পূর্ব পাকিস্তানের কসাই: লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ছিলো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একটি ঘৃণিত নাম, যার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে অপারেশন সার্চলাইট ও অন্যান্য বর্বর অভিযান পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করতে এবং ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ইতিহাসে কুখ্যাত এই নিয়াজী। তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সৃষ্ট নৃশংসতা তাকে “পূর্ব পাকিস্তানের কসাই” খেতাবে পরিচিত করে তোলে।

নিয়াজীর ভূমিকা এবং অপারেশন সার্চলাইট

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সরকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিকে দমন করার জন্য অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে। জেনারেল নিয়াজী ছিলো এর প্রধান স্থপতি, যার নির্দেশে ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশে বাঙালিদের নির্মমভাবে হ’ত্যা করা হয়। তার নির্দেশ ছিল স্পষ্ট: “Kill their men and rape their women to breed fear”।

এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল:
1. বুদ্ধিজীবীদের হ’ত্যা: জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, ও সংস্কৃতিজনদের হ’ত্যা।
2. নারী নির্যাতন: ব্যাপক ধর্ষণকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার। প্রায় ৪০০,০০০ নারী ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন।
3. বেসামরিক হ’ত্যা: এক কোটিরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় এবং ৩০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

নিয়াজীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা কেবল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদেরই নয়, সাধারণ নিরস্ত্র জনগণকেও নির্মমভাবে হ’ত্যা করে। বাঙালি নারীদের উপর পরিকল্পিত নির্যাতন বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কর্মকাণ্ডকে “জেনোসাইড” হিসেবে চিহ্নিত করে।

মার্কিন সাংবাদিক আর্চার কে ব্লাড তার “Blood Telegram”-এ উল্লেখ করেন:

“The genocide being carried out by the Pakistani military is one of the most shameful episodes in modern history.”

আত্মসমর্পণ ও লজ্জাজনক পরিণতি

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, মিত্রবাহিনী (ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনী) দ্বারা চারদিকে ঘেরাও হয়ে নিয়াজী ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সেনাসহ আত্মসমর্পণ করেন। এটি ছিল সামরিক ইতিহাসে এক বিশাল আত্মসমর্পণ। তার এই পরাজয়ের কারনে পাকিস্তানে তাকে “বাংলার শৃগাল” নামে আখ্যায়িত করা হয়। পাকিস্তান সরকার তার সমস্ত সামরিক পদক ও সম্মান প্রত্যাহার করে নেয়।

ইমরান খান ও নিয়াজী বংশের সম্পর্ক

জেনারেল নিয়াজীর সাথে ইমরান খানের দূরসম্পর্কিত আত্মীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও এটি তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে সরাসরি প্রভাবিত করে না, তবে এটি একটি ঐতিহাসিক পরিহাসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান পাকিস্তানের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের শিক্ষা

পাকিস্তান বর্তমানে নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংকটের মুখোমুখি। হত্যাকাণ্ড নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা! সৌদি আরব তাদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের ভিক্ষা না করার শর্ত দেয়, যা চরম দুর্দশার প্রতিফলন। বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকার পাকিস্তানের সাথে দুরভিসন্ধিমূলক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যাতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে ক্রমেই দেশটি পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ ও সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হতে চলেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশিদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব এবং অন্যান্য সুবিধা দিয়ে পাকিস্তান কি মানব শিকার ও যৌন পর্যটনের মাধ্যমে তাদের পুরনো “kill their men and rape their women” সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা পুনর্জাগরণ করছে? এই প্রশ্ন জাতীয় চেতনাকে সচেতন করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পাদটীকা:

1. অপারেশন সার্চলাইটের চিত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Operation_Searchlight
2. গণহত্যার তথ্য: http://bangladeshgenocidearchive.org/
3. Niazi planned rape of Bangalee women for ethnic cleansing
https://www.thedailystar.net/news-detail-242191

এই ইতিহাস পাকিস্তানের নির্মমতার একটি চিরস্থায়ী উদাহরণ এবং আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের এক গৌরবময় চিত্র। আমরা যেন ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক হই।

#ATeam 20241205

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *