ইসকন: ধর্মীয় আন্দোলন নাকি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু

সম্প্রতি সময়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই আলোচিত হয়ে উঠেছে ইসকন নামের সংগঠনটি। ইসকন আসলে কী? এটি কি আলাদা ধর্ম নাকি একটি মতবাদ? এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা কৌতূহল রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইসকনের ফ্যান না। আমার মনে হয়, এই দ্বাবিংশ শতাব্দীতে শুধুমাত্র ধর্মের নামে লাখো কোটি তরুণের তারুণ্যের অপচয় করছে এই প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র স্বর্গ লাভের আশায় তারা পৃথিবীর আর কিছুই উপভোগ করছে না, পৃথিবীর কোনো কাজে লাগছে না। এটি জীবনের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁদের যাপিত জীবন ও ছুৎমার্গ আমার পছন্দ নয়।

ইসকন আদতে কোনো ধর্ম নয়। এটি সনাতন ধর্মের একমাত্র প্রতিনিধি না হলেও একটি মতবাদ বা মুভমেন্ট। ইসকন মূলত বৈষ্ণব ধর্ম বা দর্শনের অনুসারী। বৈষ্ণব ধর্মের মূল কথা হল আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন, যা কেবল প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে সম্ভব এবং যেখানে সম্পূর্ণরূপে অহিংসার অনুশীলন প্রয়োজন।

কিন্তু, হঠাৎ করেই ইসকনকে “জঙ্গি সংগঠন,” ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ইত্যাদি নানা অভিযোগে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি উঠছে। কেন এই অভিযোগ?

মূল কারণ সনাতন মঞ্চের নামে একটি সংগঠন ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এই আট দফার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসকনকেই নিষিদ্ধ করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ।

ইসকনের বিরুদ্ধে “অপরাধ” হিসেবে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে, সেগুলো আসলে অপরাধ নয়। বরং, তারা তরুণ সমাজের মাঝে ধর্মীয় চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে, দখল হওয়া সম্পত্তি আইনি প্রক্রিয়ায় পুনরুদ্ধার করেছে এবং অহিংস প্রতিবাদ শিখিয়েছে। কিন্তু, এই কর্মগুলোই তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তৈরির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশে যখন সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটে, তখন তার পেছনে ভূমি দখলের মতো স্বার্থান্বেষী কারণ লুকিয়ে থাকে। সরকার যদি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারত এবং প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করত, তাহলে এই ধরনের বিতর্ক তৈরি হতো না।

মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের পর এত বড় ধরণের অহিংস প্রতিবাদ বাংলাদেশে আর কখনো দেখা যায়নি। তবে অহিংস আন্দোলন করেও ইসকনকে কেন “জঙ্গি” হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে, তা ভাবনার বিষয়।

যেখানে প্রতিদিন লুট, ভাঙচুর এবং সহিংসতা ঘটছে, সেখানে ইসকনের মতো একটি সংগঠন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে মিসাইল বা গ্রেনেড ব্যবহার করার মতো “সন্ত্রাসী” অভিযোগ তোলা হচ্ছে, যা হাস্যকর। বাংলাদেশের মতো দেশে ভিন্ন ধর্মের মানুষজনের জন্য জানমালের নিরাপত্তা চাইতেও যেন সাহস লাগে।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এ বিষয়ে আরও সঠিক ও নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে। তা না হলে এই ধরণের বিতর্ক বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অস্তিত্বকে আরও সংকটের মুখে ফেলবে।

#ATeam 20241202

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *