রিজার্ভে হাত দেয়নি সরকার! হাওয়া দিয়ে চলছে সব?
গত দুই মাসে (আগস্ট+সেপ্টেম্বর) রিজার্ভে হাত দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। তাহলে কি হাওয়া থেকে চলছে দেশ? আসুন জেনে নেই,
দেশের কল্যানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এসেছেন শেখ হাসিনার সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ১১ সেপ্টেম্বর তার সরকারের ১ মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে জানান, শেখ হাসিনা সরকার ৪৬ বিলিয়ন ডলার পাইপ লাইনে রেখে গিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা এসময় জানান, তিনি আরও অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চান। রেমিটেন্স প্রবাহে বাঁধা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, যানবাহন ভাংচুর, চলাচলে বাঁধাসহ প্রায় মাসব্যাপী শাটডাউনের নামে দেশে লাগাতার নাশকতা স্বত্তেও শেখ হাসিনার সরকার আগস্টে ২০ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ রেখে যান।
বর্তমানে অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ, স্থবির। যা কিছু চলছে সব শ্লথ গতি নিয়ে। তাহলে, পাইপলাইনের ৪৬ বিলিয়ন ডলারের পরও কেন অতিরিক্ত ঋণ চাই? যেখানে শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধের শর্তে মাত্র ২ বা ২.৫ শতাংশ ইন্টারেস্ট রেটে ঋণ পেতো সেখানে অনির্বাচিত-অবৈধ ইউনূস সরকার অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার কোন শর্তে নিতে চাইছে? খোঁজ নিয়ে দেখুন, কী স্বার্থ তার?
তার নিয়োগকৃত অবৈধ গভর্নর আরেক কাঠি সরেস, তিনি বলছেন তিনি চান ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ! হিসাব কিতাবের আগে কিছু সাম্প্রতিক তথ্য জেনে নেই,
➤ আগস্ট ওপেনিং Reserve (IMF) : ২০.৩৯৩ বিলিয়ন ডলার
➤ আগস্ট ক্লোজিং/সেপ্টেম্বর ওপেনিং Reserve (IMF) : ২০.৪৭৫ বিলিয়ন ডলার
➤ সেপ্টেম্বর ক্লোজিং/অক্টোবর ওপেনিং Reserve (IMF) : ১৯.৮৬১ বিলিয়ন ডলার
আগস্ট – সেপ্টেম্বরের ইনকাম: (মোট: ৪.৬২৫ বিলিয়ন ডলার এর বেশি)
➤ আগস্ট মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে: ২.২২ বিলিয়ন ডলার
➤ সেপ্টেম্বর মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে: ২.৪০৫ বিলিয়ন ডলার
➤ বাংলাদেশ ব্যাংক লোকাল মার্কেট থেকে ডলার কিনেছে: (তথ্য প্রকাশ করছে না)
ধরেন, রেমিটেন্স প্রবাহের হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ১ মিলিয়ন ডলার, বন্যার্তদের জন্য পাঠানো প্রবাসীদের অর্থ এসব বিবেচনা নাইবা করলাম।
আগস্ট – সেপ্টেম্বরের খরচ: (মোট: ৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার)
➤ মোট বকেয়া পরিশোধ: ২ বিলিয়ন ডলার (প্রায়)
➤ Asian Clearing Union (ACU) for import bills পেমেন্ট: ১.৩৭ বিলিয়ন ডলার
এবার হিসাব করেন:
বিল পরিশোধের আগে, সেপ্টেম্বর ক্লোজিং/অক্টোবর ওপেনিং রিজার্ভ এর পরিমাণ: ২০.৩৯৩ + ৪.৬২৫ = ২৫.০১৮ বিলিয়ন ডলারে বেশি।
বিল পরিশোধের পরে, সেপ্টেম্বর ক্লোজিং/অক্টোবর ওপেনিং রিজার্ভ এর পরিমাণ: ২৫.০১৮-৩.৩৭ = ২১.৬৪৮ বিলিয়ন ডলারে বেশি।
কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক এর মতে- সেপ্টেম্বর ক্লোজিং/অক্টোবর ওপেনিং রিজার্ভ (আইএমএফ): ১৯.৮৬১ বিলিয়ন ডলার।
এবার বলুন, বাকি ১.৭৮৭ বিলিয়ন ডলারে বেশি কোথায় খরচ করলো? বাংলাদেশ ব্যাংক লোকাল মার্কেট থেকে কী পরিমাণ ডলার কিনেছে গত দুই মাসে। সেই ডলারইবা কই? আর তাহলে রিজার্ভে হাত দেওয়া হলো না কীভাবে?
রেমিটেন্স যদি বাড়ে আর রিজার্ভে হাত যদি নাই দিবো, তাহলে সরলভাবে শেখ হাসিনার সরকারের রেখে যাওয়া রিজার্ভ থেকে তো বৃদ্ধি পাবে, তাই না? নাকি, গভর্নরের “ট্যাঙ্কি আমার ছেদা হইয়া গেছে” গানের মতো অবস্থা? গত সরকারের রেখে যাওয়া রিজার্ভ থেকে পরিমাণ কমলো কেন?
আসুন একটু ভিতর দিকে যাই, বাংলাদেশে রেমিটেন্স আয়ের সবচেয়ে বড় খাত গার্মেন্টস সেক্টর। বিগত দুইমাসে শুধু গাজীপুর জেলায় ৫৫টি উৎপাদনমুখী কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দেশী কোম্পানিগুলোর বাইরে, বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এর তালিকায় রয়েছে চীন, ভারত, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কিছু বিনিয়োগকারী। কাঁচামাল আমদানী না করলে ব্যাংকগুলোর ডলার লাগবে কীসে?
শুধু কি গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা, সংকট চলছে?
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২ মাসে (আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর) ৭২টি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আগস্ট মাসেই রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৪৬টি কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আর পরের মাস সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়েছে ২৬টি কোম্পানি। এ ছাড়া জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ৮৩টি কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে আরও ১৬০টির মতো কোম্পানি বন্ধের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। অর্থ্যাৎ, উৎপাদন ক্রমেই নীচের দিকে যাচ্ছে। আর বানিজ্য চলে যাচ্ছে দেশের বাইরের বিকল্প বাজারে।
লাখ লাখ লোক বেকার হয়ে রাস্তায় বসে গিয়েছে, শত শত শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বড়লাট ইউনূস আর তার গভর্নর রিজার্ভ নিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন!
রিজার্ভে হাত না দিলে রিজার্ভ থাকতো প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার; কিন্তু আছে ১৯.৮৬১ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ কমলো কেন, এর আছে কি জবাব?
#ATeam 20241048