অজ্ঞের চোখে বিজ্ঞের আলাপ

সাম্প্রতিক হট নিউজ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ৬টি ব্যাঙ্ককে দিয়েছে। এটি নিয়ে ফেসবুকে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য দেখতে পাচ্ছি। যখন ফেসবুক ছিলো না তখন বই-পত্রিকা পড়তাম। জানতাম তারা সব সত্য কথাই লিখেছে। এখন ফেসবুক থাকায় সত্যমিথ্যা সহজে ধরতে পারি না। এই যেমন ৩০শে জুলাই দেখলাম সবাই প্রফাইল পিক লাল করতেছে। আমিও করলাম। আগেও করেছি। একবার ওই যে অনেকগুলো রঙওয়ালা একটি পতাকা সবাই প্রফাইলে দিলো। নাম ছিলো রঙধনু। আমিও দিলাম। পরে শুনলাম ওটি সমকামিতার চিহ্ন। যাহোক, অন্যের কাজ কাম নিয়ে আমার উৎসাহ কম। যে যা হোক হইছে। আমার কি। লাল রঙটা পছন্দ। সবাই করতেছে তাই আমিও করেছি। এখন শুনি এটি জ*ঙ্গীদেরকে সমর্থন দেয়া, জামায়াতের আন্দোলনকে সমর্থন দেয়া। আমি তো অতো হিসাব করে কিছু করি নাই। তখন ফেসবুকে কেউ বলেও নাই প্রফাইল লাল করা মানে জামায়াতের সমর্থক বনে যাওয়া। আমি রাজনীতিহীন মানুষ। সবাই যা করে, দেখাদেখি তাই করি। জামায়াতেও এলার্জি নাই, জ*ঙ্গী কি জিনিস, জীবনেও দেখি নাই। শুনেছি তারা সিরিয়া আফগানিস্তানে থাকে, মাঝে মাঝে আমেরিকা-ইংল্যান্ডেও বো*মাটোমা মারে। তাই বলতে পারবো না, তারা ভালো নাকি খারাপ।

কথা বলছিলাম সাড়ে বাইশ হাজার কোটি টাকা ছাপানো নিয়া। অনেকের নেতিবাচক মন্তব্যের কারণ বুঝতেছি না। আমি ভাবছিলাম এটি তো ভালো বিষয়। লজ্জার মাথা খেয়ে বলি, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক যে নিজেরাই টাকা ছাপাতে পারে, আমি জানতাম না। ধারণা করতাম, আমেরিকাই টাকা ছাপিয়ে আমাদেরকে দেয়। এজন্য ডলারের দাম বাড়লে কমলে আমাদের অর্থনীতিও কমে বাড়ে। সুতরাং নিউজ দেখার সাথে সাথেই ইউনূস স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ২ রাকাত নফল নামাজ মানত করে ফেলেছি। উনি মাত্র ৬৬৬ কোটি টাকা করে মেরে দিলে কী হবে! আমাদেরকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা উপহার দিয়েছেন। সামনে লাগলে আরো দিবেন। সেই টাকা দিয়ে আমরা কোটি কোটি ডলার কিনে ফেলে আমেরিকাকেই ডলার শূন্য করে দিবো। অনেকদিন যাবত ফেসবুকে দেখে আসছি, ব্যাঙ্কে টাকা নেই। এর ভুক্তভোগী আমি নিজে। ২ মাস আগে সঞ্চয়ের টাকা থেকে ১ লাখ তুলতে গেলে ব্যাঙ্ক বলে আজ ২০ হাজার নিয়া যান। কালপরশু আবার খোঁজ নিয়েন। এখন ব্যাঙ্কে যেহেতু টাকা আছে, সেহেতু আমরাও টাকা তুলতে পারবো। অনেকে বলছে টাকা ছাপালে দ্রব্যমূল্য বাড়ে। দ্রব্যমূল্য কি টাকায় বাড়ে? দ্রব্যমূল্য বাড়ায় সিন্ডিকেট। আমাদের হাতে টাকা থাকলে বরং আমরা দাম বাড়লেও কিনে খেতে পারবো। তাছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কি খারাপ? দাম বাড়লে যারা দ্রব্য উৎপাদন করে, তারাও তো বেশি টাকা পাবে। আমার দেশের কৃষক শ্রমিক উপকৃত হবে। কেউ কেউ বলেন, কৃষক শ্রমিকের লবডঙ্কাই হবে। সব খাবে মধ্যস্বত্তভোগীরা। এটি কেন বলে আমি বুঝতে পারি নাই। ফেসবুকে বা ইউটিউবে কারো বক্তব্য থেকে বুঝতে পারলে আপনাদেরকেও জানাবো। আরেকটি বিষয় দেখলাম, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্যার এই বছরেরই ১৩ই জুলাই বলেছিলেন টাকা ছাপালে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়। কিন্তু সেই তিনিই এখন টাকা ছাপিয়ে অর্থনীতির ক্ষতি সামলাচ্ছেন। কেন কিভাবে সেটি বুঝতে পারি নাই। তবে ৪ মাসের ব্যবধানে অনেক কিছুই পালটে যায়। অর্থনীতির সূত্রও হয়তো পালটে গেছে। তাছাড়া স্বাধীন দেশের হিসাব আর পরাধীন দেশের হিসাব তো এক নয়।

আমরা কেন অহেতুক এতো হিসাবে যাই? অর্থনীতিবিদ ইউনূস স্যার যা ভালো মনে করেছেন, তা-ই করে যাচ্ছেন। তিনি মাত্র ৬৬৬ কোটি টাকা মেরে দিয়ে আমাদেরকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি দিয়েছেন। সন্তুষ্ট থাকি। বরং অন্যপ্রসঙ্গে যাই। চট্টগ্রামে আলিফ নামে একজন শিবির উকিলকে খুন করেছে। সেটি নিয়ে মিডিয়ায় অনেক হিট। একেকবার এক এক সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে হাজির হচ্ছেন সবাই। পুলিশ এক সিসিটিভি দেখে শুনলাম ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে, যার ৪ জন শিবির, ১ জন সমন্বয়ক। এভাবে শিবির-সমন্বয়ক আলাদা করে কেন বৈষম্য সৃষ্টি করছে ফেসবুক মিডিয়াগুলো বুঝতে পারি নাই। কিন্তু এর মধ্যে শুনলাম একই খুনের জন্য ৭ জন হিন্দুকেও গ্রেফতার করা হয়েছিলো। মজার ব্যাপার হলো, তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে খুনেরও আগে। অনেকে এটি নিয়ে সমালোচনা করছে। আমি তো খারাপ কিছু পেলাম না। কোটা আন্দোলনের সময় আমেরিকান দূতাবাস একবার ২ জন হত্যার জন্য সরকারকে দোষ দেয়। পরের দিন ঠিকই তারা খুন হয়। আগেভাগে দোষ দিলেও ঘটনা তো ঠিকই ঘটেছে। এই ৭ জন সনাতনী যে পরের দিন আলিফকে খুন করবে, সেটি বুঝতে পেরে পুলিশ যদি তাদেরকে আগের দিন গ্রেফতার করে কাজ এগিয়ে রাখে, তাতে তো হত্যারহস্য উম্মোচনে কাজে আসবে। হোয়াট’স দ্য প্রবলেম? এর মধ্যে আরেক সিসিটিভি দেখাচ্ছে, মেথর পট্টিতে আক্রমণ করতে গিয়া আলিফ ধোলাই খাইছে সনাতনীদের হাতে। তারপর পুরোটাই আবু সাঈদ কেস। তার শিবির বন্ধুবান্ধবরাই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে দিয়েছে। আমি কোনটা বিশ্বাস করবো বুঝতে পারছি না। সিসিটিভি দেখে তো আর হিন্দু-মুসলিম বুঝার উপায় নাই।

তবে এই ঘটনা ব্যাপক হিট হয়েছে অবশ্যই। অজ্ঞাতবাসে থাকা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বিশাল বিবৃতি দিয়েছেন ফেসবুকে দেখলাম। সত্যমিথ্যা জানি না। তবে আলিফ যেহেতু শিবির, তার জীবনের দাম অনেক। হিট অনেক। প্রধানমন্ত্রী আবার হিটের লোভ উপেক্ষা করতে পারেন না। ছাত্রলীগ মরলে হিট নাই। প্রথম আলোয় কাভারেজ নাই। প্রধানমন্ত্রীরও বিবৃতি নাই। সেই যে বুয়েটে শিবিরকর্মী আবরার খুন হলো। বাবা রে বাবা। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের যেসব পোলাপান ওইদিন হলে ছিলো না, তাদেরকেও মামলায় ঢুকিয়ে ফাঁসির ব্যবস্থা করলেন। সুতরাং শিবির আলিফের জন্য তিনি যে বিবৃতি দিবেন, এটি অবিশ্বাস করতেও পারছি না। অন্যদিকে কলেজ ভার্সেস কলেজ মারামারি-খুনাখুনি চলছে। কয়েকটা লাইভে দেখলাম। এক কলেজের ভেতর থেকে কিছুক্ষণ পরপর এক একজনকে চ্যাংদোলা করে বাইরে নিয়ে এসে রাস্তায় ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে। ফেসবুকে দেখলাম, এভাবে নাকি অন্তত ১০ জন খুন হয়েছে। তবে খুন হওয়ারা হয়তো শিবির করতো না। তাই মিডিয়ায় হিট হয় নি। সবাই নিশ্চুপ। প্রধানমন্ত্রীও।

এদিকে তীব্র ক্যাচাল লাগাইছে মুগ্ধ কেস। ফেসবুক ইউটিউবে যে যেভাবে পারে নিউজ ছড়াচ্ছে। কেউ বলে মুগ্ধ আর স্নিগ্ধ একই লোক। কেউ বলে মুগ্ধ আসলেই মারা গেছে। আর কেউ বলে, তারা লোক ২ জন। তবে মুগ্ধকে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। স্নিগ্ধ তার সাথে দেখা করে এসেছে। এদিকে আবার সবাই মুগ্ধর কবর দেখতে চায়। তার পানি খাওয়ানোর ভিডিও আছে। কিন্তু গুলি খাওয়া বা তার পরের ভিডিও নাই। লোকজন সে ভিডিও চায়। তার কবর জেয়ারত করতে কেউ যায় না, সে প্রশ্ন তোলে। একদম আবার মুগ্ধর কথিত ভাই স্নিগ্ধর হাসিমুখের সমালোচনা করে। আমি বলি কি, শোক কি মাসের পর মাস সবসময় থাকে নাকি? ভাই মারা যাওয়ার ৪ মাস পরেও কেউ কি হাসতে পারবে না? কেউ কি আর্ট-কালচারের দেশ ফ্রান্স, ইতালী ভ্রমণ করতে পারবে না? আমাদেরকে কেন সবকিছুই সন্দেহ করতে হবে?

আরেক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে স্ট্রেইট কাট দীপ্তি চৌধুরীকে নিয়া। বিচারপতি মানিক মুক্তিযুদ্ধ নিয়া লাফালাফি করতেন। তাকে মেটিকুলাস প্যাঁচ দিয়া দীপ্তি চৌধুরী বলেছেন, সে নিজেও মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের সন্তান। তখন আদালতে পুলিশ হেফাজতে বিচারপতি মানিকের অণ্ডকোষ লাত্থাইয়া গালাইয়া দেওয়ার ঘটনায়ও যারা হাততালি দিয়েছিলো, তাদেরও অনেকে এখন দীপ্তি চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের খবর জানতে চায়। এতো তীব্রভাবে জানতে চায়, যেটি হলুদ সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনও কোনোদিন পারেন নি। দীপ্তি চৌধুরী অবশ্য আবার মেটিকুলাস প্যাঁচ দিয়া ঘটনা অন্যখাতে ঘুরাইয়া বডি শেমিংয়ের দিকে নিয়া গেছে। এতো সুন্দরী একজন মহিলা কেন বডি শেমিংয়ের আড়ালে লুকাচ্ছেন, আমি বুঝতে পারি নি। তার এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শড়ির আঁচল মার্কা ছবি দেখে আমি প্রথমেই খোঁজ নিয়েছি তিনি অবিবাহিতা কি না। ইউ নো হোয়াই। একাধিক বিবাহ এখন আর দোষের কিছু নয় বরং সম্মানের। তার বডিতে শেমিংয়ের কী আছে তব্দা খেয়ে গেছি। যথারীতি ফ্যাক্ট ফাইন্ডাররা এগিয়ে এসেছেন দীপ্তি চৌধুরীকে রক্ষায়। তার বাবা শিবলী চৌধুরীর জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পরে। তার বাবার বাবা-মায়ের কোনো তথ্য বাজারে নেই। শিবলী চৌধুরীকে দত্তক নিয়েছিলেন এক ভদ্রমহিলা। সেই ভদ্রমহিলার ভাইকেই তিনি বাবা হিসেবে কাগজে কলমে লিখে থাকেন। অর্থাৎ কাগজে কলমে তিনি দীপ্তি চৌধুরীর দাদা। সেই দাদাও নিজে মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। মুক্তিযুদ্ধ করেছে সেই দাদার দুই চাচাতো ভাই। সেই চাচাতো ভাইয়েরা আবার আপন কাজিন নয়। দূর সম্পর্কের। সেই সম্পর্ক আবার কতোটা দূরের ফ্যাক্ট ফাইন্ডাররা সেটি খোলাসা করে বলেন নি। আমার ধারণা আরেকটু লতাপাতা ধরে টান দিলে দীপ্তি চৌধুরী যে আদতে শেখ মুজিবের বংশের লোক, সেটিও পাওয়া যেতে পারে। তবে আপাতত শেখ মুজিবের সাথে সম্পর্ক খুব লাভজনক কোন ভেঞ্চার নয়। আগামীতে কোনোদিন আবার নৌকা ক্ষমতার মসনদে বসতে পারলে দীপ্তি চৌধুরীর সেই পরিচয়টিও সামনে আসবে। আমার কথা হলো এভাবে হিসাব করলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমরা সবাই ভাইবোন। তবে দীপ্তি চৌধুরী আর আমি ভাইবোন নই।

এদিকে ফেসবুকে আরেকটি আশাব্যঞ্জক খবর দেখলাম। আমাদের সেনাবাহিনীকে ট্রেনিং দিতে আগে থেকে পাকিস্তান থেকে দক্ষ সেনাপ্রশিক্ষক আনা হতো। এবার প্রশিক্ষকের সাথে সাথে জাহাজ ভরে কাচামাল অর্থাৎ অস্ত্রও এসেছে, আবার শ’খানেক কমান্ডো যোদ্ধাও এসেছে। ফেসবুকে দেখলাম, কেউ কেউ এর সমালোচনা করছে। আমি বলি কি, সমালোচনার কী আছে? বরং তারা এখন ফুল প্যাকেজ সাপ্লাই দিচ্ছেন। ট্রেনিংয়ে সাথে সাথে অস্ত্রও দিচ্ছেন। অস্ত্রের সাথে সাথে অস্ত্র চালনায় দক্ষ কমান্ডোও দিচ্ছেন। আমাদের ছেলেরা তাদের কাছ থেকে হাতে-কলমে সবকিছু শিখতে পারবে।

বাঙালি ভালো কিছু হজম করতে পারে না। কারো ভালো দেখতে পারে না। ফেসবুক না থাকলে এতো গভীরভাবে জানতে পারতাম না। সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা উপহার দিয়েও আজ ড. ইউনূস স্যার ফেসবুক বাঙালির হৃদয় জয় করতে পারছেন না। এ জাতির সংস্কার করতে কেউ কি আর উৎসাহী হবে?

ইউনূস স্যার হয়তো হবেন না, তবে তারেক জিয়া অবশ্যই হবেন। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তিনি সহ সব আসামি খালাস পেয়েছেন। আমি আগেই জানতাম, জজ মিয়াই দোষী। তবে ইউনূস স্যার ৫ই আগস্ট রিসেট বাটন টিপে আগের সবকিছুই গায়েব করে দিয়েছেন। এই মামলা তো সেখানেই ইনভ্যালিড। গ্রেনেড হামলা নেভার হ্যাপেনড। সুতরাং তারেক জিয়া ফিরবেন, গণতন্ত্রও ফিরবে। এখন যেভাবে ১০০% দেশ-ভাঙচুর চলছে, সেখানে ১০% তারেক জিয়া অবশ্যই অপশন হিসেবে খারাপ না।

#ATeam 20241204

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *