হালাল সুদের দেশে

রাজ দরবারে প্রবেশ করলেন তথ্য মাশায়ের নাইদু। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। দেখেই অনুমেয়, ডিমের খবর ভালো না। স্বভাবসুলভ চাপা কন্ঠে মিনিমিন করে বললেন, পনেরো টাকা প্রতিটা।

রাজা মহাশয় সিংহাসন ছেড়ে সটান দাঁড়িয়ে হিজুকে বললেন, মাস্টারমাইন্ড, ক্যালকুলেটরটা দাও। হিজু ক্যালকুলেটর এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, রিসেট বাটন চাপবেন স্যার?

রাজা হিজুর কথায় একটু বিরক্ত হলেও ঠোটের কোনায় মুচকি হাসি বজায় রেখে ক্যালকুলেটর টিপতে লাগলেন। আর বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকলেন, ১০০ তে ২০ হইলে, ১৫ তে দাঁড়ায় গিয়া তিন! OMG, কিস্তিমাত!

হিজু: এটা কিসের হিসাব স্যার? ইনক্লুসিভ কিছু?

রাজা: না, এক্সক্লুসিভ! একেবারেই এক্সক্লুসিভ!

হিজু: খুলে বলুন স্যার। মুজিববাদ ভ্যানিশ করার ফরমুলা জাতীয় কিছু?

রাজা: রাখো তোমার মাস্টারমাইন্ডগিরি! এসব রিসেট আর ভ্যানিশ ফরমুলা দিয়া তুমি আর পাবলিক ক্ষ্যাপাইও না। আমাকে এবার আমার অপ্রতিরোধ্য ফরমুলা এপ্লাই করতে দাও।

দুইজনের কথাবার্তা শুনে নাইদু পাশে যেয়ে দাড়ালেন,

নাইদু: আপনার ফরমুলাটা বলেন স্যার। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে! এক ডিমের বাজারই আমাদের সংস্কারের বাজার শেষ করে দিচ্ছে!

রাজা: শুনো, আমার এক্সক্লুসিভ ফরমুলা ভেরি ইফেকটিভ হবে বলে আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি।

নাইদু: আমিও বিশ্বাস করি। আর বিশ্বাস করি বলেই তো আপনাকে জাতির পিতা বানানোর রাস্তায় এগুচ্ছি।

রাজা: শুনো, ফরমুলা ইজ সামাজিক বিজনেজ উইথ ক্ষুদ্রঋণ! প্রতি ডিমের জন্য ১৫ টাকা ঋণ প্রদানের ঘোষনা দিয়ে দাও। ২০% হারে সুদ ৩ টাকা। ১৫ টাকায় বছর শেষে সুদাসলে ১৮ টাকা মাত্র, ভেরি এফোর্ডেবল! কি বলো?

নাইদু: ফ্যান্টাস্টিক স্যার! আমি বিমোহিত, আপ্লুত! কিন্তু কিস্তির পরিমাণ কত বলবো স্যার?

রাজা: ১২ মাসে ১২ কিস্তি। প্রতি কিস্তি কত পড়ে?

রাজা মহাশয় হিজুর দিকে ক্যালকুলেটর এগিয়ে দিয়ে কিস্তির হিসেব বের করতে বললেন। হিজু ক্যালকুলেটর টিপে জানালেন, দেড় টাকা!

রাজা: রিয়েলি? ফ্যান্টাস্টিক, ভেরি এফোর্ডেবল।
হিজু: জ্বী স্যার! কিন্তু…

রাজা: আবার কিন্তু কেন?
হিজু: এতে কি মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হবে?

রাজা: না হয়ে পারে? যেই মাত্র ১২ কিস্তির বোঝা মাথায় চাপবে, ক্ষোভ ভুলে নিজের বাপের নামও ভুলতে বাধ্য। এজন্যই এর নাম সামাজিক বিজনেস, শান্তির মন্ত্র!

হিজু: মারভেলাস স্যার। এ জন্যই আপনি ইউনিক!

নাইদু মাথা চুলকিয়ে বললেন, কিন্তু এতে কি ডিমের সরবরাহ বাড়বে? দেশের অধিকাংশ মুরগী লীগ হয়ে ফিরছে! সরকারকে বিপদে ফেলতে ডিমপাড়া কমায়া দিছে!

হিজু: কোনও ব্যাপার না! লাইভ করে পোলাপাইনরে রাজু ভাস্কর্যে আসতে বলে দিলেই হয়!

রাজা: মাস্টারমাইন্ড, মাথা ঠান্ডা করো। মুরগিদের ক্ষ্যাপানো যাবে না, ব্যবসা লাটে উঠবে!

হিজু: তাহলে কি করবো স্যার? মুরগীর রিসেট বাটন টিপে দেই? সব মুরগী যুবতী হয়ে যাবে, গ্যারান্টেড! প্রোডাকশন ১০০% নিশ্চিত!

রাজা: আবার রিসেট বাটন?!! তোমার এই বুদ্ধি ধরে একবার বেগম সাহেবার রিসেট বাটনে পুশ করছিলাম মিয়া! যুবতী হওয়া দূরে কি বাত, বউ এখন আমারেই চিনে না!

হিজু: সরি স্যার। আই এম এক্সট্রিমলি সরি।কিন্তু স্যার আগের বিদেশী বেগম সাহেবান ভাগলেন কেন? সেটাও কি আমার রিসেট বাটন.. ?

রাজা কটমট করে হিজুর দিকে তাকালেন। পরিস্থিতি থমথমে। তথ্য মাশায়ের নাইদু পরিস্থিতি ইজি করার চেষ্টায় মূল আলোচনায় ফিরলেন,
নাইদু: তাহলে এখন ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর উপায়?

রাজা: ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি? সামাজিক বিজনেসের সুবিধাই হলো অল-ইন-ওয়ান, মুশকিলে আহসান! একবার একটা ডিমের ঋণে পাবলিককে জড়াতে পারলে কিস্তি শোধের আগে দ্বিতীয় ডিমের চিন্তা মাথাতেই আসবে না। হিসেব করে দেখো, এক ডিমের চাপেই বারো মাস, হা হা। ডিমান্ড এমনিতেই কমে যাবে!

নাইদু: যাক বাবা, ডিমের একটা সংস্কার হলো তাহলে। কিন্তু সবজির কি হবে?

হিজু: খুবই সহজ! সবজিকেও একই সামাজিক ফরমুলায় ফেলে দিতে হবে, নাকি বলেন স্যার?

রাজা: ইয়েস মাই বয়, ইউ আর রাইট! কত্ত সহজে বুঝে ফেলো, এজন্যই তুমি মাস্টারমাইন্ড!

হিজু: তবে স্যার আমি কিন্তু এক্সাইটেড! এই ফরমুলায় জাতি আপনার এই ঋণ (ক্ষুদ্র) কখনোই শোধ করতে পারবে না। কৃতজ্ঞতা ভরে আপনার ঋণ আজীবন স্মরণ করবে। কি অসাধরণ! আপনিই হবেন জাতির অরিজিনাল মালীক, খাস পিতা! কিন্তু…

রাজা: কিন্তু কি?

হিজু: ঋণের সুদ নিয়ে হারামের প্রশ্ন আসতে পারে। এটারে হালাল করার ব্যাখ্যা কিভাবে দেবো?

রাজা: ডিম কি হারাম?

হিজু: না স্যার, হালাল

রাজা: তাহলে ডিমের উপর সুদ হালাল নাকি হারাম?

হিজু: বুঝছি স্যার।

রাজা: এতেও যদি কাজ না হয়, আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটা প্রজ্ঞাপন জারী করে বলে দাও.. সব ধরনের সুদ হালাল!!

#ATeam 20241046

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *