২০ নভেম্বর। এ লেখাটা যখন লিখছি, তখন ধানমন্ডির সাইন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে ঢাকা কলেজ আর ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। বুধবার দুপুর থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলছে। প্রচুর ছেলে আহত হয়েছে, হচ্ছে।
ঢাকা কলেজ দেশের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ঐতিহ্য অন্যরকম। আর ঢাকা সিটি কলেজে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এই কলেজটি ২২ দিন আগে তুমুল সংঘর্ষ করে এতদিন বন্ধ ছিল। আর খোলার সাথে সাথে আবারো এই ভয়ানক লড়াই শুরু হলো দুই কলেজের ভেতরে।
দেশে এখন সংঘর্ষ, মারা’মারি, হ’ত্যা, খু’ন, জ’বাই, রগ’কাটা, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি শব্দগুলো অতি পরিচিত। সারাক্ষণই কিছু না কিছু হচ্ছে। এর মধ্যে লক্ষণীয় হলো, শিক্ষার্থীরা সারাক্ষণই রাজপথে আছে। হয় মারামারি করছে, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দিচ্ছে, ঘেরাও করছে, দাবি দাওয়া নিয়ে অবরোধ করছে, দল বেধে আসছে বা কাউকে থ্রেট দিচ্ছে। তারা সর্বত্র আছে। শুধু নেই সেখানে, যেখানে তাদের থাকার কথা – ক্লাসরুমে। তারা আর ক্লাস করে না। পড়ালেখা নিয়ে তাদের চিন্তা নেই। তাদের মাথায় ঘোরে কোথায় কোন্ হিন্দু শিক্ষক আছেন, তাকে টেনে নামাতে হবে। অপমান করতে হবে। রাষ্ট্রপতিকে হটাতে হবে। তাদের পছন্দের লোককে নতুন উপদেষ্টা করতে হবে। অপছন্দের লোককে সরিয়ে দিতে হবে, কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দিতে হবে – এইসব।
বাড়িতে এই ছেলেমেয়েরা কী করে, কে জানে। হয়তো সেখানেও বাবা মায়ের সাথে, ভাইবোনের সাথে কিছু না কিছু ঝামেলা বেধে থাকে তাদের। স্বাভাবিক নিয়মেই তা হওয়ার কথা। যে উত্তেজনা সে বাইরে থেকে বয়ে আনে, মাথায় নিয়ে ঘোরে, সেই অযাচিত উত্তেজনাকে সে ঘরে এসেই ভুলে বসে থাকবে, দৈনন্দিন জীবনে তার কোনো প্রভাব পড়বে না, এটি হবার না।
এই ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যৎ গেছে। এরা নিজেদেরকে যাদের হাতে তুলে দিলো, তুরুপের তাসের মতো ব্যবহৃত হতে দিল, যারা তাদের সুতো নাড়া পুতুল বানিয়ে ছেড়ে দিল রাস্তায়, মাঠে, ময়দানে – ওরা জানলোই না তারাই ওদের আসল শত্রু। বোকা, মূর্খ ছাত্ররা; ইতিহাস-দেশ-সংস্কৃতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কেয়ার না করা, না জানা, নিজের স্বার্থে ব্যস্ত থাকা এই জেনজি প্রজন্ম নিজের ধ্বংস ডেকে আনলো নিজের হাতে। তাতে ইন্ধন যোগালেন তাদেরই বাবা মা, বন্ধু, প্রতিবেশি, আত্মীয়রা। নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভে কিছু লোক ব্যবহার করলো ছাত্রদের। আর কিছু লোকের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক চিন্তাপ্রসূত ঘৃণা, প্রতিশোধস্পৃহা আর মূর্খতার বলী হলো ওরা। ওরা ক্লাসরুম ভুলে গেল। ওরা শিক্ষককে সম্মান করতে ভুলে গেল। ওরা শিখলো চিৎকার করতে, গালিগালাজ করতে। অসভ্য, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে ওরা আন্দোলনের নামে মাঠ কাঁপালো। কিন্তু ওরা শেষ পর্যন্ত কী পেল?
কখনো কি ওরা ভেবে দেখেছে, আদতে কী পেল ওরা? ভেবে দেখেছে কি ওদের অভিভাবকরা?
জলবায়ু সম্মেলনে গিয়ে ড. ইউনুস আল জাজিরাকে ইন্টারভিউ দিলেন। এরপর পর পর আরো কটি ইন্টারভিউ এলো তার। ভারতের দ্য হিন্দু’কে দিলেন। এরপর বণিকবার্তায় তার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার। জানা গেল, তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছের বাইরে যাবেন না। তারা যদি চায় তিনি দ্রুত নির্বাচন দেন, সংস্কার লাগবে না; তাহলে তিনি নির্বাচন দিয়ে চলে যাবেন।
ড. ইউনুস যখন মিডিয়ার সামনে কথা বলেন, ওনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, ভাষা, কথা বলার ধরণ খেয়াল করি। ভাবখানা এমন তিনি একজন মহান রাজাধিরাজ। এই অশিক্ষিতের দেশে তিনি নিতান্ত বাধ্য হয়ে এসেছেন জাতিকে উদ্ধার করতে। কিন্তু জাতির উদ্ধার হবার কোনো ইচ্ছে নেই। উনারও এতো দায় ঠ্যাকেনি। উনার বহু কাজ আছে। উনি এসব ফালতু দেশ উদ্ধার না করে সেই বড় বড় কাজে চলে যেতে চান। জোর করে উনাকে তাও রাখা হয়েছে। উনি এ কারণে অত্যন্ত বিরক্ত।
আজ উনি আরো একটা মজার কথা বলেছেন বণিকবার্তাকে। উনি বলেছেন, উনাদের উপদেষ্টারা নাকি এতো কম বেতন পায় যে বাচ্চার স্কুলের বেতন নাকি দিতে পারছে না। শুনে ভাবলাম, এত অতিবুড়ো এবং অতিকচি উপদেষ্টামণ্ডলে স্কুলে পড়া বাচ্চা আসলে কার আছে? সম্ভবত আসিফ নজরুলের আছে। কিন্তু যতদূর জানি তার বাচ্চারা আগে থেকেই ভাল ভাল স্কুলে পড়তো এবং এখনও পড়ে। এবং তার স্ত্রী শিলা আহমেদ মার্কিন দূতাবাসে বড় পদে কাজ করেন। এখনও করছেন। তাহলে তার বাচ্চার স্কুলের ফি দিতে এতো কষ্ট কেন হয়?
যা হোক, মিথ্যেবাদীর ছলের অভাব হয় না। ড. ইউনুস ও তার গ্যাং এর ছলনার শেষ নেই। এইসব ছলনাই তারা আগাগোড়া করে আসছে। আরো করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে, একটি দেশের এগিয়ে যাওয়াকে রুদ্ধ করে, একটি দেশের একটি প্রজন্মকে বিপথগামী করে সমস্ত দেশের উপর একটি প্রতিশোধ নিতেই এই ছলনা। প্রতিশোধ তারা নিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের। পুরোনো শকুনের সাথে হাত মিলিয়ে পুরো বন্দোবস্তটি সাজানো হয়েছে। যার অত্যতম রূপকার এই ড. ইউনুস। তাই ছাত্রদের দিয়ে তথাকথিত আন্দোলন করিয়ে নিয়ে ঝাড়া হাত পা হয়ে গেছেন তিনি ও তারা। তাদের আর কোনো দায় নেই এদের ক্লাসে ফেরানোর। স্বার্থ উদ্ধার তো শেষ। আর কেন ভাববেন উনি দেশের সন্তানদের কথা? যেভাবে ভাবেন নাই আন্দোলনে প্রাণ হারানো অসংখ্য তরুণের কথা, শিশুর কথা – যারা ওৎ পেতে থাকা স্নাইপারের গুলিতে নিহত হয়েছে। তাদের লা’শ প্রয়োজন ছিল। তাই লা’শ পড়েছে। এখন আর আন্দোলনে আহতদের নিয়েও তারা ভাবতে চান না। বিকলাঙ্গ অসংখ্য তরুণ শরীর ও মনে ক্ষত নিয়ে পড়ে আছে, তাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। তাদের প্রতি ভরসার হাত বাড়ায়নি কেউ। ফলে আহত ছেলেরা হাসপাতালের বেড থেকে উঠে এসে স্লোগান দিয়েছে- ‘‘তোরা বাটপাড়’’।
এই তো এখন দেশের পরিস্থিতি। হয়তো ড. ইউনুস এখন পশ্চিমা চাপে পড়ে আস্তে আস্তে নিজের অবস্থান পাল্টাচ্ছেন। পাল্টাতে তো হবেই। করার কিছু নেই। তিনি পুতুল মাত্র। শুধু ভাবছি তার মাস্টারমাইন্ড জঙ্গীরা কি তাকে ছেড়ে দেবে! তাদের সব প্ল্যান তো ভেস্তে যাবে তিনি যদি পথ পাল্টান! তাহলে দেশকে আবারো পাকিস্তান বানানোর, মৌলবাদী রাষ্ট্র বানানোর যে চক্রান্ত তারা করেছে, সেই চক্রান্ত তারা বাস্তবায়ন করবে কীভাবে?
দেখা যাক, কী হয় শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা পদে বসে থাকা আমাদের প্রফেসর ইউনুস সাহেবের।
#ATeam 20241172