৪ হাজার কোটি টাকা সোনালী ব্যাংকের জন্য কিছুই না। এই বহুল আলোচিত ডায়ালগের কথা নিশ্চয়ই আমাদের স্মরণ আছে। বলুনতো এই ডায়ালগ কার?
হুম, ঠিকই ধরেছেন, হলমার্ক কেলেংকারির পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন ডায়ালগ দিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন যে, সোনালী ব্যাংক বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়, সেই তুলনায় এটি মাত্র ১০ শতাংশ।
আচ্ছা ধরুন, সেদিন মুহিত সাহেব যদি বলতেন, ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের কারণে সোনালী ব্যাংক দুর্বল বা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে, কী অবস্থা দাঁড়াতো? আমি নিশ্চিত পরদিনই সোনালী ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেত! কীভাবে?
একটা ব্যাংক চলে প্রধানত: আমানতকারীদের কনফিডেন্সের উপর। কনফিডেন্স হারালে নতুন আমানত জমা তো কেউ করবেই না, উল্টো সবাই একযোগে টাকা উঠানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
কিন্তু জমা না পড়লে ডিমান্ড অনুযায়ী ব্যাংক একচেটিয়া ক্লায়েন্টদের টাকা বেশী সময় ধরে দিয়ে যেতে সক্ষম হবেনা, কারণ ব্যাংকের বেশীর ভাগ টাকা ঋণে বিনিয়োগ করা থাকে। চাইলেই সেই টাকা মেয়াদের আগে উঠায়ে আনতে পারবে না।
সেদিন মুহিত সাহেবের সেই ‘কুখ্যাত’ ডায়ালগের কারণে সোনালী ব্যাংক সেইফ হয়ে গিয়েছিলো।
এটা হলো অর্থনীতির ম্যানেজমেন্ট, যেটা কেবল একজন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব। মুহিত সাহেব অর্থনীতিবিদ হলেও সেই ডায়ালগ দিয়েছিলেন রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে।
আর ইউনুস সরকার আসার পরপরই অথর্ব গভর্নর ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনার যেই ঘোষণা দিলেন, তার ফল কী দাড়ালো?
বাংলাদেশের সব ব্যাংক একযোগে হল্টেড হয়ে গেল! টাকা উঠানোর জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো। কারণ, মানুষ এও জানে না, কোন সেই ১০ ব্যাংক। এতে করে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোও এক/দুই লাখের উইথড্রয়াল সিলিং দিতে বাধ্য হলো।
অর্থ অপদেষ্টা বা গভর্নর কেউ যদি ১০টি ব্যাংকের নাম মেনশন করে দিতেন, নিদেনপক্ষে বাকী ব্যাংকগুলো বিপদে পড়তো না। আর যদি এই ইমম্যাচিউর ঘোষনাই না দিতেন, কোনও ব্যাংকই বিপদে পড়তো না।
অথচ, আজ ঐ দুর্বল ব্যাংকগুলোতে অর্থ সরবরাহ দেয়া হলেও এরা দাঁড়াতে পারছে না, কারণ আমানতকারীরা কেউ টাকা রাখছেনা- সবাই নিয়েই যাচ্ছে। কনফিডেন্স একেবারেই জিরো।
অর্থ অপদেষ্টা বা গভর্নরের দোষ দিয়ে লাভ নেই। উনারা অর্থনীতিবিদ হলেও রাজনীতিবিদ নন। অর্থনীতির ম্যানেজমেন্ট তাদের জানার কথা না।
একই থিউওরি প্রযোজ্য দেশ পরিচালনাতেও। দেশ চালাতে বিজ্ঞ হওয়া লাগে না, লাগে অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। আর সেই প্রজ্ঞার অভাবেই ব্যাংকের মত আজ দেশও দেউলিয়া হবার পথে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তাওফিক দিক।
#ATeam 20241170