ইউনূসের অভিধানে ‘অবমাননা’র সংজ্ঞা

ইউনূসের অভিধানে ‘অবমাননা’র সংজ্ঞা

গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে প্রধান আসামী করে কোতয়ালি থানায় রাষ্টদ্রোহ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে ড. ইউনূসের অবৈধ অসাংবিধানিক সরকার। দায়েরকৃত এ মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামী করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, গত ২৫ অক্টোবর ৮ দফা দাবিতে লালদীঘি ময়দানে সনাতনীদের সমাবেশের দিন নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপর গেরুয়া রঙের পতাকা উত্তোলন।

বোঝা গেল, অসাংবিধানিক ও অবৈধ হলেও ড. ইউনূসের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় পতাকার বিষয়ে বিরাট সেনসেটিভ। কিন্তু, যারা জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে সাতই মার্চ, পনেরোই আগস্টকে বাদ দেয়, যাদের নির্দেশে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পুড়িয়ে ফেলে জামাত-শিবির-হিজবুত-বিএনপিসহ অন্যান্য জুলাই আন্দোলনকারীরা, যে সরকার গেল পনেরোই আগস্টে নূন্যতম শোকটুকু প্রকাশ করতে দেয়নি ৩২ নম্বরের সামনে, যে সরকারের উপদেষ্টারা সরাসরি মদদ দিয়ে পনেরোই আগস্টে ৩২ নম্বরের সামনে উদ্দাম নৃত্য করিয়েছে; তারাই হঠাৎ জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছে, এটা সন্দেহজনক বৈ কি! কারণ মাছের মায়ের তো পুত্রশোক থাকে না, তাহলে ইউনূসের এই অবমাননা শোকের কারণ কি?

এ প্রশ্নের উত্তরে পরে আসি। আগে বরং দেখে নেই কোন আইনে জাতীয় পতাকা অবমাননার এই অভিযোগ তোলা হলো? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২ (২০২৩ সালে সংশোধিত) এর ধারা ৭ (Maintenance of the dignity of the ʻFlagʼ) অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে, “No other Flag or colour shall be flown above the ‘Bangladesh Flag’.” এখন ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, মামলার কারণ ও ধারা ঠিকঠাক।

কিন্তু, এই জাতীয় পতাকা বিধিমালায় কি কেবল এই একটি ধারা ও অনুচ্ছেদ রয়েছে? গোটা বিধামালাটি ডাউনলোড করার লিংক নিচে দেওয়া হলো।

https://www.dhakadiv.gov.bd/bn/site/page/জাতীয়-পতাকা-বিধিমালা

যে কেউ পড়ে দেখতে পারেন, সেইসাথে ভেবে দেখবেন, স্মৃতি থেকে ইয়াদ করবেন যে, পুরো জুলাই মাসে সরকার পতনের আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা এই বিধিমালার কতগুলো ধারা-অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। শুধু জুলাই মাস কেন, আগস্ট, সেপ্টেম্বর… এমনকি এখনও যে বৈষম্যবিরোধী নেতারা ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুন দিতে যাচ্ছে বা একে ওকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ট্যাগ দিয়ে মারতে যাচ্ছে, সেখানেও তারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করে চলেছে।

জুলাই আন্দোলনের কথাই ধরা যাক। যত্রতত্র জাতীয় পতাকার ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও বিধিমালার ৪ (Occasions on which the Bangladesh Flag is to be flown), ৫, ৬ (Use of the Flag on Government Buildings, Official Residence, Motor Cars, etc.) ও ৮ (General Instructions) এ স্পষ্ট বলা আছে কখন, কীভাবে, কোথায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে আর যদি কাউকে পতাকা বহন করতে হয়, তাহলে কোন বিধিতে করতে হবে। প্রথম কথা হলো, পুরো জুলাই আন্দোলনে শুধু জাতীয় পতাকার অবমাননায় অন্তত শ’খানেক মামলা হতে পারে। দায়ী ব্যক্তিরা নিজেরাই তাদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা এক্স একাউন্টে এসব ছবি দিয়ে রেখেছে, যা আমাদের সংগ্রহেও আছে। প্রত্যেকের পরিচয়ও স্পষ্টভাবে দেওয়া আছে। তাদের ছবিই প্রমাণ করেছে তারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে। এ তো গেল কেবল বহন করার দায়। ইউনূসের অসাংবিধানিক সরকার কি সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? করেনি।

এবার আসা যাক বিধিমালার আরেক ধারায়, যেখানে জুলাই আন্দোলনের অনেককেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইনের আওতায় আনা উচিত। কমেন্টে দেওয়া ছবিগুলো দেখুন। ছবিগুলোতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনির পতাকা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনি জনসাধারণের ওপর ইজরাইলের দখলদার বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেজন্য মাঠেঘাটে জনসভায় ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে ঘুরতে হয়নি দলটির নেতাকর্মীদের। কিন্তু জুলাই আন্দোলনকারীরা বাইডন প্রশাসন ও তাদের অনুদানে চলা দেশীয় এনজিওবাজদের পরিকল্পিত সহিংসতার মাধ্যমে ইউনূসের সরকার গঠন করলেও, সে সরকার এখনও পর্যন্ত স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। উল্টো গণহত্যাকারী ইজরাইলের পলিসি মেকাররা টুইট করে স্বীকার করে, ইউনূসের সাথে তাদের দোস্তি কত পুরানা।

এ কথা থাক! আসি জাতীয় পতাকার প্রশ্নে। আইন আর আবেগ তো এক নয়। হলে কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর হাতে হাতকড়া পরত না। জাতীয় পতাকা বিধিমালার ৯ ধারায় (Use of Foreign Flags in Bangladesh) পরিস্কারভাবে বলা আছে, কিভাবে কোন মর্যাদায়, কখন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে অন্যদেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে। কমেন্টের ছবিগুলো দেখুন, স্পষ্টতই বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। কিন্তু কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি? হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে। এটাও তাদের ম্যাটিকুলাস প্ল্যানেরই অংশ, বাংলাদেশ থেকে সনাতন-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা। তাদের একেবারে প্রান্তিক করে তোলা। আর এটাই হলো ইউনূসের অবৈধ সরকারের অবমাননা শোকের মূল কারণ।

এবার আসি যে ধারায় মামলাটি দায়ের করা হলো, সে অপরাধের প্রশ্নে। অভিযোগ হলো, নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এবার কমেন্টে দেওয়া গণভবনের ছবিটি দেখুন একবার। ৫ আগস্টের পর জুলাই আন্দোলনকারীরা যখন গণভবন লুট করে, তখনকার ছবি এটি। জাতীয় পতাকার উপরেই কিন্তু লাল রঙের পতাকাটি শোভা পাচ্ছে। গেরুয়ার বদলে লাল, অপরাধ একই কিন্তু ইউনূস মিয়ার মুখে রা নেই। কারণ সে তো জানে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গেলেই গোটা উপদেষ্টা পরিষদের পশ্চাতদেশ লাল করে দিবে তাদের আব্বারা। তাই ‘হিন্দু ধরো, জেলে পুরো’ নীতিতে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নির্যাতন চালাচ্ছে ইউনূস সরকার।

লেখাটি শেষ করবো জুলাই আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ দিয়ে। জাতীয় পতাকা বিধিমালার কোন তোয়াক্কা তো করেইনি আন্দোলনকারীরা, বরং আন্দোলনে আন্তর্জাতিক জঙ্গীসংগঠনগুলোরও যে মদদ ছিল, তার প্রমাণ তারা নিজেরাই রেখে গেছে। কমেন্টের একটি ছবি লক্ষ্য করুন, যেখানে একজন জুলাই আন্দোলনকারী একহাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও অন্যহাতে আইএসের পতাকা নিয়ে উল্লাস করছে। এ ছবি কিন্তু আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গীসংগঠনের ওয়েবসাইটেও দেখেছি। এই ব্যক্তির চেহারাও এখানে স্পষ্ট। কিন্তু ইউনূস সরকার কোন ব্যবস্থা নিয়েছে কি? নেয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে নির্যাতিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে, যাঁরা ঘরবাড়ি, সম্পদ হারিয়ে নিজেদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন।

এ সবগুলো ঘটনাই আসলে পারস্পরিকভাবে যুক্ত। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেওয়ার ম্যাটিকুলাস প্ল্যানের অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরাই সাধারণ ছাত্র-জনতা ও পুলিশ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং থানাসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। না এ আমাদের কোনো অনুসন্ধানী আবিষ্কার নয়; বরং সমন্বয়করা, সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (বর্তমানে বস্ত্র উপদেষ্টা) ব্রিগে. সাখাওয়াত হোসেন এবং স্বয়ং ড. ইউনূসই এসব কথা একের পর এক স্বীকার করে চলেছে। জুলাই আন্দোলনে আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দেশের বিভিন্ন জঙ্গীসংগঠনও জড়িত ছিল, যুক্ত ছিল আন্তর্জাতিক নানা জঙ্গী সংগঠনও। এ কারণেই ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথমেই জঙ্গীদের মুক্ত করে দেওয়া হয়। তারপর একে একে মুক্তি দেওয়া হয় দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের। আর সেই সাথে শুরু হয় সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে হিজবুত তাহরীরে বিষয়ে সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হলেও, আদতে হিজবুত তাহরীর এখনও সক্রিয়ভাবে প্রতিটি ক্যাম্পাসে কাজ করছে। কারণ, ইউনূসের দপ্তরেই হিজবুত তাহরীরে নেতা রয়েছে উচ্চপদে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই সারাদেশে ধর্মীয় নির্যাতনকে প্রাতিষ্ঠানিক করা হচ্ছে।

তাহলে এখন আমাদের করণীয় কি? প্রথম কথা হলো, সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এমনকি ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন; কারণ ইউনূস সরকার এখন ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ ও ‘ধর্ম অবমাননার’ কার্ড কেবল সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করবে না; যে মুসলিম জনগোষ্ঠী ইসলামকে পবিত্র শান্তির ধর্ম মানেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন ইসলাম ধর্ম কখনোই কোনো মানুষের ওপর জুলুম সমর্থন করে না, তাদের বিরুদ্ধেও ইউনূস সরকার আইন প্রয়োগ করবে। সুতরাং, সতর্ক হওয়া প্রথম কাজ। কোন ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে, ইউনূস সরকার যে পরিকল্পিতভাবে সুনির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, সেগুলো যার যার অবস্থান থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ সব জায়গায় এটা স্পষ্ট করা উচিত যে, ইউনূস সরকার বাংলাদেশে আদতে জঙ্গীবাদী সরকারব্যবস্থা কায়েম করতে যাচ্ছে যার অংশ হিসেবেই তারা প্রথমে সনাতন ও পরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিশ্চিহ্ন করবে। এখানে জাতীয় পতাকার অবমাননা একটি উছিলা মাত্র!
#ATeam 20241107

0 thoughts on “”
  1. Dating between men and women has evolved with technology and shifting gender roles, present more opportunities but also hip challenges.
    https://hentai0day.com

    The Digital Caftan
    Online dating apps like Tinder and Bumble arrange connecting easier but can fancy overpowering satisfactory to too many choices. Women procure gained more switch, such as initiating conversations on Bumble, reflecting broader gender equality.

    Challenges in Dating
    Ghosting and Unsure Dating: Fleet exits and uncertain encounters are general, matchless to confusion.
    Expectations: Miscommunication around commitment can case frustration.
    Pressure: Common media creates fanciful expectations of pronouncement the correct partner.
    Gender Stereotypes: Getting on in years stereotypes round dating roles still breathe, complicating things.
    Keys to Healthy Relationships
    https://squirting.world

    Communication: Outstretched, honest conversations build trust.
    Matter and Similarity: Valuing each other as equals fosters balance.
    Persistence: Irresistible habits to body connections reduces pressure.
    Looking Before
    As dating continues to evolve with technology, the fundamentals of defer to, communication, and fortitude tarry basic in place of everlasting relationships.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *