ফিরে এলো পালনবাদ

দেশ চালতে দর্শন লাগে, মতবাদ লাগে। আওয়ামী লীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরে তা পুরোপুরি শূন্য। প্ল্যান ম্যাটিকুলাস ক্ষমতা দখলকারীরা সেই শূন্যতা পূরণে খুঁজে নিয়ে এসেছে সোবহানী-হাশেম-ভাসানীদের পালনবাদ বা রুবুবিয়াত (রবুবিয়াত)।
পালনবাদ কী?

একটি রাজনৈতিক ও তাত্ত্বিক ধারণা যা মূলত মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল এবং ষাট-সত্তরের দশকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এটি একদিকে ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সংশ্লিষ্ট, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক চিন্তার সঙ্গে সংলাপ তৈরি করে। পালনবাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল শোষিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি মুক্তিকামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

পালনবাদ ও সমাজতন্ত্র: মিল ও অমিল

পালনবাদকে কেউ কেউ “ইসলামী সমাজতন্ত্র” বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এর মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সমাজতন্ত্রের আদর্শ উভয়ের প্রভাব। তবে এ দুটির মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্যও রয়েছে। যেমন:

● পালনবাদে ধর্মীয় মূল্যবোধের গভীর উপস্থিতি রয়েছে, যেখানে সমাজতন্ত্র ধর্মকে সাধারণত উপেক্ষা করে বা তা থেকে দূরে থাকে।

● সমাজতন্ত্র একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং কাঠামোর উপর ভিত্তি করে কাজ করে, কিন্তু পালনবাদ ছিল বেশি আধ্যাত্মিক ও জীবনঘনিষ্ঠ।

পালনবাদের তাত্ত্বিকতা

পালনবাদ একটি সুসংগঠিত তত্ত্ব ছিল না। এটি মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বক্তৃতা ও আন্দোলনের মাধ্যমে কিছুটা বিকশিত হয়। আজাদ সোবহানি এবং আবুল হাশিম পালনবাদের তাত্ত্বিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করেছিলেন।

● মওলানা আজাদ সুবহানি পালনবাদের বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন।
● আবুল হাশিম পালনবাদের তত্ত্বকে আরও সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং এটিকে টোটালিটারিয়ান তত্ত্বগুলোর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।

যদি পালনবাদ সেই সময়ই বিকশিত হতো, তবে পালনবাদের অন্তত তিনটা ধারা তৈরি হতো:
১. এক্সপেরিমেন্টাল বা পরীক্ষাধর্মী গোষ্ঠীদের জন্য আজাদ সোবহানির তত্ত্ব,
২. লিবারাল ও উচ্চশিক্ষিতদের জন্যে আবুল হাশিমের তত্ত্ব,
৩. প্রলেতারিয়েত বা সাবঅল্টার্নদের জন্য মওলানা ভাসানীর তত্ত্ব।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট:
পালনবাদ একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ধারণা, যা পালনকর্তা সর্বাত্মক কর্তৃত্ব ও শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মতবাদটি কার্যকর না হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে:

১. সমাজে অপ্রাসঙ্গিক: ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে পালনবাদ অকার্যকর, কারণ এসব সমাজে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার চেয়ে বৈজ্ঞানিক ও বস্তুগত ব্যাখ্যাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

২. প্রকৃত সমস্যার উপেক্ষা: অনেক সময়, এই ধারণা মানবসৃষ্ট সমস্যাগুলোর জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি থেকে রেহাই দেয়। উদাহরণস্বরূপ, “সৃষ্টিকর্তাই সব ঠিক করবেন” এই মনোভাব সমস্যার কার্যকর সমাধানে বাধা সৃষ্টি করে।

৩. বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সঙ্গে সংঘর্ষ: আধুনিক বিজ্ঞান সৃষ্টির প্রাকৃতিক নিয়ম বা কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে পারে, যা পালনবাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রোগের জন্য নিয়তির পরিবর্তে বিজ্ঞান রোগের কারণ এবং সমাধান খুঁজতে উৎসাহী।

৪. বৈষম্য সৃষ্টি: পালনবাদ অনেক ক্ষেত্রে সমাজে দারিদ্র্য, বৈষম্য, বা অন্যায়ের জন্য অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়, কারণ এটি প্রায়শই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা বা পরিক্ষার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। এর ফলে, সমস্যাগুলোর বাস্তব সমাধান খোঁজার পরিবর্তে মানুষ কেবল ধৈর্য ধরতে বা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত হয়।

৫. বহু-ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য: বাংলাদেশ একটি বহু-ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দেশ। এখানে ইসলাম প্রধান ধর্ম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও রয়েছেন। রুবুবিয়াতের মতো একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এই বৈচিত্র্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

৬. সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা: বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে, যেখানে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। রুবুবিয়াতের মতো একটি ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা সংবিধানের এই মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

৭. রাজনৈতিক বাস্তবতা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মতের সহাবস্থান রয়েছে। পালনবাদের মতো শাসনব্যবস্থা এই বহুমাত্রিক রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

৮. তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা: পালনবাদ একটি পূর্ণাঙ্গ তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করতে পারেনি। এটি ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, এবং সমাজতান্ত্রিক ধারণার একত্রিত মিশ্রণ হলেও বাস্তবায়নের উপযুক্ত রূপরেখা নেই।

৯. নফসানিয়াত এবং রুহানিয়াত: নফসানিয়াত (লোভ ও আত্মকেন্দ্রিকতা) এবং রুহানিয়াত (আধ্যাত্মিকতা) এর মধ্যে সমন্বয়ের উপর জোর দেওয়া হলেও, আধুনিক অর্থনীতিতে এই ধরণের সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব।

১০. ব্যক্তিমালিকানার বিরোধিতা: পালনবাদে ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সংঘর্ষিক, কারণ এ দেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা-কেন্দ্রিক। অধিকাংশ মানুষ তাদের নিজস্ব সম্পদ বা ব্যবসার উপর নির্ভরশীল, যা তাদের জীবিকার মূল ভিত্তি। ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদ করলে এই অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়বে এবং সামগ্রিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে। বর্তমান পুঁজিবাদী ও উদার অর্থনৈতিক কাঠামোতে ব্যক্তিমালিকানা গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত, যা থেকে সরে আসা বাস্তবসম্মত নয়।

১১. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বৈচিত্র্যময়। রুবুবিয়াতের মতো একটি শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

কেন পালনবাদ?

বঙ্গবন্ধুকে দেশের রাজনীতি থেকে সরাতে হলে যে বিশাল শূন্যতা তৈরি হয় তা কাটাতে ‘প্ল্যান ম্যাটিকুলাস’-এর দ্বিতীয় ফেজে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, আবুল হাশিম এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কে ব্যবহার করছে। কিন্তু সমস্যা হলো এই পাঁচ জননেতার রাজনীতির ছিল বাঙালির জাতীয়তাবাদের রাজনীতি, সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, ফাংশন্যাল গণতন্ত্র প্রতিষ্টা এবং রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা। যে রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে। তাহলে উপায়? আবুল হাশিম এবং মাওলানা ভাসানীর শেষ জীবনের পলিটিক্যাল থিউরি ছিল ‘পালনবাদ’। যেটা থিওরিটিক্যালি ডেভেলপ নয়। কিন্তু মুজিববাদের অন্ট্রানেটিভ হিসাবে যখন কিছু একটা পাওয়া গেছে, মব-এর মুল্লাকের মব’রা এখনে সেটা প্রতিষ্ঠা করবে।

কোনটা রেখে কোনটা?

এবার একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যায়। উদাহরণটা অবশ্যই পাকিস্তানের।
জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা নেতা মওদুদীর নেতৃত্বে কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়েছিল। পাঞ্জাবের কাদিয়ানিবিরোধী দাঙ্গায় কতজন নিহত হয়েছিল, তার সঠিক সংখ্যা বের করা হয়নি। সংখ্যাটি আনুমানিক ২০০ থেকে ২ হাজার।

এবার আসি মূল কনট্যাক্সে। বড়লাট (গভর্নর জেনারেল) মালিক গোলাম মুহাম্মদ এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া (সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী)’র সরকার ১৯৫৩ সালের ১৯ জুন পাঞ্জাবে ও অন্যান্য স্থানে দাঙ্গার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান ছিলেন বিচারপতি এম মুনির (পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি, ১৯৫৪-১৯৬০) এবং সদস্য ছিলেন বিচারপতি এম আর কায়ানি (পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি, ১৯৫৮-১৯৬২)। কমিটি কাজ শুরু করে পয়লা জুলাই। অনুসন্ধান শেষ হয় ১৯৫৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১০ এপ্রিল।

অনুসন্ধান কমিটি সংশ্লিষ্ট ও প্রাসঙ্গিক অনেকের সাক্ষাৎকার নেয়। চারজন উলেমার কাছে কমিটির সদস্যদের একটি প্রশ্ন ছিল- মুসলমানের সংজ্ঞা কী? যাদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁরা হলেন: জমিয়াতুল উলামায়ে পাকিস্তান-এর প্রেসিডেন্ট মাওলানা আবুল হাসানাত মুহম্মদ আহমদ কাদরি, একই সংগঠনের পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশের প্রেসিডেন্ট মাওলানা আহমদ আলী, জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান-এর আমির মাওলানা আবুল আলা মওদুদী, গাজী সিরাজউদ্দিন মুনির, লাহোরের জামিয়া আশরাফিয়া-এর মুফতি মুহাম্মদ ইদ্রিস, ইদারায়ে হাকুক-ই-তাহাফফুজ-ই-শিয়া-এর হাফিজ কিফায়াত হুসেইন, জমিয়াতুল উলেমায়ে পাকিস্তানের মাওলানা আব্দুল হামিদ বাদায়ুনি, দারুস সাহাবিয়া শিয়ালকোট-এর মাওলানা মুহাম্মদ আলী কান্দালাভ ও মাওলানা আমিন আহসান ইসলাহি। তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলমানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। কমিটি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করে, তাঁদের কারও সঙ্গে কারও সংজ্ঞার মিল নেই। কমিটির মন্তব্য হলো, ‘যদি ন্যূনতম দুজন আলেম একমত না হন, তাহলে কমিটি এ বিষয়ে মন্তব্য করবে না, আর যদি যেকোনো একজনের সংজ্ঞা আমরা গ্রহণ করি, তাহলে আমরা মুসলমান হিসেবে তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হব, কিন্তু অন্যরা তাঁদের সংজ্ঞা অনুযায়ী আমাদেরকে কাফের বলবে।’

(সূত্র: জামায়াতে ইসলামী – উত্থান বিপর্যয় পুনরুত্থান – মহিউদ্দিন আহমদ)

এবার বলেন, অখণ্ড পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরাই মুসলমানের সংজ্ঞায় একমত হতে পারে নাই সেখানে পালনবাদ মত একটা মতবাদ সামনে আনা হয়েছে যা থিওরিটিক্যালি ডেভেলপ হয়নি! এরপরেও এখন পর্যন্ত যা আছে সেটারও ৩টা ধারা! বঙ্গোপসাগর উত্তরের মানুষগুলো কোনটা ছেড়ে কোনটা ধরবে?

রাজনৈতিক দল নয়, সমিতি

মওলানা ভাসানী যে সমাজ এবং রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন, তা ‘পালনবাদ’ কিংবা ‘সমাজতন্ত্র’—নানান নামেই ব্যাখ্যা করা যায়।

রাজনৈতিক নেতা হিসেবে মওলানা ভাসানী সাধারণত তার কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে পালনবাদের গুরুত্ব তুলে ধরতেন। তিনি প্রায়ই ‘ইসলামী সমাজতন্ত্র’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করতেন। পীর হিসেবে তিনি তার মুরিদদের উৎসাহ দিতেন সুফিবাদের বিভিন্ন তরিকার অনুশীলনের পাশাপাশি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে।

পালনবাদ নিয়ে মওলানা ভাসানী কোন থিওরি আকারে কোন বই লিখে যান নাই। পালনবাদ সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা পাওয়া যায় তার ৩টা ভাষণ থেকে: পালনবাদ: কী ও কেন? (১৯ জানুয়ারি ১৯৭০ চাবুক, মওলানা ভাসানী সংখ্যা), রবুবিয়তের ভূমিকা (প্রকাশ: সন্তোষ, মে ১৯৭৪) এবং শেষ অভিভাষণ: খোদা-ই-খিদমতগার (সন্তোষ, ১৩ নভেম্বর, ১৯৭৬)

বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক টাইমলাইন ভালো করে খেয়াল করে দেখুন, তিনি স্বরাজ্য পার্টি, পূর্ব পাকিস্তান কৃষক পার্টি এবং মুসলিম লীগের রাজনীতি করেছেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এবং ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’ (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। যিনি পাকিস্তান সৃষ্টি ও বাংলাদেশে মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট তথা বামধারার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তার অনুসারীরা অনেকে এজন্য তাকে “লাল মওলানা” নামেও ডাকতেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে মজলুম জননেতার গড়া সংগঠনের নাম কি? ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি’ (১৯৭৪-এর ৮ এপ্রিল গঠন করেন)। নামটা খেয়াল করে দেখুন শেষে ‘সমিতি’; ‘পার্টি’ ‘দল’ বা ‘লিগ’ জাতীয় কোন শব্দ নেই! রাজনীতির মাওলানা এটা বুঝতেন, পালনবাদ দিয়ে আর যাই হোক, না রাষ্ট্র, না রাজনৈতিক দল, কোনটাই চালবে না।

বদরুদ্দীন উমর বুঝলো না, মাহফুজ বুঝে নিলো!

পালনবাদের মূল তাত্ত্বিক আজাদ সোবহানীর পরে আবুল হাশিম গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিকের ভূমিকা পালন করেছেন। এবার একটু তার সম্পর্কে বলি, তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের অভিজাত জমিদার পরিবারে সন্তান। তাঁর পিতা প্রখ্যাত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতা আবুল কাসেম। ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগের সাফল্য প্রধানত হাশিমের গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ-এর সাধারণ সম্পাদক হাশিম ছিলেন ১৯৪৭ সালের ‘অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা’ পরিকল্পনার অন্যতম রূপকার। তবে তাঁর এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। ভারত বিভাগের পর আবুল হাশিম পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক আইনসভার বিরোধীদলের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে তিনি পূর্ববঙ্গে চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক দলগুলির মতাদর্শের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে ‘খিলাফত-ই-রববানী পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ইসলামী আদর্শ বাস্তবে রূপায়িত করাই ছিল এ দলের উদ্দেশ্য। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ দলের সভাপতি ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত এ শতকের চলি­শের দশকের শেষের দিক থেকে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে এবং পঞ্চাশের দশকে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন। পালনবাদের আগ্রহীরা তাঁর রব্বানীর দৃষ্টিতে (আবুজর গিফারী সোসাইটির পক্ষে অধ্যাপক শাহেদ আলী, ১৯৭০। সংকলিত নিবন্ধসমূহ) পড়তে পারেন।

এবার আসি কোর পয়েন্টে। তিনি বাংলাদেশের খ্যাতনামা বামপন্থি বুদ্ধিজীবী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের পিতা। পালনবাদের গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিকের সন্তান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) (উমর) নেতা। আমারা এদেশে কী দেখে এসেছি? বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিববাদ’ বা জিয়ার ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর বর্তমান নেতৃত্ব কে দিচ্ছে? কার দিচ্ছে?

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি এই তিন বিষয়ে অনার্স করে আসা বদরুদ্দীন উমর পালনবাদ বুঝলো না, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়া ‘মাস্টারমাইন্ড’ মাহফুজ আলম (মাহফুজ আবদুল্লাহ) বুঝে নিলো!

লক্ষ্য কী?
গেল ১০০ দিনেই নিশ্চয় ধরতে পেরেছেন বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি এবং গোষ্টি কতটা আন্তরিক এবং সৎ। কী তাদের লক্ষ্য? কী করতে চায় তারা?

এদের লক্ষ্য যেনতেন-ভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা। এর জন্য যতভাবে সম্ভব জাতিতে বিভ্রান্ত করা। কখন বৈষম্যবিরোধী বলে, কখনো মেধার নামে, কখনো ধর্মের নামে, কখনো বা মতবাদের নামে। এদের ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ বলেন কিংবা ‘পালনবাদ’ আমজনতার জন্য স্রেফ বয়ানে আর পোস্টারে গোঁজামিল দিয়ে অন্তঃসারশূন্য ‘মাকাল ফল’।

এখন দেখেন আপনারা যা ভালো বুঝেন।

#ATeam 20241190

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *