দিন ১৫ আগে ইউনূস সাহেব খুব খুশি মনে গ্রাফিতি দেখতে বের হয়েছিলেন পারিষদ নিয়ে। খুব হাসাহাসি করছিলেন, এমন ছবি প্রচার হয়েছে গণমাধ্যম। আমিও হেসেছি। আমি কেন, যারা জুলাই এর শেষ এবং আগস্টের শুরুতে ঘোষিত কর্মসূচির গ্রাফিতি আঁকা দেখেছিলেন তারাও হেসেছেন। কারণ সেদিনের সেই গ্রাফিতির ছবি-ভাষা আর আজ যেগুলো দেখা যাচ্ছে এর ছবি-ভাষা এক নয়। পট পরিবর্তনের পর প্রথম ৭ দিনের মধ্যে আগেরগুলো মুছে নতুন করে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল। ওই সময় যারা রাস্তাঘাটে চলাচল করেছিলেন তারা সবাই জানেন। কী মুছে কী লেখা হচ্ছে।
এসব গ্রাফিতি বা দেয়াল লিখনের ছবি নিয়ে এরইমধ্যে অ্যালবাম বানানো হয়েছে। ইউনূস তার পশ্চিমা বন্ধুদের সেই অ্যালবাম উপহার দিয়েছেন। বুঝিয়েছেন সাবেক সরকারের ওপর মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ ছিল। তার ক্ষমতায় বসাটা কতটা সমায়োপযোগী ছিল। তাই ইউনূস হাসছেন জয়ের আনন্দে। ষড়যন্ত্র করে কোটি কোটি মানুষকে সহজে বোকা বানানোর আনন্দে। আবার এই মুহূর্তে শুনলাম এই গ্রাফিতিগুলো স্কুলের বইয়ে যুক্ত হচ্ছে। খারাপ কী, ভালইতো। কারণ এবার বইয়ে গ্রাফিতি দেখে মুচকি হাসবে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আর মনে মনে বলবে কী লিখলাম আর কী হয়ে গেলো?
এই ছেলে মেয়েগুলো মাথার মধ্যে সত্যকে মিথ্যা বানানের ম্যাজিক্যাল বিশ্বাস নিয়ে বড় হবে। জাতি গঠন করবে। নানা কাজে তাদের কেউ কেউ সভ্য দেশগুলোতে যাবে। সেখানেও নিশ্চয়ই এই প্রাকটিস করতে যাবে। তখন কী হবে? সেটা দেখার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নিশ্চিত। খারাপ হবে, সেটা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ ইউনূসের তো খারাপ কিছু হয়নি। তিনি দলবল নিয়ে মিথ্যা ভরা অ্যালবাম সত্য বলে তুলে দিয়েছেন বিশ্ব নেতাদের হাতে। অবশ্য বিশ্ব নেতারা সেই মিথ্যে অ্যালবাম দেখে শিহরিত হয়েছেন না যাচাইয়ের জন্যে গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তা জানি না। প্রাথমিকভাবে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসেনি।
আমি বা আলোচিত গ্রাফিতির প্রথম প্রত্যক্ষদর্শীরা কেন হেসেছিলাম সেটা নিশ্চয়ই পাঠক এতক্ষণে বুঝেছেন। কারণ, আমরা জানি আক্ষরিক অর্থে এই গ্রাফিতির পেছনের গ্রাফিতি কী? আসলে দেয়ালে কী লেখা হয়েছিল ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত। ৫ তারিখের পর থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেয়ালের কী লেখা মুছে কী ছবি আঁকা হলো। কেন সেটা মোছায় এত তাড়াহুড়ো সেটাও আজ পরিস্কার। বিদেশে অ্যলবাম নিয়ে যেতে হতো যে? যে লেখা তখনও ভাসছিল তাতো প্রদর্শন যোগ্য নয়, লিখতে গেলেও রুচিতে আটকায়। হড় হড় করে বমি পায়। এককথায় বলা যায় এর ভাষা ছিল রগরগে যৌনতার ভরা। পাশাপাশি চূড়ান্ত ঘৃ… ণা ছড়ানোর ভাষা।
আমি নিশ্চিত সেই লেখার ছবি বহু মানুষের হাতে আছে। সময়মত বের হবে নিশ্চয়ই। ভুল করে ঢাকতে পারেনি এখনও সেরকম কিছু দেয়াল লিখন এখনও আছে। এসব দেখি আর ভাবি একটি মিথ্যা ঢাকতে কত মিথ্যা বলতে হয়! তবু দু’একটা বেরিয়ে পড়ে। মিথ্যা আসলে ঢাকা যায় না। এই গ্রাফিতির মিথ্যাচার আসলে নিমিত্য মাত্র। কারণ এই মিথ্যাচার বলে দেয়, ৫ ই আগস্ট ঘিরে যাকিছু হচ্ছে বা হয়েছে তার পুরোটাই মিথ্যাচার। ইদানীং ৫ই আগস্টের সমর্থকরাও কথা বলার সময় সেই মিথ্যা চেপে রাখতে পারছেন না। বলেই ফেলছেন, “সব কিছু কী নিয়ম মেনে হয়, প্রয়োজনে আমরা আরও নিয়ম ভাঙবো”
তাই সত্য হচ্ছে “৫ই আগস্ট একটি মিথ্যাচারের নাম”। যারা এর নির্মাতা তারা সবাই মিথ্যাবাদি। সেই শুরু থেকেই যদি দেখেন, দেখবেন শুরুটা হচ্ছে মিথ্যা দিয়ে। কারণ এমন একটা দাবি নিয়ে তারা মাঠে নামলো যেটা না করলেও হত। কারণ সরকার আদালতের একটা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করছে। শিক্ষার্থীরাও সেই রায়ের বিরুদ্ধে দাবি তুলছে। খানিকটা অদ্ভুতই। সরকার বার বার বলছে, রায় বের হোক তার পর সিদ্ধান্ত আসছে। তারা কিছু শুনবে না। কারণ, সেই শোনাটা ছিল সত্যের দাবি। আর না শোনাটা ছিল তাদের মিথ্যা প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ।
সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার হচ্ছে শেখ হাসিনা বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দিয়ে মব সৃষ্টি করা। সংবাদ সম্মেলনের সেই বক্তব্য এখনও ইউটিউব থেকে সরানো যায়নি। এখনও সবার সুযোগ আছে সেটি দেখে নেয়ার। সেখানে তিনি কোথাও একবারও বলেননি “যারা আন্দোলন করছে তারা রাজাকারের বাচ্চা”। এমনকী তিনি সেখানে আন্দোলন করতেও না করেননি। বলেছেন রাজপথে সমাধান চাইতে পারো, কিন্তু সহিংসতা করো না। কিন্তু, সেই বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দিয়ে মব সৃষ্টির করা হলো। না করে তো উপায় ছিল না, কারণ সেটাই ছিল তাদের মাঠে থাকার শেষ সুযোগ। ওইদিন রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিল তারা। রাষ্ট্রপতিও সমাধানের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, সেই সমাধান তো তাদের লক্ষ্য ছিল না।
এর পর একের পর এক মিথ্যাচার। পুরো বিষয়টাকে পরিকল্পনা করে সহিংসতার দিকে নেয়া। প্রথম আলো পত্রিকার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ হয়েছে কী কী পরিস্থিতি হলে পুলিশ গুলি চালাতে পারে। দেখা গেছে তার সবগুলো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পুলিশকে সহিংস হতে বাধ্য করা হয়েছে। আজকে সেই সত্য এক এক করে প্রকাশ হচ্ছে। যদি কেউ সত্য জানাতে চান, ঢাকার একটু পাড়া মহল্লা এলাকায় গিয়ে চায়ের দোকানে বসলেই হবে। দেখবেন তরুণদের আড্ডার বিষয় এখনও ৫ ই আগস্ট । আপনাকে কিছু বলতে হবে না। শুধু কান পাতলেই দেখবেন, তাদের কতরকম স্মৃতিচারণ। কীভাবে অস্ত্র আসলো, বোমা আসলো, টাকা আসলো, খাবার আসলো, সব তথ্য পাবেন তাদের হাস্যরসের আড্ডায়। নিশ্চিতভাবে জানবেন, যতগুলো হত্যাকাণ্ড আলোচিত হয়েছে তার আগে পরের অনেক তথ্য এবং ছবি আলোয় আসেনি।
সবচেয়ে আলোচিত মৃত্যু আবু সাঈদ এবং মুগ্ধ। তাদের মৃত্যুতেও তো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আমরা ছবি দেখলাম একটা ছেলে বুক পেতে দিল এবং পুলিশ গুলি করলো। বিষয়টি কী এতই সরল? এই প্রশ্নের জবাব যে পুলিশ সদস্যের কাছে ছিল তাঁকেতো হত্যা করা হয়েছে। এখন কে বলবে সেই সত্য? এমন কী সাঈদের বাবা যে প্রশ্ন করেছেন গুলি খাওয়ার পর ৫ ঘণ্টা কোথায় ছিল সাঈদ? সেই প্রশ্নেরও কোন জবাব নেই। আর মৃত্যুর আগেরদিন ছাত্র শিবির এবং ছাত্রদল নিয়ে মুগ্ধ যে স্টাটাস দিয়েছিল সেটাও আলোচনার সুযোগ পাওয়া গেলো না। একটা ছেলে কেন টার্গেট হলো? সে যে গুলিতে বিদ্ধ হলো এই গুলি কারা ব্যবহার করে? এর কোন তদন্ত হলো না। অথচ এই মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে শ্লোগান আসছে “আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ”
কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি একপাক্ষিক ব্যাখ্যায় আছি। বিষয়টি সেরকম নয়। আমার কথা হচ্ছে, যদি সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে হবে তাহলে চাকরির কোটায় ভর করে এত মিথ্যাচার কেন? গত নির্বাচনের সময় এরা কোথায় ছিল? দাঁড় করাতো প্রার্থী। এত মানুষ, ভোটারের বাড়ি বাড়ি যেতেন। কেন্দ্র পাহারা দিয়ে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতেন। সেই ভোট নিয়ে সংসদে গিয়ে ইচ্ছেমত বৈষম্য দূর করতো। এখন তারা কী বলবে? সুযোগ ছিল না। এই পৃথিবীতে সুযোগ কী কেউ কাউকে দেয়? সুযোগ বানিয়ে নিতে হয়। যেমন ৫ই আগস্টে তারা সুযোগ বানিয়েছে।
কিন্তু সেই সুযোগটা কোন সভ্যতা প্রতিষ্ঠার জন্যে হয়নি। তাতো এরইমধ্যে প্রমানিত। কারণ সরকারের তিন মাস হয়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের সার্বিক কার্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধের বিনাশ ছাড়া আরতো কিছু দেখা যাচ্ছে না। এখনতো বলাই যায় ৫ই আগস্টের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিনাশ। এর জন্যে এরকম একটি সরকার প্রতিষ্ঠার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারতো? কে মাস্টার মাইন্ড আর কে নয়, প্রশ্নে আমিতো জমায়াতের আমীর ডা. শফিক এবং তারেক জিয়াকে এগিয়ে রাখবো। কারণ এত বড় মিথ্যাচারের পরিকল্পনা এই শিশুদের মাথা থেকে আসার কথা নয়। যে যত বড় সমন্বয়কই হোক, এরা আসলে হুকুমের খাদেম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির মিথ্যাবাদি। পাঠক দেখবেন এরা নিজেরাই একসময় এগুলো প্রকাশ্যে বলবে।
এখানে আরেকদল মিথ্যাবাদি রয়েছে, আমি যাদের আমি তৃতীয় শ্রেণির মিথ্যাবাদি বলি। এরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। ঢোকার পর বুঝতে পারছিলেন ঢোকাটা ঠিক হয়নি। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। এরা কেউ বামপন্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী। এই শ্রেণি পর্যন্ত মিথ্যাবাদিদের শেষ স্টেক হোল্ডার। তারা বেশিরভাগ ধমক টমক খেয়ে এরইমধ্যে গর্তে ঢুকে গেছে। কারণ কাজের কারণে তারা ব্যবহৃত হয়েছিল। এখন দরকার শেষ, তাই তাদেরকে গালিগালাজ করা শুরু হয়েছে। দুই একজন নিলর্জ্জ এখনও মাঠে আছেন রাজবাড়ির এঁটোকাটার আশায়। দুএকটা কমিটি মেম্বর অথবা একটা বিদেশ ট্যুর যা পাওয়া যায়। কিন্তু বুঝতে পারছেন না, তারা আন্দোলনও করেছেন আবার মিথ্যাচারের শিকারও হয়েছেন। যেকোন দিন অর্ধচন্দ্র পাবেন।
এরপর আর যারা আন্দোলনে ছিলেন তারা সবাই মিথ্যাচারের শিকার। যেমন স্কুল ও কলেজের শিশুরা। কারণ এরাতো কেউ সরকার বদল করতে আসেনি। এরা এসেছিল ভাইয়ের বুকে গুলি লাগার গল্প শুনে। আজ তারাও হতাশ। তিন মাসেও বহু আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা হয়নি। অথচ তারা না থাকলে এই দিন আসতোই না। অথচ তাদের সেই মিথ্যাবাদি নির্দেশ দাতারা এখন রাষ্ট্রীয় নানা ভাগাভাগিতে ব্যাস্ত। বলতে দ্বীধা নেই, ৫ আগস্টের ঘটনায় এই শ্রেণিটি সবচেয়ে প্রতারিত এবং মিথাচারের শিকার।
গোটাবাংলাদেশ এখন মিথ্যায় ভাসছে। যে মিথার নাম “বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন”। এর ভেতরে বাইরে স্তরে স্তরে মিথ্যা। বিষয়টি বিশ্ববাসীর জানা দরকার। প্রতিবাদ হওয়া দরকার। কারণ একদল মিথ্যাবাদি বিশ্ববাসীর সঙ্গে মিথ্যাচার করছে। আমি বাংলায় লিখলাম। যারা এই লেখা পড়বেন তাদের কাছে অনুরোধ সবাইকে এই অপরাধের কথা জানান। সবচেয়ে ভালো হয় কেউ এটা ইংরেজি করে প্রচার করেন। তারও চেয়ে ভালো যদি কেউ বিদেশি সাংবাদিকদের পরিস্থিতি জানাতে পারেন। বিশ্বের অনেকেই এখনও জানেন না কতবড় মিথ্যাচার হয়ে গেছে বাংলাদেশে। কারণ তাদের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে মিথ্যা ভরা গ্রাফিতির অ্যালবাম।
ভীরু জমাদার- চাকরিজীবী
#ATeam 20241070