে এইটা নাকি যারা বলসে বার্ডেন অফ প্রুফ তাদের। আবার বলেছে বাংলাদেশের বিরাট একটা অংশের চাওয়া বাংলাদেশ পুরোপুরি ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যাক, আবার নিজেই তার আগে বলছে যে শরীয়াহ ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ চায় না, যদি চাইতো এতোদিনে সেইটা কোন না কোন ভাবে (ভোট বা সমর্থন) এক্সপ্রেস করতো। কেমনে কী?

৮. সে বলছে আগের মত নাকি যেনতেন মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে না! হাসিও আসতে গিয়া হোঁচট খাইলো!

৯. সে বলছে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবী উঠেছে কারণ তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছিলো। সেক্ষেত্রে তো আসলে ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ হবার কথা, কারণ ছাত্রশিবিরের নেতারা যখন ছাত্রলীগ সেজে সন্ত্রাসী করেছিলো, দোষী তো তাহলে যে করেছে সে, যার জামা পরেছে সে না!

১০. আওয়ামীলীগের সমর্থক দেশের এক তৃতীয়াংশ, যারা নাকি খুন, গুম, গণহত্যা, ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিলো! যদি ধরেও নেই সে আসলে সবাইকে মিন করেনি, শুধু সঙ্ঘটনকারীদের মিন করেছে, তাহলেও বলতে হয় সেই দায় সে সমর্থকদের উপরেও সমবন্টন করে দিলো কীভাবে? আওয়ামীলীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা এইটার সিদ্ধান্ত সে নিবে সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে, যেখানে মতামত দিবে ৭১ এর গণহত্যার সাথে জড়িত জামায়াত, আওয়ামীলীগের উপর গ্রেনেড হামলা করা বিএনপি এরা! মানে শিয়ালের কাছে মুরগীর ভবিষ্যত জানতে চাওয়া!

১১. ম্যাজিস্ট্রেট উর্মির বরখাস্তের ব্যাপারে বলতে গিয়ে সে বলে সেটা মূলত আবু সাঈদীকে সন্ত্রাসী বলার জন্য, যেটা পাকিস্তানিরা করতো। ১৫০০ শহীদের (তার হিসাব) যে কারো নামে কটুক্তি নাকি রাষ্ট্রকল্পের উপর আঘাত! অথচ, এদের কাজ কাম টপ টু বটম পাকিস্তানি হানাদারদের স্পিরিটের সাথে মিলে যায়! এরা স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবিরের কর্মী আবু সাইদীকে শহীদ হিসেবে তার কটুক্তিকেও শাস্তিযোগ্য করে ফেলছে। আবার ওইদিক দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নামে অবলীলায় কটুক্তি করে যাচ্ছে, কটুক্তিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যেমন পাকিস্তানের কাছে রাজাকার হলো সাচ্চা দেশপ্রেমিক, বাঙ্গালী গাদ্দার, মুক্তিযোদ্ধা গাদ্দার। আর মৃত রাজাকারও শহীদ!

১২. তার মতে ৭২ এর সংবিধান হলো মূলত মুজিববাদ, চার মূল নীতি হলো মুজিববাদ। এইটার মধ্যে নাকি বর্ণবাদ আছে! সেইটার জন্য নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবলেম হচ্ছে! কী বর্ণবাদ? প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতি কি হবে? তার প্রশ্নে সে বলে এই ধর্মনিরপেক্ষতা নাকি আওয়ামীলীগের ধর্মনিরপেক্ষতা! তাহলে তাদের ধর্মনিরপেক্ষতা কী? দিনের বেলায় পাহারা দিয়া, রাইতের বেলা মন্দির ভাংচুর করা? পাকিস্তানের মত তারা ধর্মনিরপেক্ষতা চায়? স্পষ্ট করে নাই। এইগুলাই হইলো তাদের গ্রে এরিয়া এবং শয়তানির জায়গা! গণতন্ত্রও নাকি লীগের ব্যাখ্যায় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রও নাকি লীগের সমাজতন্ত্র! তাহলে তাদের গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এগুলার ব্যাখ্যা কী হবে? সে আবার বলছেন ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে, কিন্তু মূলনীতিতে থাকতেই হবে এমন না। তাইলে সরাসরি স্বীকার করলেই তো হয়! মূলনীতিতে থাকলে এতো ভয় কীসের? আবার যখন প্রশ্ন করা হইলো যে মূলনীতি ঠিকই থাকবে এবং তার প্রত্যেকটার ব্যাখ্যাও থাকবে কিনা, যে গণতন্ত্র বলতে কী বুঝি, জাতীয়তাবাদ বলতে কী বুঝি এমন? জবাবে বলে এইটার আলাদা করে ব্যাখ্যা না থাকলেও সেটা কন্সাল্টেড থাকবে! আসলে কী বুঝাইলো?

৭২ এর সংবিধানে কি কন্সাল্টেড ছিলো না? শেখ মুজিব একা একা লেইখা ফালাইসে? তার মতে নতুন জাগরণ হয়েছে, তাই পুরান জিনিস দিয়ে এর চাহিদা মেটানো সম্ভব না। আবার বলতেসে কার্ফিউর সময় ৭১ এর একটা বই পড়ছিলো, সেটারও অনুভুতি একই। তাই ৭১ আর ২৪ প্রাসঙ্গিক, কিন্তু ৭২ এ আওয়ামীলীগ একটা দুর্ঘটনা ঘটায়া গেছে, সেটা হলো সংবিধান!

কতবড় উজবুক হলে মানুষ এমনটা বলতে পারে? ৭১ এর ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হলো, সংবিধান কমিটিও দেশের বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞ যারা আসলে ৭১ এরও আগে থেকেই এর প্রণয়ন কাজে হাত দিয়েছিলো। নাহলে জাস্ট একবছরে একটা সংবিধান করে ফেলা এটা সম্ভব না। তো ৭১ এর সবকিছু ওকে, কিন্তু দুই মাস পর থেকে শুরু হওয়া কাজ কোনটাই ঠিক না! সেগুলা সব আওয়ামী অপকর্ম! সে আসলে ইতিহাস থেকেও যারা আওয়ামীলীগ মুছে ফেলতে চায়, তাদের মুখপাত্র। তার এলার্জী মুক্তিযুদ্ধে ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সকল ইতিহাসে। জাস্ট ওগুলা বলতে পারতেসে না ডলা খাবার ভয়ে বইলা আওয়ামীলীগের ঘাড়ে বন্ধুক রাখতেসে, যেন সেগুলা ইরেজ করার উসিলা পাওয়া যায়। সে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা রিডীং ফর প্লেজার না, সেটা রিডিং ফর স্পিচ, রিডীং ফর অবজেক্টিভ। বারবার বলে পোস্ট ইডিওলজিকাল স্টেইজে আছি। তো কোন ইডীওলজির পোস্ট, আর নতুন ইডিওলজিটাইবা কী? তার চাহিদাই বা কী?

আইডিওলজি নাই, তাই ইডিয়টিক আইডিওলজিকেই কি ‘ইডিওলজি’ বলছেন উজবুকটা? বামেদের মতো সাবঅল্টার্ন ডিস্কোর্স এইসব বইলা একটা ডিসেপশন করার চেষ্টা? সে তার ভাষায় ফ্যাসিস্ট ব্যাতীত সকলকে নিয়ে একটা ঐকমত্যের সংবিধান করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, সে ন্যাশনাল রিকন্সিলিয়েশন, যেটা লীগ করে যেতে পারে নাই। যেটাকে লীগের ব্যার্থতা বলা হচ্চে, সেই রিকন্সিলিয়েশন করা হবে! কীসের রিকন্সিলিয়েশন? কার সাথে রিকন্সিলিয়েশন? যেটা আওয়ামীলীগ করে যেতে পারে নাই? তার ইমিডিয়েট আগে বলসে, আগের সংবিধান নাকি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদেরকে কোন পলিসি প্রক্রিয়াতে ইনভল্ভ করতে পারে নাই, এবার সেটা করবে! তার মুসলমান আসলে কারা? জামায়াত আর হিজবুতী? স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মাশ্রয়ী মৌলবাদি অপশক্তি?

#ATeam 20241044

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *