বিগত সরকারের টাকা পাচার ও দুর্নীতি নিয়ে এন্টি আওয়ামী লীগারদের চিন্তার শেষ নাই। তারা যে ন্যারেটিভটা দাঁড়া করানোর চেষ্টা করছে তা হলো বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামল ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সময়। তাদের এ ধরণের প্রচারণাকে সত্য প্রমাণিত করতে নানান ধরনের ফুয়েল দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান এনজিওগ্রাম সরকার। এদের এই বয়ানের সত্যটা কতটুকু নাকি তা নিছকই প্রোপাগান্ডা? আসুন দেখা যাক।
প্রথমেই আসা যাক মানি লন্ডারিং প্রসঙ্গে, অর্থ পাচারের সাথে একটা দেশের অর্থনীতির আকার ও দেশটি কতোটা উন্নত এ’দুটো ব্যাপারের সম্পর্ক রয়েছে। এর বাহিরে সরকারের দুর্নীতির মাত্রা অনেক বেশি থাকলে অর্থনীতির আকার ছোট থাকলেও টাকা পাচারের মাত্রা বাড়তে পারে। তখন ঐ দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে না। এছাড়াও নানাবিধ কারণ রয়েছে। ২০১৯ সালের গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি(জিএফআই) এর এক রিপোর্টে দেখা যায় টাকা পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ২য়। মজার ব্যাপার হলো এখানে ১ নাম্বারে রয়েছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক আকারেও বাংলাদেশ ভারতের পরেই অবস্থান করছে। অর্থনৈতিক আকার বাড়ার সাথে সাথে মানি লন্ডারিংও বেড়েছে বাংলাদেশে। তাই এটা ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশের অর্থপাচারের পেছনের কারণ যতোটা না রাজনৈতিক তার থেকেও বেশি অর্থনৈতিক। [১]
আওয়ামী লীগ তার বিগত শাসনামলের শেষের দিকে এসে আদর্শচ্যুত হয়েছিলো। দুর্নীতি ও অর্থপাচারে এই দলটির সম্পৃক্ততা এড়ানোর আসলে কোন পথ নেই। কিন্তু,
এই অর্থপাচারের জন্য নির্দিষ্টভাবে দায়ী কারা?
এনজিওগ্রাম সরকারের আমলে তারা কোন হালে আছে?
অর্থ পাচারে বাংলাদেশের বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থানই বা কেমন?
এই অর্থপাচারের জন্য নির্দিষ্টভাবে দায়ী কারা?
আসলে মানি লন্ডারিংয়ের প্রকৃত তথ্য বৈশ্বিকভাবেই বের করা একটু কঠিন। গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং নিয়ে তথ্য ও রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। তারা এক রিপোর্টে দাবি করে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ৭.৫৩ বিলিয়ন ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।[২]
একই প্রতিষ্ঠান তথ্য প্রকাশ করে, বাংলাদেশ প্রতি বছর বৈদেশিক বাণিজ্যে মিস-ইনভয়েসিংয়ের জন্য হারায় ৮.২৭ বিলিয়ন ডলার।[৩]
এখন এই মিস-ইনভয়েসিং কী? এটির সাথে জড়িত কোন গোষ্ঠীটি?
মিস- ইনভয়েসিং হলো বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি ও রপ্তানিতে লেনদেনকৃত অর্থ বেশি বা কম দেখিয়ে অর্থ পাচার করার প্রক্রিয়া। এই মিস- ইনভয়েসিং আবার দুই প্রকার।
ওভার ইনভয়েসিং- আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হয়। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করে।
আন্ডার ইনভয়েসিং- রপ্তানির সময় মূল্য কম দেখানো হয়। পণ্য রপ্তানির সময়ে যে পরিমাণ অর্থ কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রপ্তানিকারকের পক্ষে বুঝে নেওয়া হয়।
অর্থাৎ জিএফআই’র তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম বটে, কিন্তু মোট অর্থ পাচারের খুব স্বল্প পরিমাণই হুণ্ডির মাধ্যমে যায়। বিভিন্ন দলীয় নেতা ও আমলাদের টাকা পাচারের অন্যতম মাধ্যম হলো হুন্ডি, অন্যদিকে বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এটি মিস-ইনভয়েসিং। আবার জিএফআই এর মতে বাংলাদেশের টাকা পাচারের সিংহভাগই হয় মিস-ইনভইয়েসিং এর মাধ্যমে। অর্থাৎ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বাংলাদেশে প্রধানত মানি লন্ডারিংয়ের জন্য দায়ি।
উন্নয়নশীল দেশের ব্যবসায়ীরা এ কাজটি প্রায়শই করে থাকেন কর ফাঁকি ও অতিরিক্ত ট্যাক্সের হাত থেকে বাঁচার জন্য। দেশ উন্নত হতে থাকলে ধীরে ধীরে এটি কমতে পারে। তাই এই মিস-ইনভয়েসিংয়ের ক্ষেত্রে সরকার কঠোরতা কম দেখালে তা দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পের প্রসার ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোতে। যদিও ব্যবসায়ীগোষ্ঠী সংকট মুহূর্তেও নিবৃত না হয়ে অর্থ পাচার করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে বিপদে ফেলে দেন অনেক সময়ই।
বর্তমান এনজিওগ্রাম সরকারের আমলে তারা কোন হালে আছে?
এই এনজিওগ্রাম সরকার হলো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও এন্টি আওয়ামী লীগার গোষ্ঠীগুলোর একটি ব্লেন্ড। তারা মানি লন্ডারিংয়ের জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা কর্মীদের দায়ী করে আসলেও, যারা মূলত দায়ী তারা কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তেই আছে, এবং এই সরকারের সাথে মিলেমিশেই আছে। এতে আসলে বণিকগোষ্ঠীর খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে না। তাদের মূল লক্ষ্যই থাকে সরকারের সাথে মিশে নিজেদের ব্যবসার প্রসার ঘটানো। যা আখেরে দেশের অর্থনীতির উন্নতিই বয়ে আনে। দুই একজন শিল্পপতিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধরা হলেও অর্থ পাচার নিয়ে এখন আর তেমন একটা রা শোনা যাচ্ছে না এই সরকারের পক্ষ থেকে।ক কিন্তু বিগত সরকার পতনের পরই এই এনজিওগ্রামের দালালদের মূল ন্যারেটিভ ছিলো আওয়ামী লীগের লোকেরা ১৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে ১৫ বছরে।
ব্যবসায়ীরা যারা রাজনীতিবিদ তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে ব্যবসায়ী পরে রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের ভুল পলিসির কারণে তাদের সাংসদ ও সরকারের মন্ত্রীদের একটি বড় অংশ ব্যবসায়ী শ্রেণী থেকেই এসেছিলো। কিন্তু বাংলাদেশে এই ট্রেন্ডের জনক কিন্তু আওয়ামী লীগ নয় বরং যারা এটির জন্য আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করে থাকে সবসময়, বলতে গেলে তারাই এই স্ট্র্যাটেজি প্রথম অনুসরণ করেছিলো।
অর্থপাচারে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানই বা কেমন?
দুর্নীতি আর মানি লন্ডারিং এই দুটি ব্যাপারে মতাদর্শগত দুটি ভিন্ন দল একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে। তাদের দাবিগুলাও স্বাভাবিকভাবেই বায়াজড হবে। তাই আমরা নিউট্রাল প্লাটফর্মকে রেফারেন্স হিসেবে নিতে পারি। যদিও বর্তমান অবস্থায় নিউট্রাল প্লাটফর্ম বলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্ভর করা বেশ কঠিন। স্থানীয় বা বৈশ্বিক প্রভাবে প্রায় সবাইই কম-বেশি পক্ষপাতদুষ্টে আক্রান্ত।
যাই হোক, অর্থ পাচারের ঝুঁকি বিবেচনা করতে বিশ্বে একটি গ্রহণযোগ্য সূচক রয়েছে। যেটির নাম “ BASEL AML INDEX”।
এই প্লাটফর্মটির ২০২৩ সালের রিপোর্টে মানি লন্ডারিং ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪৬ তম ১৫২ টি দেশের ভেতর। স্কোর দশের স্কেলে ৫.৮( ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে স্কোর সমানুপাতিক)। যা বাংলাদেশকে মধ্যম ঝুকির দেশে স্থান দিয়েছে। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো এই সূচকে ভিয়েতনাম ১৯ তম ও চায়না ২৭ তম, ভারতের হিসাব তারা পায় নাই( যদিও জিএফআই’র হিসাবে ভারতে বাংলাদেশের থেকে বেশি অর্থ পাচার হয়)। চায়না, ভিয়েতনাম ও ভারতের অর্থনীতি অত্যন্ত বাড়ন্ত তাই তাদের অর্থ পাচারের পরিমাণও বেশি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে( যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনকার এনজিও সিস্টেমে আর কতদিন বাড়ন্ত থাকে সেটা দেখার বিষয়)। উন্নত দেশগুলোতে এটির ঝুঁকি স্বভাবতই কম, কারণ টাকা পাচারের প্রধান গন্তব্য সেই দেশগুলোই থাকে।[৪]
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিবন্ধে উঠে আসে ২০১৭ সালে এই ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ৮২তম যা ২০২৩ সালে এসে দাঁড়ায় ৪৬তমতে। মজার ব্যাপার হলো এই অবনমনের যাত্রায় ২০১৭ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫.৭৯ যা ২০২৩ এ এসে দাঁড়ায় ৫.৮০ তে। [৫]
অবনমনটি অনেক বড় হলেও স্কোরের পার্থক্য হিসেবে তা সামান্য( মাত্র ০.০১)। অর্থাৎ, অনেক দেশ তাদের অর্থ পাচারে লাগাম টেনে ধরতে পারলেও, বাংলাদেশের অবস্থা ভালোও হয় নি, খারাপও হয় নি তেমন। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ খুব একটা খারাপ অবস্থানেও নেই। যদিও উন্নত রাষ্ট্রের পথে যাত্রা শুরুর সাথে সাথে অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর মতোই সমানুপাতিক হারে অর্থ পাচারের হার কমতে থাকতো সম্ভবত।
এখন এই অবস্থা থেকে উত্তরণের আশাও অদূর ভবিষ্যতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ব্লু-প্রিন্টে বিগত সরকারের পতনের পর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের ইকোনমিক শক থেরাপির অংশ হিসেবে শিল্পখাতকে প্রায় ধ্বসিয়ে দেওয়া হলেও দুর্বল শেয়ার বাজার হারিয়েছে প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকার মূলধন। যা এখনো চলমান। যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তারা আজ হোক কাল হোক এই টাকা পাচার করবেই। বর্তমানে এরকম দৃশ্য ও অদৃশ্যমান বহু ক্ষেত্র রয়েছে।
উপরের ডিস্কাসনে এইটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয় যে, বর্তমান পুতুল সরকার মানি লন্ডারিয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে যেসব বয়ান দিচ্ছে তা সত্য নয় বরং যারা সিংহভাগ মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত ছিলো তাদের সাথেই এই সরকার আঁতাত করে চলছে স্বাভাবিকভাবেই। অন্যদিকে অর্থনীতির বিচারে বিশ্বের অন্যতম বেশি টাকা পাচারকারী দেশগুলোর একটি হচ্ছে বাংলাদেশ এটিও সত্যি নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা, আমলারা টাকা পাচার করেছে এটা সত্যি, কিন্তু মোট অর্থ পাচারের তুলনায় তা ছিলো নগণ্য। তাই এই এনজিওগ্রাম সরকারের টাকা পাচারের বয়ান যতোটা না অর্থনৈতিক তার থেকেও অনেক অনেক বেশি রাজনৈতিক।
আওয়ামী শাসনামলের মতো দুর্নীতি নাকি আর কখনো হয় নাই। এন্টি আওয়ামী লীগার গোষ্ঠী বিশেষ করে বিএনপির এটা নিয়ে চিন্তার সীমা নেই। এইটা ঠিক আদর্শচ্যুত আওয়ামী লীগ শেষ দিকে এসে দুর্নীতির পরাকাষ্ঠা হিসেবে পরিণত হয়েছিলো কিন্তু বিএনপির দাবির সত্যতা কতটুকু? আসুন হিসাব মেলাই।
দু’টি ভিন্ন দলের দাবির পক্ষপাতদুষ্টটার জন্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকে রেফারেন্স ধরা যাক। বিএনপি-জামাত শাসনামলে দুর্নীতিতে ১ম বাংলাদেশ ২০২৩ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ সূচকে বিশ্বে ৩১তম। এটা আপাতদৃষ্টিতে বড়সড় উন্নতি মনে হলেও, শুধু এই তথ্য থেকে শাসনকালের হিসেবে কোন সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রতি বছর প্রতিটি দেশের দুর্নীতির পরিমাণের বিপরীতে একটি স্কোর প্রদান করে থাকে। বর্তমানে যা ১০০’র স্কেলে দেওয়া হয়। যদিও ২০১১ সাল পর্যন্ত এই স্কোর দেওয়া হতো ১০’র স্কেলে। ১০’র স্কেলের মানগুলোকে ১০ দ্বারা গুন করলেই তা ১০০’র স্কেলের সমতুল্য হয়।
এখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিচারে বাংলাদেশের সর্বশেষ তিনটি ভিন্ন গোষ্ঠীর শাসনামলের দুর্নীতির চিত্র [৬] দেখা যাক-
আওয়ামী লীগ শাসিত সরকার (২০০৯-২০২৩)- গড় স্কোর ২৫.৬
তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০৭-২০০৮)- গড় স্কোর ২০.৫
বিএনপি-জামাত শাসিত সরকার (২০০২-২০০৬)- গড় স্কোর ১৫.৪
এখানে দেখা যাচ্ছে দুর্নীতির বিচারে বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলে যেকোন বিচারে আগের দুইটি ভিন্ন শাসনামল থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের স্কোর তাই বলে। যেই বিএনপি-জামাত আওয়ামী লীগের সর্বশেষ শাসনামলকে দুঃশাসন বলে প্রচার করে থাকে তাদের শাসনামলের অবস্থা দুর্নীতির ব্যাপারে ছিলো ভয়াবহ।
এই বিশ্লেষণের সবচেয়ে কৌতূহলউদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, ২০০৭-২০০৮ এই দুই বছর দেশ চালানো আমেরিকান মদদপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেটাপের একটি বড় অংশ এখন নিজেদের প্রায় দেবদূত দাবি করে উড়ে এসে জুড়ে বসে বর্তমান সরকার গঠন করেছে। কিন্তু, এই গোষ্ঠীটির দুই বছরের শাসনামলের দুর্নীতির পরিমাণ বিএনপি-জামাতের শাসনামলের তুলনায় কিছুটা কম হলেও আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলের তুলনায় তা ছিলো যথেষ্ট নাজুক।
স্কোর কে এখানে গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে কারণ এটা থেকে দুর্নীতির তীব্রতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উন্নতি বা অবনতি সহজে বোঝা যায় যা বিশ্বে অবস্থান কত তা থেকে অনুধাবন করা যায় না। সেটা বিবেচনায় আনলেও লীগ তুলনামূলক বেশ ভাল অবস্থানে ছিলো।( যথাযথ তথ্যের অভাবে ২০০২’র পূর্বের অন্য কোন শাসনামলকে বিবেচনায় নেওয়া হয় নাই )
দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই গড় মাত্র ২৫.৬। যা বৈশ্বিক তুলনায় হতাশাজনক। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের নেতাদের আদর্শচ্যুতি ও বাণিজ্যিকীকরণই ছিলো এর জন্য দায়ী। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের এক্সপেকটেশন বেশি থাকে বরাবরই। এবং তারা তা পূরণ করতে যে ব্যর্থ হয়েছে এটা বলাবাহুল্য।
অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বলছে তারা নিজেরা সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও, আওয়ামী লীগের শাসনামলের চেয়ে তাদের সময়ের নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির তীব্রতা ছিলো উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। কিন্তু তারাই এখন বহু মনগড়া তথ্য প্রকাশ করছে তাদের ভয়ে তটস্থ থাকা সকল মিডিয়াতে। যেসব তথ্যের নাই কোন প্রকৃত সোর্স, আছে কেবল বিশেষ সূত্র, গোপন অনুসন্ধান ও রিমান্ডে ওয়াটার থেরাপি দেওয়ার পর প্রাপ্ত তথ্য।
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বিশেষ গোষ্ঠীটির বহু বছরের চালানো প্রতারণা, প্রোপাগান্ডা ও ধর্ম ব্যবসার আড়ালে বাংলাদেশের বহু মানুষের অবচেতন মনে তৈরি হয়েছে একটি ক্যাসেল অব লাইস। এই মিথ্যার দুর্গ অভেদ্য নয় কিন্তু বেশ শক্তপোক্ত। এই মিথ্যার দুর্গ তাদের মনে তৈরি করেছে এক মিথ্যা চেতনা। দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ে আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে এই গোষ্ঠীটির তৈরি করা আরোপিত চেতনা এই ক্যাসেল অব লাইসেরই একটা অংশমাত্র। এই নিবন্ধটি বিগত আওয়ামী শাসনামলের দুর্নীতির বৈধতা দিতে লিখা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল ঐ বিশেষ গোষ্ঠীগুলোর মুখোশ উন্মোচন করাই ছিলো এই আলোচনার মুখ্য উদ্দেশ্য।
#ATeam 20241063
তথ্যসূত্র:
[১] বিদেশে টাকা পাচারে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ( https://www.ittefaq.com.bd/23919/ )
[২] বিদেশে পাচার হওয়া টাকার পরিমাণ কত, জানা গেল ( https://www.somoynews.tv/news/2024-09-01/MsxR7CG9 )
[৩] Bangladesh loses $8.27bn annually over trade mis-invoicing: GFI report ( https://www.thedailystar.net/business/news/bangladesh-loses-827-annually-over-trade-mis-invoicing-gfi-report-2919786 )
[৪] (তথ্যসূত্র- https://index.baselgovernance.org/ranking )
[৫](তথ্যসূত্র- https://blogs.griffith.edu.au/asiainsights/why-accurate-reporting-on-money-laundering-matters-the-case-of-bangladesh/#:~:text=Bangladesh’s%20ranking%20on%20a%20global,to%2046th%20place%20in%202023. )
[৬](তথ্যসূত্র- https://www.transparency.org/en/cpi/2023 )