৭ মার্চ সম্পর্কে কী বলে গেছে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম?

“পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক মহা সমাবেশ হয়। মঞ্চে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানো হয়। ঐ পরিস্থিতি ও পরিবেশে উক্ত সমাবেশে উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাসহ সকল মহলের লোকই বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত হয়। শেখ সাহেব সেই জনসমুদ্রে ২৫শে মার্চ আহূত গণপরিষদ অধিবেশনে যোগদান প্রসঙ্গে এমন চারটি শর্ত আরোপ করেন, যা পূরন না হবারই কথা। অর্থাৎ, শেখ মুজিব এ বৈঠকে যোগদান না করার পরোক্ষ ঘোষণা দিলেন।”

“এ সমাবেশেই শেখ মুজিবের প্রখ্যাত ভাষণের শেষ উচ্চারণ ছিলো, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” … বলা বাহুল্য, পূর্ব-পাকিস্তানে ইয়াহইয়া খানের শাসন সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। বেসরকারিভাবে শেখ মুজিবের শাসনই চলতে থাকে।”

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ সম্পর্কে উপরের উদ্ধৃতি দুটি নেয়া হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে। না, ঠিক হলো না। প্রখ্যাত সাহিত্যিক শাহরিয়ার কবিরের লেখা থেকে। না, তাও নয়। ড. জাফর ইকবালের কলাম থেকে। উহু। তাহলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে। না, তাও হয় নি। উপরের উদ্ধৃতি দুটির উৎস যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের নিজের লেখা পুস্তক “জীবনে যা দেখলাম” থেকে।

অবশ্যই গোলাম আযমের বই বাংলাদেশের ইতিহাসের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য নয়। সে তার নিজের ও জামায়াতের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে গেছে পাতায় পাতায়। তারপরও ৭ই মার্চ বিষয়ে এই লেখার কয়েটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ –

  • গোলাম আযমের লেখা অনুসারে ৭ই মার্চেও মঞ্চে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানো হয়। বিএনপির একাংশ এবং জামায়াত যে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে ক্যাচাল করে, তাদের কাছে প্রশ্ন, ৭ই মার্চ স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানোর সময় জিয়া কোথায় ছিলেন?
  • ৭ই মার্চের সমাবেশে বাংলার আপামর সাধারণ মানুষই নয়, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারাও অংশগ্রহণ করেছিলো। ৭ই মার্চের বিপক্ষে এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতেরও কোনো কর্মসূচি ছিলো না। ৭ই মার্চ ছিলো বাংলাদেশ নাম ভূখণ্ডে অবস্থিত সকল মানুষের ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার পতাকা ওড়ানোর দিন (এর আগে ২রা মার্চেই প্রথম ওড়ানো হয়), বঙ্গবন্ধুর (গোলাম আযমের শেখ সাহেব) ডাকে যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুত হওয়ার আহবান।
  • গোলাম আযমের বক্তব্য অনুসারে, শেখ মুজিব ২৫শে মার্চের গণপরিষদে যোগ দিতে চাননি। টেকনিক্যালি এমন সব শর্ত দেন, যেগুলো পাকিস্তানের পক্ষের পূরন করা সম্ভব ছিলো না। তাহলে জামায়াত আজ যে ফতোয়া দেয় যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনটা চাননি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, তারা কি তাদের গুরুর বই পড়েই দেখে না?
  • যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ভাষ্যমতে, ৭ই মার্চ থেকেই “পূর্ব-পাকিস্তানে” বঙ্গবন্ধুর শাসন চলতে থাকে। আমার প্রশ্ন হলো, গোলাম আযমের শিষ্যরা যে আজ বয়ান দিচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় শেখ মুজিব অনেকের মধ্যে একটি চরিত্রমাত্র, কিন্তু প্রধান চরিত্র না। অর্থাৎ, তার সমতুল্য আরো বেশ কয়েকটি চরিত্র ছিলো। তাদের ফেবারিট কয়েকটি নাম হলো তাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরুল এবং ওসমানী। অর্থাৎ, শেখ মুজিবকে বাড়তি কোনো গুরুত্ব দেয়া যাবে না। কিন্তু টাদের মহাগুরু তো বলছে ভিন্ন কথা। “শেখ মুজিবের শাসন” চলার কথা। পুরো আলোচনায়ই শুধু “শেখ সাহেব”। বাকি চরিত্ররা কোথায়?

স্পষ্টতই বাংলাদেশের স্বাধীনতায় শেখ মুজিবের অবদান ছিলো অনন্য। তাঁর সাথে তুলনীয় কেউ ছিলো না। এটাই সত্য। এই সত্য স্বীকার করলে তাজউদ্দিন, ওসমানীদের অসম্মান করা হয় না, কমবেশি ২ লাখ সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার অবদানকেও খাটো করা হয় না। ছোট করা হয় না ৩০ লাখ শহীদের জীবন কিংবা ৪ লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগকেও। কিন্তু, শেখ মুজিব একা নন, স্বাধীনতার সংগ্রামে ১৯৭১-এ তার সমকক্ষ আরো অনেকে ছিলেন, এই আলাপ তোলা হয় স্বাধীনতার ইতিহাসকে কলুষিত করতে।

ড. ইউনূস, তার বস মাহফুজ আলম এবং তার নিয়োগকর্তা জামায়াতের চ্যালাচামুণ্ডা ও ভাড়া করা টকশোজীবীরা ৭ই মার্চকে বাতিল করার আগে, বঙ্গবন্ধুকে বাতিল করার আগে তাদের আদর্শিক গুরু যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বইটই একটু পড়াশুনা করে নিলে ভালো হয়। অবশ্য গোলাম আযমের বইতেও যদি রিসেট বাটন পুশের কোনো মেটিকুলাস প্ল্যান থাকে, ক্ষমতা ও সময়ের প্রয়োজনে তারা গোলাম আযমকেও অস্বীকার করতে চায়, তাহলে অবশ্যই ভিন্ন আলাপ।

#ATeam 20241045

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *