“পাকিস্তানের পাশে থেকে আমরা ‘বাংলাদেশের’ পক্ষে ছিলাম!”
গল্প:
১৯৭১ সালের এক গরম দুপুর। পাকিস্তানের সামরিক ক্যাম্পে চলছে এক গোপন বৈঠক। উপস্থিত দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। একজন পাকিস্তানি অফিসার মেজর ফাঁপরজান, অন্যজন জামাত নেতা মাওলানা গোলাম-সাফাই। সামনে ধোঁয়া ওঠা পিয়াজি আর একগ্লাস ঠাণ্ডা শরবত। তাদের আলোচনা: মুক্তিযুদ্ধ এবং নিজেদের অবস্থান নিয়ে সাফাই।
মেজর ফাঁপরজান বললেন, “মাওলানা সাহেব, আপনাদের দল তো আমাদের খুব সাহায্য করেছে। আল-বদর আর আল-শামসের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
মাওলানা গোলাম-সাফাই কাশতে কাশতে বললেন, “মেজর সাহেব, ভুল বলছেন। আমরা কোনো পক্ষ নিইনি। আমরা বরাবরই নিরপেক্ষ। আমাদের লোকেরা তো আসলে এলাকায় মশা তাড়ানোর জন্যই বেরিয়েছিল। কিন্তু মানুষ ভুল বুঝেছে।”
মেজর ফাঁপরজান অবাক হয়ে বললেন, “মশা? মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ মারা গেল, এর সঙ্গে মশার কী সম্পর্ক?”
মাওলানা গোলাম-সাফাই গম্ভীর মুখে বললেন, “দেখুন মেজর সাহেব, মশা বড় বিপজ্জনক। এরা মানুষকে বিদ্রোহী বানায়। আমরা কেবল শৃঙ্খলা আনতে চেয়েছিলাম। আমাদের আল-বদর আর আল-শামস তো আসলে শান্তির কর্মী।”
এমন সময় মুক্তিযোদ্ধা হাবলু খেপা এসে ঢুকে পড়লেন। তার মুখ রাগে টকটকে লাল। তিনি চিৎকার করে বললেন, “গোলাম-সাফাই, আপনার লোকেরা আমাদের গ্রামের অর্ধেক মানুষ ধরে নিয়ে গেছে। আর আপনি বলছেন মশা তাড়ানোর কথা?”
মাওলানা গোলাম-সাফাই জবাব দিলেন, “ভাই, আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। আমরা সবার ভালোর জন্যই কাজ করেছি। আমরা পাকিস্তানের পাশে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশেরও বিপক্ষে ছিলাম না। আমরা তো দুই পক্ষের মধ্যেই শৃঙ্খলা আনতে চেয়েছিলাম।”
হাবলু খেপা দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, “আপনারা শৃঙ্খলা আনার নামে নিরীহ মানুষ মেরেছেন, নারীদের নির্যাতন করেছেন, পুরো গ্রাম পুড়িয়েছেন। এসব কি শৃঙ্খলা?”
মাওলানা গোলাম-সাফাই কৌশলী হাসি দিয়ে বললেন, “দেখুন, বড় বড় কাজ করতে গেলে ভুল হতে পারে। ইতিহাস আমাদের ভুল বুঝেছে। আমরা তো আসলে শান্তির পক্ষে কাজ করেছি।”
মেজর ফাঁপরজান এবার গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, শান্তি আনতে গিয়ে কিছু উল্টাপাল্টা হয়েই যায়। কিন্তু আমাদের দুঃখ হয় যে, আপনারা নিজেদের অবস্থান ঠিক বুঝাতে পারেননি।”
হাবলু খেপা এবার গর্জে উঠলেন, “আপনারা পাকিস্তানের গোলাম, বাংলাদেশের শত্রু! মানুষ এসব মিথ্যা সাফাই বিশ্বাস করবে না। আপনাদের হিসাবের দিন আসবেই।”
গোলাম-সাফাই আর ফাঁপরজান একে অপরের দিকে তাকালেন। টেবিলের পিয়াজি আর শরবত ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। বাইরে শোনা যাচ্ছে জনতার শ্লোগান: “জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু!”
জামাতের ‘নিরপেক্ষতা’র দাবি শুনলে যে কেউ হাসবে। “আমরা বাংলাদেশের পক্ষেও ছিলাম, আবার পাকিস্তানেরও” বলা আসলে ইতিহাসকে বোকা বানানোর চেষ্টা। কিন্তু এই মিথ্যা সাফাই ইতিহাসের কাছে কখনো টিকবে না।
💡ডিসক্লেইমার:
এই লেখাটি সম্পূর্ণ রম্য ও ব্যঙ্গাত্মকভাবে রচিত। এর উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তিগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে আঘাত করা নয়। এটি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক সত্য ও প্রচলিত মতামতের ওপর ভিত্তি করে একটি হাস্যরসাত্মক গল্প হিসেবে পরিবেশিত হয়েছে। ইতিহাসের দায়িত্বশীল ব্যাখ্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে, লেখাটি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য তৈরি। পাঠকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনার পার্থক্যকে সম্মান জানানো হচ্ছে।
#ATeam 20241164