বিএনপি কি বুঝতে পারছে ইউনূস তাদের ব্যবহার করছে?

ঘটনার আঁচ কিন্তু বোঝা যাচ্ছে। গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। মামলার বাদী চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান।

এই মামলার খবরটি মিডিয়াতে আসার পরই মনে একটি প্রশ্ন উঠল। মামলার বাদী বিএনপি নেতা কেন? এমনকি পুরো আগস্ট মাস জুড়ে যতগুলো গায়েবি আর অযৌক্তিক মামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগের বাদীই ছিল বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। সে সব মামলা নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মিডিয়ার সামনে ইনিয়ে বিনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেছিলেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া আসিফ নজরুলের সাক্ষাৎকারটি নিচের লিংক থেকে দেখে নিতে পারেন।
https://www.facebook.com/watch/?v=1069849114560047

কিন্তু, সে মামলাগুলোর সুতো ধরেই আবার যাকে তাকে প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রেফতার করেছে ইউনূসের অবৈধ সরকার। কাউকে কাউকে বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ড শেষে এখনও আটকে রাখা হয়েছে, কাউকে কাউকে এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে (যেমন: সাবের হোসেন চৌধুরী) এক ঘণ্টার মধ্যেই ৬ মামলায় (যার মধ্যে হত্যা মামলাও আছে) জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলাকে ঘিরে বিএনপি নেতাদের নানা ধরনের চাঁদাবাজী চলছে। চাঁদা না দিলে মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি-ধামকিও দিচ্ছে।

এবার আদালতের প্রসঙ্গে যদি আসি, তাহলেও চিত্রটা একইরকম। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে নেওয়া হলেই তাদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পক্ষে আইনজীবীও দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। এসব অসাংবিধানিক কাজে বিএনপির সাথে জামাত থাকলেও চিহ্নিত হচ্ছে বিএনপিকে। ইউনূস সরকারও বিএনপিকে তোল্লাই দিয়ে সাফাই গাইছে, এটা তাদের স্বাভাবিক ক্ষোভের প্রকাশ (আসিফ নজরুলের আগের ভিডিও)।

এই মুহূর্তে নির্বাচনের দাবি জানানো দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বিএনপিই শক্তভাবে গণমাধ্যমে কথা বলছে। ইতিমধ্যেই সংবিধান সংশোধন বা ইউনূস সরকারের নানাবিধ সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি তার অবস্থান পরিস্কার করেছে এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা অগণতান্ত্রিক কোন সরকারের হাতে সংবিধান সংশোধন মানবে না।

বিএনপির এ দাবি যৌক্তিক, কারণ নির্বাচন যত দ্রুত হবে বিএনপি তত সুবিধা পাবে। আবার ইউনূস সরকারও জানে, বিএনপির অতি উৎসাহই বিএনপিকে গাড্ডায় ফেলবে। সারাদেশে বিএনপি নেতাদের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজী, মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছেই। ইউনূস সরকারও তাতে নীরবে সায় দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? কারণ, এতে আওয়ামী লীগের ১৫ বছর একটানা শাসনের পর বিএনপির দিকে যে স্বাভাবিক জনস্রোত আছে, তা কমতে শুরু করবে।

৫ আগস্টের পর সারাদেশে বিএনপির সন্ত্রাস নৈরাজ্য যেভাবে চাগাড় দিয়েছে, তাতে তিন মাসেই জনগণ বুঝে গেছে, তাদের ক্ষমতায় আনলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। কারণ আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপি নেতারা চাঁদাবাজী, দখলদারিত্ব, জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে চলেছে। এক মোহাম্মদপুর এলাকায় বিএনপি নেতারা জেনেভা ক্যাম্প ও কিশোর গ্যাংগুলোর মাধ্যমে যে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব পড়বে নির্বাচনে।

এক্ষেত্রে ইউনূসের এই ফিডার খাওয়া সরকারের ভূমিকা কি? ভূমিকা কুছ নেহি। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তার নেই, কোন ম্যান্ডেট নেই, কোন কমিটমেন্টও নেই। তার কিছু উদ্দেশ্য আছে, যেগুলো বাস্তবায়নের জন্যই ম্যাটিকুলাসলি জুলাই আন্দোলনটি ঘটানো হয়েছিল, সে এখন সেইসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নেই তৎপর। সেন্টমার্টিন, গ্রামীণ ব্যাংকের কর মওকুফ, শেয়ার বাজার থেকে টাকা লোপাট ইত্যাদি। কিন্তু এসব করতে হলেও তো দমনপীড়ন চাই। ইউনূসের গুন্ডাবাহিনী বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের জনসমর্থন এখন তলানিতে। ইউনূসের মতোই তারা টাকা পয়সা লোপাটে ব্যস্ত। ফলে আগস্ট কি সেপ্টেম্বর মাসেও তাদের দিয়ে যে মব সন্ত্রাস ঘটানো হয়েছিল, সেটা আর এখন হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও বা আওয়ামী লীগ, সিপিবিসহ ১১টি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের রিট সকালে দায়ের করে বিকেলে প্রত্যাহার থেকেই বোঝা যায় বাবুদের এখন ‘বাবু খাইছো’ জিজ্ঞেস করার লোকও নাই।

ফলে ম্যাটিকুলাস প্ল্যানের অংশ হিসেবেই বিএনপিকে ব্যবহার করছে ড. ইউনূস। এই যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হলো, এই মামলা সমন্বয়করা করল না কেন? বিএনপির এক নেতাকেই কেন করতে হলো? এমনকি জামাতও এখন এ বিষয়ে গা বাঁচিয়ে চলছে। জামাতের আমির ‘বিড়াল বলেছে মাছ খাব না’ মুডে সংখ্যালঘুদের নিয়ে জামাতে ইসলামী অমুসলিম শাখাও তৈরি করে ফেলেছে। সেখানে বিএনপি এখন ইউনূসের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছে।

কারণ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেশজুড়ে যে প্রতিবাদ করছিলেন, যে ৮ দফা দাবি দিয়েছেন তা তো বিএনপির কাছে দেয়নি, এ দাবি পূরণের দায় বিএনপির নেই। এ দাবি তারা তুলেছিল ইউনূস সরকারের কাছে। বিচার চেয়েছিল ইউনূস সরকারের কাছে। বিএনপি যদি ৫ আগস্টের পর থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সাথে জড়িত নাই থাকে (যেমনটা দাবি করেন বিএনপির নেতারা) তাহলে তারা মামলা করল কেন?

কারণ ইউনূস সরকার ৫ তারিখের পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ন্যায্য আন্দোলনের কারণে দেশের বাইরে বিব্রত হচ্ছে। সরকারি মদদে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চালাচ্ছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এর বহু তথ্য প্রমাণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে আসছে। এখন এই আন্দোলনকে দমন করতে হলে মামলা চাই। জামাত-শিবির তো সেয়ানা, তার উপরে ইউনূস সরকারের মাস্টারমাউন্ড তারা, সুতরাং সে তো মামলা দিবে না। বৈষম্যবিরোধী গুন্ডাবাহিনী দিয়ে জাতীয় পার্টির অফিস পোড়ালেও, এ মামলা দেওয়া যাবে না, কারণ এর উপর ভারতের সাথে সম্পর্ক নির্ভর করছে। অতএব বিএনপির ঘাড়ে বন্দুকটি রাখল ইউনূসের অবৈধ সরকার আর বিএনপির মাথামোটা নেতারা আরামসে ঘাড়টি পেতে দিল।

ফলে সারাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বার্তা গেল, ক্ষমতায় না যেতেই বিএনপি তাদের ন্যায্য আন্দোলন দমন করছে মামলা দিয়ে, ক্ষমতায় গেলে কি হবে তা একমাত্র ভগবানই জানেন। আবার সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা গেল, নিজেদের ও জামাতের পিঠ বাঁচাতেই বিএনপি মামলা দিয়ে আন্দোলন দমন করার সুযোগ করে দিয়েছে সরকারকে। কারণ সরকার তাদের দাবি মেনে নিলে ৮ দফার ১ নম্বর দফা অনুযায়ী ৫ আগস্ট পরবর্তী সকল সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে। আর বিএনপি-জামাত মিলেই জুলাই আন্দোলনকারীদের সাথে এই সন্ত্রাস চালিয়েছে।

একদিকে জামাত সংগঠনে অমুসলিম শাখা খুলে পূজামণ্ডপে মন্ত্র আওড়ে ইসলামি গান গেয়ে একটা লেজেগোবরে ইমেজ তৈরি করতে চাইছে, অন্যদিকে বিএনপি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নামে মামলা দিয়ে তাদের দমনের সুযোগ করে দিচ্ছে, আর সবদিক দিয়েই লাভের গুড় চাটছে ইউনূস আর তার উপদেষ্টা পরিষদ।

এইক্ষেত্রে দেরিতে হলেও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছে বলেই মনে হয়। কারণ ১ নভেম্বর বিতর্কিত এই মামলার বাদীকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি। নিচের লিংকে দ্রষ্টব্য।
https://www.prothomalo.com/bangladesh/87j7tnafat

কিন্তু ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেছে। ইউনূস এখন গ্রেফতার ও পরে তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে অত্যাচারের মাধ্যমে সনাতনীদের এ যৌক্তিক আন্দোলনকে পিষে ফেলার কাজ শুরু করে দিয়েছে। সনাতনীরা মনে রাখবেন, সুযোগটি তৈরি করে দিয়েছিল বিএনপি।

সুতরাং বিএনপির এখন একটু ভাববার সময় এসেছে। দলটির শীর্ষ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন নেতা এখনও অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং রাজনৈতিক চাল চালছেন। কিন্তু বাকিদের আহাম্মকি তাদের এ প্রয়াসকে সার্থক হতে দিবে কি না, সেটা সময়ই বলে দিবে। কেবল মামলা হামলা বন্ধই নয়, বিএনপির উচিত তার নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা। ইউনূস চাইছেই সারাদেশে বিএনপি সন্ত্রাস চালিয়ে যাক, তাতে নির্বাচন যখনই হোক না কেন, তাতে বিএনপির পয়েন্ট কমতেই থাকবে।

প্রশ্ন হলো, ইউনূসের অবৈধ সরকার তখন কি করবে? উত্তর হলো, এখন যা করছে তখনও তাই করবে। মার্কিন মদদে দেশের সম্পদ পকেটস্থ করবে আর জামাত-শিবির-হিজবুত তাহরীরের গুহ্যদ্বার পাহারা দিবে।

#ATeam 20241118

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *