৫ আগস্ট ২০২৪ ব্যাংক ক্লোজিংয়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে (একাউন্ট নাম্বার ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩) ২২২ কোটি টাকা ছিলো। একাউন্টটি ১৮ মে ১৯৯৫ সালে খোলা। ৮ আগস্টের অবৈধ ক্ষমতাগ্রহণের পর এই একাউন্টের নাম পরিবর্তন করে ‘প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যান তহবিল’ করা হয়।
২১ আগস্ট বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের ৫ জেলা প্লাবিত হলে সরকারি হিসাবে সেখানে প্রায় ৫৭ লক্ষ লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে সারাদেশের মানুষ মুক্ত হস্তে যে যার যার সামর্থ্য অনুসারে দান করেছেন। এর বাইরে বড় একটি দানের টাকা এসেছে জোরপূর্বক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে মানুষের নাভিঃশ্বাস, সরকারি কর্মচারিদের ন্যায্য দাবী ৯ম পে-স্কেলের খবর নাই। মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলেও করুণ অবস্থা সেখানে, প্রায় ১৫ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির ১ দিনের বেতনের অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে ‘প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যান তহবিল’ এ বন্যার্তদের সাহায্যের নামে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকেও অনুরূপ অনুদান দেয়া হয়েছে ঐ ত্রাণ তহবিলে। বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে ২৩ কোটি টাকা, এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সিএসআর হিসাবে বন্যার্তদের জন্য কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন। ত্রাণের টাকা লোপাটের অভিযোগের মুখে মাসব্যাপী অডিট নাটক করে ৮ কোটি টাকা টিএসসি থেকে সমন্বয়করা অক্টোবরে এই ত্রাণ তহবিলে দিয়েছে বলে জানা যায়। এ পর্যন্ত মেনে নেয়া যায়, যদি এই অর্থ আদোতেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হতো!
তাহলে অনুদানের টাকা কী করা হয়েছে?
আপনাদের মনে আছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা? টাকা এসেছে এতিমের জন্য সেই টাকা চলে গিয়েছে ব্যক্তি একাউন্টে। ইউনূসের বন্যার্তদের জন্য তোলা টাকাও তার ব্যতিক্রম নয়।
আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের বাইরে কথা বলি না। আসুন দেখি, বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কী বলছে। ৬ অক্টোবর সিপিডি জানায়, বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে যে অর্থ আছে তার পুরোটা বন্যার্তদের দিয়ে দিলেও জনপ্রতি ১০০০ টাকার ক্ষতিপূরণ হবে না। যেখানে সিপিডির মতে, বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ এর কমপক্ষে ২৫ গুণ।
অপরদিক, ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ, আসিফ, সমন্বয় হাসনাত, সারজিস, নুসরাত যারা ১০ হাজার টাকার ফোন ব্যবহার করতে হিমশিম খেতো, যারা খুবই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা তারা রাতারাতি ইউরোপ-আমেরিকা ট্যুর, আড়াই-তিন লাখ টাকার ফোন ব্যবহার, বিলাসী জীবন-যাপন, দেশব্যাপী সফর ইত্যাদি কার্যক্রমের অর্থ কোথা থেকে পাচ্ছে, সে প্রশ্ন কিন্তু এসেই যায়।
ক্ষতির পরিমাণ যেখানে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সরকারি অনুদান পেলো কত? আর অনুদান যারা তুললো তারা নিলো কত?
এক কথায় বলতে গেলে আপনাদের দানের টাকা ইউনূসের ব্যবসায় লাগানো হয়েছে। বুঝলেন না তো? খোলাসা করছি। এই ড. ইউনূস যেমন গ্রামীন ব্যাংকে আসা নোরাড ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার টাকা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সামাজিক ব্যবসার নামে ব্যাঙের ছাতার মতো কোম্পানি খুলেছে, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। মূলত, কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে ইউনূস এমন অসংখ্য কোম্পানি খুলে এধার কা মাল ওধার করে আসছে। মনে করে দেখুন, ইউনূস বেআইনিভাবে ক্ষমতা নেয়ার আগেই তার ৬৬৬কোটি টাকার কর ফাঁকি মামলাকে ডিপ ফ্রীজে পাঠিয়ে দিয়েছে।
লোক দেখানো, কয়েক’শ ট্রাক ত্রাণ, কিছু ব্যক্তি ও বেসরকারি ফাউন্ডেশনের তৎপরতার বাইরে আপনি সঠিক হিসাব পাবে না। আসুন কিছু হিসাব মিলাই। আপনাদের মনে এই প্রশ্ন জাগ্রত হয় না, যেখানে ইউনূস নিজেই প্রধান উপদেষ্টা সেখানে তিনিই সভাপতি হয়ে ফাউন্ডেশন খুলে সেখানে ১০০ কোটি টাকা কেন সরালেন? কারণ, ইউনূস জানে যে তার অবৈধ ক্ষমতা যেকোন সময় চলে যাবে। তাই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল(যেটা এখন প্রধান উপদেষ্টার তহবিল নাম করা হয়েছে) থেকে নিজের আয়ত্তে কিছু টাকা সরিয়ে নিলো। এর আরেকটা সুবিধা হলো, ভুয়া অডিট করে নিজেদের কিছু বেকার লোকজনের মাধ্যমে খরচ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা। যেটা রাষ্ট্রীয় একাউন্ট থেকে বিভিন্ন সংস্থাকে এলার্ট না করে করা প্রায় অসম্ভব।
২৪ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি, মীর মাহবুবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামের নতুন এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। কোষাধ্যক্ষ করা হয় কাজী ওয়াকার আহমাদ নামের এক ব্যক্তিকে। এর অন্যান্য সদস্য হলেন, ইউনূসের ঘনিষ্ঠ Grameen Distribution Ltd. এর চেয়ারম্যান নূরজাহান বেগম (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা), উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, ছাত্র উপদেস্টা নাহিদ ও আসিফ।
২১ অক্টোবর কিছু রদবদল করা হয় এই দোকানে। প্রধান নির্বাহী হন মীর মাহবুবুর রহমান এবং তার সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হয় ছাত্র সমন্বয়ক সার্জিস আলোমকে। ২২ আক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, “সরকারি অনুমোদন পেল জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন”। অর্থ্যাৎ, সরকারিভাবে এতদিনে দোকানের বৈধ কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। তাহলে এতদিন কীভাবে চলছিলো? ১০ সেপ্টেম্বর সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক চিঠি দিয়ে চলছিলো এর কার্যক্রম। যাতে অন্যান্য শর্তের পাশাপাশি একটি শর্ত হচ্ছে, ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ পরিপন্থী ক্ষুদ্রঋণ/সঞ্চয়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।
এখন আমরা যদি ফিরে যাই একাউন্টে। ১০ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক রমনা কর্পোরেট শাখায় একটি ‘সঞ্চয়ী হিসাব’ খোলা হয় JULY SHAHEED SMRITY FOUNDATION নামে, যার একাউন্ট নাম্বার ৪৪২৬৩০১০২৮৬৭০। ১৯ সেপ্টেম্বর আপনাদের দেয়া বন্যার্তদের ত্রাণের টাকা হতে ১০০ কোটি টাকা এই জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। ট্রান্সফারের পর প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলের স্থিতি দাঁড়ায় ৪৬৫ কোটি ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৯৪৯ টাকা। অথচ, বন্যার্তদের সে ত্রাণের টাকা দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনা বন্যার শঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন ২ জুলাই, ২০২৪। সে লক্ষ্যে ২২২ কোটি টাকার উপরে তার ত্রাণ ও কল্যান তহবিলে রেখে যান। সেই অর্থটুকুও ইউনূস দেয়নি বন্যার্তদের।
এবার আসুন, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের একাউন্টে। ৩ অক্টোবর ২ টি চেকে মোট ১০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয় এই একাউন্ট থেকে। চেক নং SQ 8706025 এ তিন কোটি এবং চেক নং SQ 8706026 এ ৭ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। একাউন্টের স্থিতি দাঁড়ায় ৯১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এবার আসুন দেখি টাকা তুললো কত আর মানুষ পেলো কত?
৩ অক্টোবর ১০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হলেও, ৬ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, “এর মধ্যে ৯১ জন আহত ও একজন শহীদের পরিবারকে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।” প্রতি সপ্তাহে তারা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে সহায়তা প্রদান করবেন বলেও জানানো হয়।
এক সপ্তাহ পরে, ১৭৬ জন হতাহতকে রোববার (১৩ অক্টোবর) মোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৪২ হাজার টাকা সহায়তা করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।
অর্থ্যাৎ, ২০ দিন আগে ১০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উঠালেও বিতরণ হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা!
এছাড়া, এর মাঝে ঘোষণা এসেছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি নিহত পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলোম ১৭ অক্টোবর জানিয়েছেন তিনি আলাদাভাবে ৩০ লক্ষ টাকা করে প্রতি নিহতের পরিবারক সরকারি অনুদান দিবেন! কোথা থেকে দিবেন? সেই যে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে থাকা বন্যার্তদের জন্য দেয়া মানুষের টাকা এবং শেখ হাসিনার সরকারের রেখে যাওয়া টাকা, অবশ্যই সেখান থেকে।
এবার বুঝলেন বন্যার্তদের ত্রাণের টাকা আর প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলের কেমন নয়-ছয় চলছে? ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে টিএসসিতে তোলা বন্যার জন্য ত্রাণের যে ৮ কোটি সে টাকার শেয়ার হিসাবেই সার্জিস এসেছে জুলাই ফাউন্ডেশনে। এ যেনো ত্রাণের টাকায় ফাউন্ডেশনের পরিচালক পদ ক্রয়! সার্জিস ভালো দিচ্ছে লুটের সার্ভিস।
কারো সন্দেহ থাকলে, তারিখ ধরে উপরের হিসাব নাম্বারের ট্রানজেকশন চেক করে দেখতে পারেন আমরা মিথ্যা বলতেছি কিনা। আর সময় থাকতে আপনারাই ঠিক করেন, এই লুটেরাদের কী করা উচিৎ।
#ATeam 20241052