ইন্টারভিউ শুরুর আগে মতি মিয়া সবিনয়ে বললেন, “স্যার, আপনার হাতদুইটা দয়াকরে দুইদিকে একটু প্রসারিত করবেন?” ডক্টর স্যার যথারীতি দুইহাত প্রসারিত করলেন। মতি মিয়া ডক্টর স্যারের হাতের শেষ সীমানার বাইরে নিজের চেয়ার টেনে ইন্টারভিউর জন্য বসলেন। বিড়বিড় করে বললেন, কথা বলার সময় স্যারের হাত দুইটা যদি বেঁধে রাখা যেতো! খালি লাফায়! গত ইন্টারভিউ কালে স্যারের আঙ্গুলের গুতায় বাম চোখটা গেছিলো বলে।
∎ কিছু বললেন?
- না স্যার, কি কি প্রশ্ন করবো ভাবছি।
∎ একেবারেই ভাববেন না, নির্ভয়ে প্রশ্ন করুন।
অভয় পেয়ে মতি মিয়া নড়েচড়ে বসে শুরু করলেন,
- নিন্দুকেরা বলে, ভারত আপনার শ্বশুর পক্ষের আত্মীয়। এজন্যই নাকি ভারতে ইলিশ পাঠিয়েছেন?
∎ একদম ঠিক না। তাই যদি হতো, প্রথমে রাশিয়ায় ইলিশ পাঠাতাম। ভুলে গেলে চলবেনা যে আমার দ্বিতীয় স্ত্রী আফরোজী ভারতীয় হলেও প্রথম স্ত্রী মিস ভেরা ফ্রম রাশিয়া।
মতিমিয়া পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে বললেন,
- এবারের প্রশ্নটি আমার না, আমার বউ এর। বহু গবেষণা করে এর জবাব না পেয়ে আপনাকেই করতে হচ্ছে, করবো?
∎ আমার সৌভাগ্য। প্রাণ খুলে করুন। - কোন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আপনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন স্যার?
∎ আপনি এমনভাবে প্রশ্ন করলেন যেন শান্তির নোবেল আমি একাই পেয়েছি! এ যাবত যারা এ পুরস্কার পেয়েছে তাদের নিয়ে একটু স্টাডি করুন, কেন তারা এ পুরস্কার পেয়েছে! - স্টাডি করে দেখেছি স্যার। এ যাবত অশান্তি সৃষ্টিকারিরাই এ পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু আপনি তো কোন অশান্তিও সৃষ্টি করেন নি, আপনি কেন পেলেন?
∎ বলতে পারেন এডভান্স পুরস্কার! সবাইকে ঐ কাজটি করার জন্য পুরুস্কার দেয়া হলেও আমার ক্ষেত্রে কিঞ্চিত ব্যাতিক্রম, কাজটি ভবিষ্যতে করানোর জন্য অগ্রিম পেমেন্ট।সেই ভবিষ্যত এখন রানিং। বাংলার ঘরে ঘরে শান্তির বাতাস বইছে। অনুভব করতে পারছেন না?
মতি মিয়া মুখ খিঁচে অনেকগুলো বাতাস নাক দিয়ে ভেতরে নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়তে ছাড়তে অস্পষ্টভাবে বললেন, আহ, শান্তি!
- একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন মনে এসেছে স্যার, করবো?
∎ না, হিলারিকে নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। - তওবা তওবা স্যার! সেই জাতীয় কিছু না।একেবারেই নির্বিষ প্রশ্ন, করি?
∎ প্রফুল্ল চিত্তে করুন। - ক্ষুদ্র ঋণকে ঘিরে এত চমৎকার সুদের ব্যবসা আপনার মাথায় এলো কিভাবে?
∎ দেখুন, সুদের বিজনেস কথাটা শুনতে খারাপ শোনায়, এটাকে সামাজিক বিজনেস বলুন কাইন্ডলি। - সরি স্যার। তো স্যার, এই সামাজিক বিজনেসের আইডিয়াটা কিভাবে মাথায় এলো?
∎ বলতে পারেন, এটা আমার একান্তই পারিবারিক শিক্ষা। বাবা স্বর্নের ব্যবসা করতেন। এলাকার অভাবী মানুষ এসে স্বর্ণ বন্ধক রেখে সুদের উপর টাকা নিতেন। সেখান থেকেই এই আইডিয়া। আমি এই সামাজিক বিজনেসটার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র!
জবাব শুনে মতিমিয়ার নিজের উপর জিদ হলো। ছোটবেলায় তার পাশের বাড়ির রুমিনার মাকে দেখেছে ঘরোয়া পরিবেশে সুদের উপর এলাকা মানুষকে টাকা ধার দিতে! ইসস, এত কাছের আইডিয়াটা কেন যে মাথায় এলো না! মাথা চুলকাতে চুলকাতে মতি মিয়া পরবর্তী প্রশ্নে অবতীর্ণ হলেন,
- ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে। তারেক জিয়ার মামলা নিষ্পত্তি হবে না, তাকে পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে না, সুতরাং বিএনপি ঠান্ডা! জাতীয় পাটির অফিস পোড়ানি শেষ! গন্ডগোল করার মতো কেউ নেই, দেশ একেবারেই স্থিতিশীল। এমতাবস্থায় ‘ফ্যাসিবাদ’ নির্মূলে আপনার পরবর্তী প্ল্যান কী?
এই প্রশ্নে ডক্টর স্যার খুবই অস্বস্তি বোধ করলেন। শুধু হাত দুটোই উপর-নীচ ডান-বাম করতে লাগলেন, মুখে কোনও আওয়াজ নেই। হস্ত যুগলের সর্পিল ভঙ্গিমায় মতি কিছুটা ভয় পেয়ে নিজের চেয়ারটা আরেকটু পেছনে সরিয়ে বসে বললেন,
- আমরা তাহলে অন্য প্রশ্নে যাই স্যার?
∎ সেটাই ভালো। - আপনি কি স্যার নিজেকে ফ্যাসিস্ট মনে করেন? আই মীন, ফ্যাসিজমের সংজ্ঞাটা একটু বলবেন স্যার?
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্যার এপাশ ওপাশ তাকিয়ে কাকে যেন খোঁজার চেষ্টা করছেন। মতি মিয়া গতি বুঝতে পেরে তাড়াহুড়ো করে চিরকুটের অনেক প্রশ্ন স্কিপ করে শেষ প্রশ্নে গেলেন,
- জনগণের পক্ষ থেকে শেষ প্রশ্ন স্যার। অতীতে গ্রামীন ব্যাংকের এমডি পদে বে-আইনীভাবে আজীবন থাকতে চাওয়ার লড়াই দেখে জনগণের ধারণা আপনি পদে গেলে আর ছাড়তে চান না। প্রধান উপদেষ্টার পদও কি….. না মানে, নির্বাচন টির্বাচন…
প্রশ্ন শেষ না হতেই পেছনে দাড়িয়ে থাকা হিজু খপ করে মতি মিয়ার কলার ধরে হেঁচকা টান দিলো। মতিমিয়া কাশি দিতে দিতে বললো, একটু আস্তে আব্বা, দমবন্ধ দমবন্ধ লাগছে। মতিকে টেনে হেঁচড়ে গেইটের বাইরে এনে হিজু কারে যেন ফোন করে গলা ফাটায়ে বলছে, ঐ তোরা কই? সবাইরে রাজুতে আসতে বল, রাত সাড়ে আটটায় মতির কার্যালয়ে আগুন দিতে হবে!
#ATeam 20241108