বাংলাদেশ অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফসার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাথে যে দহরমমহরাম তা এ দেশের লোকজন গত ৩০ বছর আগে থেকে দেখে আসছে – সেই বিল ক্লিনটনে আমল থেকে। ড. ইউনূসের জন্য ডেমোক্র্যাট পার্টি যেন আলাদিনের চেরাগ – যা চেয়েছে, তাই পেয়ে গেছে। বিল ক্লিনটনের সুপরিসে নোবেল পেয়েছে, ওবামা মডেল দিয়েছে, করফাঁকির মামলা যখন চলছিল হিলারি ইউনূসের জন্য বিবৃতি দিয়ে পাশে ছিল। (অদ্ভত ঘটনা, ইউনূসের জন্য বিবৃতি দিয়ে সরকার কে দোষারপ করেছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞ আইনজীবী পাঠিয়ে নিদোর্ষ করতে পারেনি)। আর জো বাইডেন – কমলা হ্যারিসর জেলাখানার বদলে যমুনায় থাকার ব্যবস্থা করেছিয়েছে।
তাইতো ক্লিনটনের এনজিও অনুষ্ঠানে আবেগে স্বীকার করে নিয়ে ছিল সব ছিল প্ল্যান ম্যাটিকুলাস।
স্বাধীন নবাব থুক্কু স্বাধীন প্রেসিডেন্ট
মার্কিন ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠিক প্রথাগত মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মত ছিল না। কোন লবি গ্রুপের ডলারে নির্বচন না করায় – ধনকুবের ট্রম্প অনেকটাই স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন। তিনি যেভাবে বৈদেশিক নীতির জায়গাগুলো বিবেচনা করেন, সেটি ঘিরে আগাম অনুমান করা আগেও কঠিন ছিল – এখনও কঠিন হবে।
সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বৈদেশিক নীতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয় না। শক্তিশালী মার্কিন ডিপ স্টেটের ভূমিকা সেখানে মূখ্য। কিন্তু ট্রাম্প যেভাবে তার আগের মেয়াদ পার করেছেন এবং সদ্যসমাপ্ত নির্বচানী প্রচারণায় যা যা বলেছে। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন আসছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট
ভোটের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত একটি টুইট ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে এটাকে হালকা করার জন্য বলেছে ‘ট্রাম্প আপসোস লীগে যোগ দিয়েছে’। ‘আওয়ামী লীগ ট্রাম্প হয়ে ফিরে এসেছে’! ‘আমেরিকার হিন্দু ভোটার টানার রাজনৈতিক কৌশল ছিল।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বক্তব্য ছিল, “কিছু লবি গ্রুপ হয়তো বা এটাকে ইনফ্লুয়েন্স করতে চেয়েছে এবং সেই আলোকেই তার এই স্টেটমেন্টটা এসেছে।” লবি গ্রুপ বলতে আওয়ামী লীগ অথবা ভারতকে বোঝানো হয়েছে!
ট্রাম্প বাংলাদেশ সম্পর্ক মাঝে ভারত
বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের গ্রহণযেগ্যতা নিয়ে মার্কিনি প্রশসনের প্রথমে শক্ত অবস্থানে থাকলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনই একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
অগাস্ট মাসে নরেন্দ্র মোদী ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রকে সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা জানালেও সেটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক বেশ ভালো। এবছর সেপ্টেম্বর মাসেও মোদীকে একজন ‘চমৎকার মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের দায়িত্ব নেয়ার পরে মার্কিন-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারত ভূমিকা পালন করতে চাইবে। সেক্ষেত্রে র্বতমানে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের সাথে ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে সেখানে ভারতের দিক থেকে এক ধরণের নেতিবাচক প্রভাব থাকাটা একেবারে অস্বাভাবিক নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখার প্রবণতার কথা উল্লেখ করেন অনেকে। ট্রাম্প যেভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সম্পর্কে বিশ্বাসী, তাতে করে ভ্লাদিমির পুতিনের মত নরেন্দ্র মোদীকেও তিনি সমর্থন করবেন। সেক্ষেত্রে ডোনাল্ড জন ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি প্রেসিডেন্ট হলে ভারতের প্রভাব বেড়ে যাবে। দিল্লীশ্বর নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী ইচ্ছা অনিচ্ছায় উপরে নির্ভর করবে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক কিছু।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সম্পর্ক
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গপাঙ্গরা শোনাচ্ছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, দুই পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেই ইউনূসের ভালো সম্পর্ক এবং বন্ধু থাকায় এই নির্বাচনের ফলাফলে দুই দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না।
কিন্তু পূর্ববর্তী ট্রাক রেকর্ড কী বলে? কতটা ভালো সম্পর্ক?
ড. ইউনূস অতীতে একাধিকবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর, তাদের রাজনৈতিক আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য উল্লেখ করে তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, “আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান ভিন্ন।”
ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে দেয়া এক বক্তব্যে ড. ইউনূস ট্রাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণ’ বা একটি অন্ধকার সময় হিসেবে অভিহিত করেন, যা হেকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া, সেসময়ে আরেকটি অনুষ্ঠানে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি ট্রাম্পকে কী বলতে চাইবেন, তখন এনবিসি নিউজকে ড. ইউনূস বলেন, ‘দেয়াল’ তৈরির পরিবর্তে ‘সেতু’ নির্মাণ করে দৃষ্টিভঙ্গি আরও উদার করার আহ্বান জানাতেন।
বলাই বাহুল্য ট্রাম্প ছেড়ে দেয়ার লোক নয়। এখন দেখার বিষয় কতটা ধরবে কী কী ভাবে ড. প্রফেস্যারকে।
আরেকটা বিষয়, এর আগেও দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বজুড়েই মার্কিন মানবিক সহযোগিতার কমেই দেয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য অনিশ্চয়তার জায়গা হিসেবে রয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু। কারণ জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসে, তার একটা বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউনুস সরকার কি ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলা করবেন? না কি বাংলাদেশের সংবাধিন নতুন করে লিখলে রোহিঙ্গাদের দুবেলা খাবার জুটে যাবে? কি বলে মাস্টার মাইন্ড?
বাংলাদেশে আমেরিকার স্বার্থের জায়গা কী?
ব্যবসা-বাণিজ্য, কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে দেখে, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূরাজনৈতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে।
বিশাল জনগোষ্ঠী ও সক্রিয় অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের প্রতি বাণিজ্যিক আকর্ষণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম, বোয়িং বিমান এবং গ্যাস এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক উপস্থিতি রয়েছে। প্রযুক্তিগত খাতেও মার্কিন কোম্পানিগুলোর সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ রয়েছে, যেমন ক্রেডিট কার্ড বা কম্পিউটার ব্যবহারে।
বৈদেশিক নীতিতে স্বার্থের সমীকরণ গুরুত্বপূর্ণ – কমনসেন্স ব্যবহার করে দেখুন তো ইউনূসশাহী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কটাকে কোথায় নিয়ে গেছে? দেশটাকে মবের মুল্লুক বানিয়ে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা ট্রাম্প প্রশাসন কখনো বইতে চাইবে না।
রিসেট আওয়ামী লীগ?
ট্রাম্প শপথ নিয়েই আওয়ামী লীগেকে ক্ষমতায় রিসেট করে দিবে! যারা এমন ভাবছেন তারা বোকার স্বর্গ বসবাস করছেন। ইতিহাস বলে, আওয়ামী লীগ কে কেউ কখনো ক্ষমতায় নিয়ে এসে বসাইনি। আওয়ামী লীগে কে নির্বচনের মাধ্যমে ম্যান্ডেট দিয়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেয় দেশের সাধারণ জনতা।
আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে রাজপথে অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে লাড়াই করে ইউনুস গ্যাযকে তাড়িয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে হবে। লাউড এন্ড ক্লিয়ার।
কী হবে ২০ জানুয়ারি ২০২৫?
তথাকথিত বৈষম্যের ফেরিওয়ালাদের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন হয়ে আসছে ট্রাম্প – একথা বলাইবাহুল্য। এই ট্রাম্প ট্রমা কাটাতে নতুন গল্প হাজির –
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বা আশআন্ত মধ্যপ্রাচ্যে এই বড় বিষয়গুলি নিয়েই মার্কিন প্রশমনেন অনেক বেশি মনোযোগ থাকবে। এই দুই যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বই একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চীন অথবা ইরানের ইস্যুও রয়েছে। সেসবের সামনে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবার সুযোগ থাকবে না ট্রাম্পের।
না এমন হবে না! ডোনাল্ট ট্রাম্প এবং তার রানিংমেট জে ডি ভান্সের তা ভুলার সুযোগ নেই। এদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কথার কথা না। আমেরিকা সব দিকেই নিজেদের স্বার্থ বা প্রয়োজনের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
বৈষম্যের মবদের কাছে শুধু বঙ্গপসাগরের উত্তের তীরের আঞ্চলের মিডিলক্লাস হয়নি হয়েছে প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝের দেশের সরকারের ভেতরের সরকারও। প্ল্যান ম্যাটিক্যুলাস করে বাংলাদেশে যে ব্লান্ডার করে ফেলেছে আঙ্কেল স্যাম এখন তাদের উল্টো রিসেট বাটন চেপে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্র হওয়া থেকে! ‘মডারেট মুসলিম’ রাষ্ট্র বানাবে এখানে সে আর ফাঁদতে পারবে না। তাদের এজেন্টদের লাগাম টানতে হবে যেন তারা বেলাগাম হয়ে আন্যকিছু করে ফেলে।
বাইডেন প্রশাসন থেকে এর মধ্যেই সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আর ট্রাম্প আসার পরে সেটা আরো দ্রুত গতিতে হবে সেই বার্তা ট্রাম্প এর মধ্যেই দিয়ে দিয়েছে।
আপনার করনীয়
পপকর্ন হাতে নিয়ে দেখতে থাকুন ‘বৈষম্য’ নামের স্ক্যাম করে ক্ষমতায় আসা মবরা কীভাবে পালায়।
আর সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ এবং ঢাকায় ছবির সমাপ্তির আগের কয়েটা ডায়লগের অন্যতম ডায়লগ ‘আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না’।
#ATeam 20241119