মেটিক্যুলাসলি বলদ বানানোর পাঁয়তারা

সরকারি চাকরিতে বয়সের প্রবেশসীমা সবার জন্য ৩৫ হবে এটা ঠিক হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু কতবার বিসিএস দেওয়া যাবে সেটা নিয়ে কোনো কথা আগে উঠে নাই। ৩৫ যদি নাও হয় সেটা যে ৩৩/৩৪’র নিচে নামবে না তা এই লাইনের সকলেই নিশ্চিত ছিলো। তাহলে মাঝখান দিয়ে কী এমন ঘটলো যে সরকারি চাকরিতে বয়সের প্রবেশসীমা ৩২ করা হলো এবং ৩ বারের বেশি বিসিএস দেওয়া যাবে না এমন আজগুবি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলো

আপনাদের কি মনে হয় এই সরকারের সবাই গাধার বাচ্চা? অনেক ক্ষেত্রে হয়তো তাই। কিন্তু, যখন এই বিসিএস আর সরকারি চাকরি নিয়ে তেনা পেচিয়ে মেটিক্যুলাস প্ল্যান তৈরি করে আগের সরকারকে নামানো হলো তখন এরকম ক্রিটিক্যাল মুহূর্তে এই ইস্যুতে এমন সিদ্ধান্ত গাধার বাচ্চারাও নিবে না।

তাহলে আসলে কাহিনীটা কী? কাহিনী হলো “প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে নাই” মহামান্য রাষ্ট্রপতি এইটা বলার পর এই সরকারের দোসরেরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতেই চাপে পড়ে গিয়েছে। তাদের দেশে ক্ষমতার উৎস হলো সমন্বয়ক (বিদেশে আমেরিকা) নামের ঠ্যাঙারু বাহিনী। এই সমন্বয়কপালের ফাঁপর ছিলো যে তাদের পেছনে লক্ষ লক্ষ ছাত্র আছে। কিন্তু, এই আশাতে এই অবৈধ সরকার তাদের দিয়ে যখন বঙ্গভবন ঘেরাও করাতে গেলো তখন হুট করে আবিষ্কার করলো যে এই সমন্বয়কদের পেছনে আসলে আক্ষরিক ভাবেই দুইশ লোকও নাই। এই জন্য তারা পিছিয়ে আসলো, যা কিনা তাদের জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক পরাজয়।
তখনো ছাত্রলীগ কোনোভাবেই সিনারিওতে ছিলো না। হুট করে পাঁচদফা দাবি উঠলো, সেখানে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি করা হলো একদিনের মাথায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধও করা হলো।

দেখেন, এই সরকার এখন একদিকে প্রচণ্ড চাপে আছে। অন্যদিকে তাদের দাবিকৃত নিয়োগদাতা সমন্বয়কদের কোনো জনসমর্থনও নাই। রাষ্ট্রপতিকেও সরানো সম্ভব না এই মুহূর্তে। তাই তারা এক অদ্ভুত প্ল্যান সাজালো যাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়।
এইটা খুবই স্বাভাবিক যে, তিন বারের বেশি বিসিএস দেওয়া যাবে না এইরকম আজগুবি সিদ্ধান্ত এই লাইনের প্রতিযোগীরা মেনে নিবে না। কারণ, বয়স ৩০ বছর থাকলেও একজন বিসিএস ক্যান্ডিডেট জীবনে ৭-৮ বার বিসিএসে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই বয়স ৩২ করে তিন বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখা তাদের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। এই ইস্যুতে তারা রাস্তায় নামবেই।

নরমালি একজন ছাত্রের গ্রাজুয়েশন শেষ হয় ২২-২৪ এ, আগের আওয়ামী লীগ আমলে প্রতিবছরই বিসিএস হতো। মে ২০২৪ পর্যন্ত সরকারি শূন্য পদ আছে প্রায় পৌনে ৪ লাখের বেশি। এখন যদি প্রতিবছর পরীক্ষা হয়, যে ছেলে বা মেয়ে ২২ বছর বয়সে গ্রাজুয়েশন শেষ করবে সে ২৫-২৬ বছরে এসেই বিসিএস এর জন্য অযোগ্য হবে। অথচ, আগে সে ৩০ বছর পর্যন্ত ৭-৮ টা বিসিএস ট্রাই করতে পারতো। যোগ্যতার বয়সসীমা মাত্র ২ বছর বাড়িয়ে ৩ বারের শর্ত জুড়ে দিয়ে বিসিএস আরো কঠিন ও জটিল করে দিয়েছে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য। এই সিদ্ধান্ত যে টিকবে না তা এই সরকার ভালোভাবেই জানে, টিকে গেলেও যেসব শিবির ছানা এতদিন বিসিএস হবে না ভেবে পরীক্ষা দেয়নি এবং বয়স চলে গিয়েছে তারা এখন সুবিধা পাবে।

এখন এই আন্দোলন তৈরি হলে সেটার নেতৃত্ব ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের হাতে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক কারণ তারা এখন প্রধান বিরোধী দলে আছে। এজন্য এই বিসিএসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঠিক আগের দিন আউট অব নো হোয়্যার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। সমন্বয়করা এখন এই ইস্যুতে নিজেরাই আন্দোলন দাঁড়া করাবে। অনেকের ব্যক্তিগত স্বার্থের সাথে জড়িত বলে এদের পেছনে বড় একটা লোক সমাগমও হয়তো হবে বা বাধ্য হয়েই অনেকে আসবে। দুই-তিনদিন পর এনজিও সরকার এই দাবি মেনেও নিবে। মাঝখান দিয়ে একটু ফ্রেন্ডলি খুনসুটি হবে আরকি।

ফলে ঘটনা যা ঘটবে, প্রথমত সমন্বয়করা দেখাবে যে তারা ডাক দিলে তাদের পেছনে এখনো লোক দাঁড়ায়। অন্যদিকে, তারা সরকারের অংশ হয়েও সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের স্বার্থে পাশে দাড়াতে পারে। দ্বিতীয়ত, এই সরকারের দাবীকৃত নিয়োগদাতাদের এখনো অনেক জনসমর্থন আছে তা তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। সর্বশেষ, রাষ্ট্রপতি অপসারণ ইস্যুতে ব্যর্থতা ও দেশকে উচ্ছন্নে নিয়ে যাবার জন্য ইউনুসের উপর সৃষ্ট হওয়া তীব্র চাপ প্রশমিত হবে। যার ফলে তারা আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র সাজানোর জন্য কিছুটা ফুসরত পাবে। ছাত্রলীগ যেনো এর ভেতর বাগড়া দিতে না পারে তাই আগেই তাদের অফিশিয়ালি নিষিদ্ধ করা হলো। হিসাব মিললো?

আসলে সবই মেটিক্যুলাস প্ল্যানরে ভাই, মাঝখান দিয়া জনগণরে বানানো হইতেছে মেটিক্যুলাসলি বলদ। এই আরকি।

#ATeam 20241062

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *