মাজাভাঙ্গা পাইক্যাদের মহাজনীয় পুনরুত্থান

‘মাজাভাঙ্গা পাইক্যাদের মহাজনীয় পুনরুত্থান’

১৯৭০’র নির্বাচন এই ভূ-খণ্ডের জনগণের জন্য ছিলো মুক্তির লড়াই। ভোটের সিদ্ধান্তটা সেসময় চলে এসেছিলো বাংলাদেশ না পাকিস্তান প্রশ্নে। ২৩ বছরের শোষণের জবাব হিসেবে মানুষ সে নির্বাচনে আসলে আওয়ামী লীগ রূপে বাংলাদেশকে ভোট দিয়েছিলো। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সরাসরি নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ আসনের ভেতর ১৬০টি আসনে বিজয়ী হলেও ভোটের হিসেবে তারা পেয়েছিলো ৭৪.৯ শতাংশ ভোট। অবাঙালি কিছু ভোটারকে বিবেচনায় নিলে সে নির্বাচনে ২০-২৫ শতাংশ বাঙালি ভোটার আসলে পাকিস্তানের পক্ষে সিল মেরেছিলো। এই মানুষগুলো পরবর্তীতে বংশবিস্তার করেছে প্রবলভাবে। এদের যে অংশ রাজাকার-আলবদর হয়েছিলো তারা লুটের মাল দিয়ে তাদের সন্তানদের দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষিত করেছে। অর্থ, শিক্ষা ও ক্ষমতার জোরে এদের অনেকেই সিভিল সোসাইটি ও কর্পোরেট সেক্টরের মাথা হয়েছে। ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পর বহাল তবিয়তে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী বুদ্ধিজীবী, কবি সাহিত্যিকরা এদের ছেলেপুলেদের বুদ্ধিজীবী সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শহিদুল আলম ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই দুই নাম করা সিভিল সোসাইটির নেতাদ্বয় খাঁটি রাজাকার সন্তান। এদের মতো বক্তব্য যারাই প্রদান করে তাদের বেশিরভাগেরই অতীত ইতিহাস ঘাটলে এমন কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে। সমস্যা হলো, তখনকার এই ২০-২৫ ভাগ মানুষের ভেতর সরাসরি রাজাকার- আলবদর হয়েছিলো অল্প কিছু মানুষ। বাকিরা নিভৃতে নিজ পরিবারে, নিজ বংশধরদের ভেতর সযত্নে গড়ে তুলেছে এক সুপরিসর পাকিস্তানী মনস্তত্ত্বের বটবৃক্ষ। এই গোষ্ঠীটি একটু ট্রিকি, যেহেতু তারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে নাই তাই পরবর্তীতে তাদের একটি বড় অংশ জামাতের পর্বতসম অপরাধের বোঝা নিজেদের কাঁধে নিয়ে হাত নোংরা করেনি। এরা সাধারণ জনগণ ছদ্মবেশে তাদের অন্তরের পাকিস্তানী সত্তাকে সমাজে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এমনকি সেটা বর্তমানের মাজাভাঙ্গা পাকিস্তান হলেও।

পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনীতির দিক থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার উপর নির্ভরশীল ছিলো। বাংলাদেশ আলাদা হয়ে যাবার পর থেকেই তাদের প্রকৃত পতনের শুরু। বর্বর চিন্তাচেতনা, দীর্ঘ সামরিক শাসন, জঙ্গিদের সেইফ হ্যাভেন সহ নানা কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

ধর্মীয় চেতনাকে পুঁজি করে মার্কিন ইকোসিস্টেমের ভেতরে থেকে অদ্ভুত এক মতাদর্শ নিয়ে চলছে এই বর্বর দেশটি। তারা একিই সাথে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, রাজনীতি করে নিজেদের জনগণকে গাধার মতো নাচাচ্ছে অন্যদিকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের মুসলিম দেশগুলোতে আগ্রাসন চালাতে সহযোগিতা করছে। তাদের মিলিটারি বেসগুলো এইসব সাম্রাজ্যবাদীদের ব্যবহার করতে দিয়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব তারা বন্ধক দিয়েছিলো বহু আগেই।

বাংলাদেশের পা’কিপন্থি মানুষগুলোর ভেতরেও একি রকম প্রবণতা দেখা যায়। তারা একি সাথে ফিলিস্তিনের মানবিক বিপর্যয় দেখে উহু-আহা আর ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বকে গালি-গালাজ করছে অন্যদিকে এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক সরকারের ষড়যন্ত্রে নিজেদের দেহ-মন সব বিলিয়ে দিয়েছে, একই সাথে আনন্দের সাথে বগল বাজিয়ে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের পরম বন্ধু হিসেবে ফিলিস্তিন আগ্রাসনে সমর্থন এমনকি ইসরায়েলপন্থিদের ডোনেশন দেওয়া ড.ইউনুসকে।

( তথ্যসূত্র- https://www.jewishfoundationla.org/grant/grameen-america-inc/ )

পাকিস্তান বর্তমানে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি,২০২৪ এ ডয়চে ভেলের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার ৩০ শতাংশেরও বেশি৷ সরকারি হিসেবেই প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছেন৷ রাষ্ট্রীয় ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ৭২ শতাংশ ছুঁয়েছে৷ ’

( তথ্যসূত্র- https://www.dw.com/bn/ভয়াবহ-অর্থনৈতিক-পরিস্থিতির-মুখে-পাকিস্তানের-নতুন-সরকার/a-68212767 )

একই সময়ে প্রকাশিত প্রথম আলোর এক রিপোর্টে দেখা যায়, ‘দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। যা এক বছর আগেও ছিল মাত্র ৩১০ কোটি ডলার। ১ ডলারে ২৭৯ পাকিস্তানি রুপি পাওয়া যায়। উল্লেখ্য পাকিস্তানের জনসংখ্যা সাড়ে চব্বিশ কোটি।’

( তথ্যসূত্র- https://www.prothomalo.com/business/world-business/s444c3bja2 )

পাকিস্তানের বর্তমান জিডিপি ৩৩৮ বিলিয়ন ডলার ( বাংলাদেশ ৪৩৭ বিলিয়ন ডলার)। মাথাপিছু জিডিপি ১৪০৭ ডলার (বাংলাদেশ ২৫২৯ ডলার )। অর্থনীতির প্রতিটা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যোজন যোজন দূর পিছিয়ে পাকিস্তান। খুব বেশি দিন হয় নাই পাকিস্তানের মানুষেরা আর্তনাদ করেছিলো এই বলে যে, ‘ আমাদের বাংলাদেশ করে দাও।’

( তথ্যসূত্র- https://youtu.be/kO8lVv4SXdE?si=5QAlsgL5H6TbX4G6 )

পাকিস্তানকে এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কেউই আসলে গোণায় ধরে না। বিদেশি সাহায্যে শরণার্থীদের মতো চলছে এই দেশটি। অন্যদিকে বেলুচিস্তান সহ বেশ কিছু প্রদেশে মুক্তির জন্য আন্দোলন বিদ্যমান দেশটিতে। তাই পাকিস্তান নিজেই কবে শুধু পাঞ্জাবস্তান হয়ে যায় তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

যে পারমাণবিক অস্ত্রই বর্তমানে তাদের লম্ফঝম্ফ করার একমাত্র উপকরণ সেটাও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে চলে যাওয়ার (লুজ নিউক) আশঙ্কা রয়েছে অনেকদিন ধরেই।

এই মাজাভাঙ্গা ফেইল্ড স্টেটকে তুলে এনে তার পেছনে গৃহপালিত কুকুর হিসেবে বাংলাদেশকে রাখার জন্য এক মেটিক্যুলাস প্ল্যান তৈরি করেছে আমাদের মহাজন ইউনুস। তার ক্ষমতায় আসার পেছনে যে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট সরকার মূল ভূমিকা পালন করেছে, তা এখন আর কারো অজানা নয়। এখানে বাংলাদেশে একদম ফিল্ডে প্ল্যান বাস্তবায়ন করেছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। মজার ব্যাপার হলো, নির্বাচনের পর মহাজনের মাথার উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হাত উঠে গেছে। বাকি রইলো খালি পাকিস্তান।তাই, এই মুহূর্তে যে এই শান্তির পায়রা কেবল পাকিস্তানের কথায় দেশ চালাচ্ছে এটা যৌক্তিকভাবে নিশ্চিত।

পাকিস্তান বাংলাদেশ হতে চায়, এইটা বেশিরভাগ পাকি পলিটিশিয়ানদের জন্য একদম বেল্টের নিচে আঘাত। এইজন্য তাদের গত ৫৩ বছরের পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারের ক্রেডেবিলিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের যেন মুখ আর না পুড়ে সেজন্যই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মানুষটি প্রথমে বাংলাদেশের ইকোনমিক স্ট্রাকচার ধ্বংস করে দিয়েছে।

এই এনজিওগ্রাম সরকার দায়িত্ব নেবার পরপরই, গত ২৯শে আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ এ ‘Defence Pakistan’ নামে একটি এক্স হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশ করা হয় যে, বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণে আর্টিলারি শেল ও আরডিএক্স কিনছে।

( তথ্যসূত্র- https://x.com/Defence_PK99/status/1829038586320056597 )
অক্টোবর ২, ২০২৪ এ পাকিস্তানি পণ্যকে লাল তালিকা মুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার।

( তথ্যসূত্র- https://www.deshrupantor.com/540928/লাল-তালিকামুক্ত-হলো-পাকিস্তানি-পণ্য )

অক্টোবরের একদম শেষের দিকে আন্দোলনের প্রায় তিন মাস পর আউট অব নোহোয়্যার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম প্রথম তাদের সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা ছিলো বলে জানান। এতো বৈপ্লবিক একটা সিদ্ধান্ত তারা এতোদিন কেন জনগণকে জানান নাই এটা আসলে মিলিয়ন ডলার’স কোয়েশ্চেন।

১১ই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো পাকিস্তানি কনটেইনারবাহী একটি জাহাজ তিনশোরও বেশি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। সেদিনই পণ্য খালাস করে ১২ই নভেম্বর জাহাজটি চলে যায়, মূলত জাহাজটি পোর্ট ছাড়ার পর সেটির খবর বের হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। অন্যদিকে জাহাজে কী পণ্য আছে তা কোন গণমাধ্যমে আসে নাই।

( তথ্যসূত্র- https://www.banglatribune.com/country/chitagong/872946/ )

এই জাহাজটি বাংলাদেশে নোঙর করার খবরটিও ‘Defence Pakistan’ নামের এক্স হ্যান্ডেলটি থেকে প্রকাশ করা হয়।
( তথ্যসূত্র- https://x.com/Defence_PK99/status/1857074185916314063 )

জাহাজটি বাংলাদেশে আসার একদিন আগে পরে একজন সমন্বয়ক সশস্ত্র বিপ্লবের সম্ভাবনা এখনো যে শেষ হয়ে যায় নাই সেটা উল্লেখ করেন।

তাহলে এই জাহাজে আসলে কী ছিলো? একটু অপেক্ষা করলেই তা জানা যাবে হয়তো। কার্পেট ও কসমেটিকসের গল্প ফাঁদার জন্য কিছুটা সময় দরকার বৈকি।

হাস্যকর ব্যাপার হলো যে, এই আমদানিকৃত নিম্নমানের পাকি লং রেঞ্জ শেল কাজের সময় যে একদমই ঠিকঠাক মতো ফুটে না তা ইউক্রেন যুদ্ধেই প্রমাণিত হয়েছে।

( তথ্যসূত্র- https://www.bbc.com/news/world-europe-65347835 )

রিসেটবাবাকে যে সশস্ত্র সংগ্রাম করে নয়া জাতির পিতা বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে দুই নম্বুরি সরঞ্জাম ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে এইটা কি সে বুঝতে পারছে?

এই মাজাভাঙা পাইক্যাদের পুনরুত্থানের দায়িত্ব আরআইএসএসসি সারটিফাইড প্রভাবশালী মুসলিম ড ইউনুস স্বেচ্ছায় এখন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

তিনি অচল অস্ত্র কিনে পাকিদের রিজার্ভ ভরছেন। বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টর ধ্বংস করে পাকিস্তানের গারমেন্টস শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাচ্ছেন। পাকিস্তানের হয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের জন্য যুদ্ধ করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। অন্যদিকে দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের ‘বাংলাদেশের মতো হও’ এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করার ছক কষছেন। আসলে নিজের ঘর জ্বালিয়ে অন্যের ঘরের শান্তি রক্ষা করার মতো মহত্ত্ব তো সবাই দেখাতে পারে না।কে জানে, হয়তো এই জন্যই ড কিজানিকি শেষ বয়সে এসে তার দ্বিতীয় নোবেলটি পেয়ে যাবেন।

একটু অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা দিয়ে লেখাটি শেষ করা হবে। ২৩ বছরের ক্রমাগত তীব্র শোষণের পর মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো। এই যুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মাত্র ১২ জন বাঙালি মেজর দেশের জন্য লড়েছিলেন। অন সার্ভিস হিসেবে মেজরের উপরের র‍্যাংকের কোনো অফিসারের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কথা শোনা যায় নাই। কী বোঝানো হচ্ছে আশা করস যায় সবাই বুঝতে পারছেন। সেনাবাহিনীর যারা আছেন, আপনারা কেউ কি এই লেখাটা পড়ছেন? আপনাদের এখনকার এই কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার, মেজর জেনারেল এইসব পদপদবি কিন্তু তিরিশ লক্ষ শহিদ আর আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে কেনা। দেড়-দুই লক্ষের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধার অকল্পনীয় সাহসের বিনিময়ে অর্জিত। এই বীর যোদ্ধাদের আজ আপনাদের প্রশ্রয়ে সমন্বয়ক নামের জঙ্গিদের দ্বারা জনসম্মুখে নির্যাতিত হতে হচ্ছে। আপনাদের যে অংশটি পাকিস্তানের প্রতি এখনো গভীর টান অনুভব করে থাকে (গুটি কয়েক সেনাসদস্যের কথা বলা হচ্ছে), তারা কি অনুভব করতে পারছেন না, আপনাদের পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের স্বদেশটি একসময় আপনাদের পূর্বপুরুষদেরই ছিলো এবং তারা সেই দেশটিতে ট্রিটেড হয়েছিলেন নিকৃষ্টতমভাবে।

#ATeam 20241183

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *